শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কলকাতায় বেপরোয়া গাড়ি পিষে মারল ২ বাংলাদেশিকে

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:৩৮

ভারতের কলকাতায় বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে লাউডন স্ট্রিট ও শেকসপিয়র সরণির সংযোগস্থলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সে সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই পথচারীকে পিষে ফেলে একটি জাগুয়ার গাড়ি। পুলিশ নিহতদের পরিচয় জানিয়েছে। এরা হলেন, কাজি মুহাম্মদ মইনুল আলম (৩৬) এবং ফারহানা ইসলাম তানিয়া (৩০)। তারা দুইজনেই বাংলাদেশি নাগরিক।

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ২টার দিকে বিড়লা তারাম-ল থেকে শেকসপিয়র সরণি ধরে প্রচ- গতিতে যাচ্ছিল জাগুয়ার গাড়িটি। সে সময় লাউডন স্ট্রিট দিয়ে যাচ্ছিল একটি মার্সিডিজ। শেকসপিয়র সরণির সংযোগস্থলে মার্সিডিজ গাড়িটির মাঝখানে সজোরে ধাক্কা মারে জাগুয়ারটি। এতে রাস্তার পাশে থাকা দুই পথচারী নিহত হন।

সূত্র জানায়, প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল বলে রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মইনুল আলম এবং তানিয়াসহ তিন পথচারী। জাগুয়ারের গতি এত বেশি ছিল যে, মার্সিডিজটিকে ধাক্কা মারার পর সেটা দাঁড়িয়ে থাকা দু’জনকে পিষে ফেলে। কোনোক্রমে বেঁচে যান তাদের সঙ্গে থাকা অন্য ব্যক্তি জিয়াদ। ঘটনার পরই গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায় জাগুয়ারের চালক।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা মইনুল আলম ও তানিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।

চালক আরসালান পারভেজ

এদিকে মাঝরাতে কলকাতার শেকসপিয়র সরণি দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়া জাগুয়ারের চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ আগেই জানতে পেরেছিল, ওই গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন কলকাতার একটি নামি রেস্তোরাঁ চেনের নামে। পরে জানা যায়, ঘাতক ওই জাগুয়ারটি সেই সময় চালাচ্ছিলেন ওই রেস্তোরাঁ চেনের মালিকের ছেলে আরসালান পারভেজ। এর পরেই বছর বাইশের আরসালানকে গ্রেপ্তার করে শেকসপিয়র থানার পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত আরসালান পারভেজকে শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। এই গাড়ি দুর্ঘটনায় পুলিশ জাগুয়ারের চালকের বিরুদ্ধে আগের থেকে অপেক্ষাকৃত কঠোর ধারায় মামলা দায়ের করেছে। প্রথমে ৩০৪এ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছিল। সেটা অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা হলেও জামিনযোগ্য ছিল। কিন্তু পারভেজকে গ্রেপ্তারের পর ৩০৪ (পার্ট ওও) ধারায় মামলা করে। এটি জামিনঅযোগ্য ধারা। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন বিচারকের কাছে আরসালানকে নিজেদের হেফাজতে নেয়ার আবেদন জানানো হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, ধৃত সেই সময় কোথা থেকে আসছিলেন, অত জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন কেন, কী ভাবেই বা দুর্ঘটনা ঘটলÑএসব যেমন জানার, তেমনই গাড়িচালক মাতাল ছিলেন কি না সেটাও জানা প্রয়োজন। ঘটনার এত ঘণ্টা পরে মেডিকেল পরীক্ষায় সেটা ধরা পড়বে না। তাই পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ পেতেই ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে পেতে চাইছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরসালান পারভেজরা দুই ভাই। দুজনেই বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল। ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত পারভেজ এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস ম্যানেজমেন্টের পাঠ নিয়েছেন। আখতার তার সংস্থার সবচেয়ে পুরানো আউটলেট অর্থাৎ পার্ক সার্কাস মোড়ের ‘আরসালান’ এক মালিকানা তাকেই দিয়েছেন। বেকবাগানের কাছে পারভেজ আখতারদের পারিবারিক বাড়ি। তবে আরসালান পারভেজ ওই বাড়িতে থাকতেন না। সায়েন্স সিটির সামনে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন তিনি। যদিও ওই রাতে তিনি যে জাগুয়ারটি চালাচ্ছিলেন, সেটি রাখা থাকত বেকবাগানের বাড়িতে।

এ বিষয়ে আরসালান রেস্তোরাঁর মালিকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু জানিয়েছেন, পুলিশের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে।

ফেরা হলো না দুই বন্ধুর

চোখের সমস্যা নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন মহম্মদ মইনুল আলম। সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু ফারহানা ইসলাম তানিয়া এবং চাচাতো ভাই জিয়াদ। মাঝে মধ্যেই কলকাতায় যেতেন মইনুল। কিন্তু, এবার আর দেশে ফেরা হলো না। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন জিয়াদ।

ভাইয়ের এমনভাবে মৃত্যু হয়েছে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না মইনুলের বড় ভাই কাজি মহম্মদ সাইফুল আলম। শনিবার বিকালে যখন তাকে ফোন করা হয়, তিনি তখন যশোরের বিমান ধরছেন। কান্না জড়ানো গলায় বললেন, ‘ভাবতেই পারছি না এমনটা হয়েছে। পরশু রাতেই কথা হয়েছিল। আমি ঝিনাইদহে যাচ্ছি বাবা-মায়ের কাছে। ওরা তো এখনো কিছু জানেনই না।’ সাইফুল জানান, তানিয়া তার ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন। জিয়াদ এবং তানিয়াকে নিয়ে মইনুল গত ১৪ তারিখ ভারতে যান। উঠেছিলেন মির্জা গালিব স্ট্রিটের একটি হোটেলে।

মইনুল যশোরের ঝিনাইদহের বাসিন্দা। তবে গ্রামীণফোনে কাজ করার সূত্রে তিনি ঢাকায় থাকতেন। ম্যানেজার পদে কর্মরত মইনুলের স্ত্রী এবং চার বছরের ছেলেও তার সঙ্গে থাকতেন। বন্ধু তানিয়া ঢাকায় সিটি ব্যাংকের কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন সাইফুল। ১৫ অগস্ট রাতে মইনুলের সঙ্গে শেষ কথা হয় সাইফুলের। তিনি বলেন, ‘কলকাতায় বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চোখ দেখাতে গিয়েছিল এর আগে। এ বারের যাওয়া ছিল রুটিন চেকআপের জন্য। তানিয়া-জিয়াদও ওর সঙ্গে গিয়েছিল।’

পুলিশ সূত্রে খবর, রাতে অন্য এক হোটেলে খাওয়াদাওয়ার পর তিনজন ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন। ফিরছিলেন মির্জা গালিব স্ট্রিটের হোটেলে। হঠাৎ দ্রুতগতিতে আসা এটি গাড়ি এসে ধাক্কা মারে তাদের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মইনুল এবং তানিয়ার। বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনারের কার্যালয়সূত্রে খবর, অফিসিয়াল সমস্ত বিষয় মিটে গিয়েছে। রোববার সকালেই পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হবে মইনুল-তানিয়ার মরদেহ।

সাইফুল এ দিন বলেন, ‘সকালে ভাইয়ের দেহ বেনাপোল থেকে নিয়ে সোজা ঝিনাইদহে নেয়া হবে। সেখানেই হবে শেষকৃত্য।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে