বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এমপিও নীতিমালায় অসংগতি!

স্নাতক স্তরে পরীক্ষার্থী ও পাসের সংখ্যা নির্ধারণ হয়নি আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি ভুক্তভোগীদের
নূর মোহাম্মদ
  ২২ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি নীতিমালায় বড় ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে। এতে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রেডিং করার ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এমপিওভুক্তি নির্ধারণের জন্য ১০০ নম্বরের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রেডিং করার নিয়ম থাকলেও স্নাতক পর্যায়ে গ্রেডিং হয়েছে ৫০ নম্বরে।

এদিকে গ্রেডিং পদ্ধতির এ অসঙ্গতির কারণে স্নাতক পর্যায়ের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি ওইসব প্রতিষ্ঠান গ্রেডিং পদ্ধতির অসঙ্গতি দূর করার জন্য আবেদন করেছে। পাশাপাশি স্নাতক পর্যায়ে আবার গ্রেডিং করার দাবি জানিয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সারাদেশে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেয়া হয়। আবেদন করার প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানের বয়স ২৫, শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ এবং পাসের হারে ২৫ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরের গ্রেডিং করা হয়।

তবে এই চার ক্যাটাগরির মধ্যে শেষ দুটি ক্যাটাগরিতে অসঙ্গতি রয়েছে। কেননা সেখানে পরীক্ষার্থী ও পাসের হার ক্যাটাগরিতে স্নাতক পর্যায়ে কত শিক্ষার্থী থাকতে হবে তা বলা হয়নি। এতে কত শিক্ষার্থী পাস করলে ওই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আদৌ স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষার্থী ও পাসের হার গ্রেডিং হয়েছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এসব অসঙ্গতির কথা তুলে ধরে বলেন, এমপিও নীতিমালার পরিশিষ্ট 'খ' এ একাদশ-দ্বাদশ এ দুই শ্রেণিতে মফস্বলে ১৫০ জন এবং স্নাতক পর্যায়ে তিনটি শ্রেণিতে ৫০ জন নূ্যনতম শিক্ষার্থী নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পরিশিষ্ট 'গ' অনুচ্ছেদে ১৩শ' থেকে ১৫শ' এই ৩টি শ্রেণিতে কতজন পরীক্ষার্থী থাকবে তা আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। নির্ধারণ করা হয়েছে ১১শ' থেকে ১৫শ' পর্যন্ত মোট ৪০ পরীক্ষার্থী থাকলেই হবে। এই ৪০ জন কোন স্তরের পরীক্ষার্থী তাও নির্ধারণ হয়নি। ফলে গ্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষার্থী ও পাসের মূল্যায়ন কীভাবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়? কারণ যারা শুধু স্নাতক পর্যায়ে এমপিও চায়, তাদের পরীক্ষার্থী সংখ্যা কীভাবে মূল্যায়ন হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত হয়েছেন তারা শুধু স্নাতক পর্যায়ে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু স্নাতক পর্যায়ে পরীক্ষার্থী ও পাস করা কত পরীক্ষার্থী থাকতে হবে তা উলেস্নখ না থাকায় এ স্তরের প্রতিষ্ঠানের ১০০ নম্বরের মধ্যে ৫০ নম্বরের গ্রেডিং হয়েছে বলে মনে করেন তারা। কারণ পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে অটোমেশন বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে। সেখানে স্নাতক পর্যায়ে পরীক্ষার্থী ও পাসের সংখ্যা না থাকায় তারা গ্রেডিং থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও এমপিও বাছাই কমিটির প্রধান জাবেদ আহমেদ বলেন, স্নাতক পর্যায়ে আলাদা কোনো জনবল কাঠামো না থাকায় শিক্ষার্থীর মতো পরীক্ষার্থীর ক্যাটাগরিতে স্নাতকের জন্য আলাদা পরীক্ষার্থী নির্ধারণ করা যায়নি। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান শুধু স্নাতক পর্যায়ে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করছেন, তারা কেবল স্নাতকের শিক্ষার্থীর সংখ্যাটাই দিয়েছেন বলে আমি জানি এবং সে আলোকেই গ্রেডিং করা হয়েছে। এতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলেও দাবি করেন তিনি। তবে নীতিমালায় কিছু টাইপিং ভুল এবং অসঙ্গতি আছে সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে বলে স্বীকার করেন।

নীতিমালায় কাম্য শিক্ষার্থীর ক্যাটাগরিতে পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। নিম্ন মাধ্যমিক ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম (শহরে ২০০, মফস্বলে ১৫০), মাধ্যমিক ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম (শহরে ৩০০, মফস্বলে ২০০), উচ্চ মাধ্যমিক ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ (শহরে ৪৫০ মফস্বলে ৩২০) কলেজ পর্যায়ে উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ-দ্বাদশ পর্যায়ে শহরে ২০০, মফস্বলে ১৫০। আর স্নাতক (পাস) পর্যায়ে ২৫০ (একাদশ-দ্বাদশে ২০০, স্নাতকে ৫০ জন)। কিন্তু পরীক্ষার ফল ক্যাটাগরিতে স্নাতক পর্যায়ে কত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে তা উলেস্নখ করা হয়নি। স্নাতক ক্যাটাগরিতে একাদশ-দ্বাদশ ও স্নাতক পর্যায়ে মোট ৫টি শ্রেণির পরীক্ষার্থী একসঙ্গে শহরে ৬০ জন এবং মফস্বলে ৪০ জন চাওয়া হয়েছে।

বাছাই কমিটির অন্য এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নীতিমালার অসঙ্গতির এ বিষয়টি আমরা জানি। অনেকেই অভিযোগও করেছেন। কিন্তু এ মুহূর্তে তা সংশোধন করতে গেলে ব্যাপক হইচই হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আপাতত এটি চাপা দিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালে এমপিও নীতিমালায় প্রচুর অসঙ্গতি ও ভুল রয়েছে। এগুলো সংশোধন করার কাজ করছি। বেশ কয়েকটি ধারা আমরা সংশোধন করে অলিখিতভাবে বাস্তবায়ন করছি। কারণ পুরো নীতিমালাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন, অর্থ মন্ত্রণালয় হয়ে আসতে অনেক সময় লেগে যাবে।

জানা গেছে, এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে গ্রেডিং করা হয়েছে। সেখানে চারটি ক্যাটাগরিতে ১০০ নম্বরের গ্রেডিংয়ের ওপর ভিত্তি করে ১৭৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য বিবেচনায় নিয়ে একটি ফিটলিস্ট তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়।

নীতিমালায় বলা হয়, একাডেমিক স্বীকৃতি ২৫ নম্বর। সেখানে বলা হয়েছে (প্রতি দুই বছরের জন্য পাঁচ নম্বর, অর্থাৎ ১০ বা তার চেয়ে বেশি বয়স এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫ নম্বর)। শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর। এরপর ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে পাঁচ নম্বর)। পরীক্ষার্থীর সংখ্যার জন্য ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার ক্ষেত্রে ১৫ ও পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য পাঁচ নম্বর)। পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য ২৫ নম্বরের (কাম্য হার অর্জনে ১৫ নম্বর ও পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশ পাসে ৫ নম্বর) গ্রেডিং করা হবে।

এমপিওভুক্তির যাচাই-বাছাই ও আবেদন গ্রহণের জন্য আলাদা দুটি কমিটি করে দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ৯ সদস্যের 'প্রতিষ্ঠান বাছাই কমিটি'। অন্যদিকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণের জন্য ব্যানবেইসের মহাপরিচালক মো. ফসিউলস্নাহর নেতৃত্বে গঠন করা হয় আট সদস্যের কারিগরি কমিটি। এ কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ সিস্টেম অ্যানালিস্ট, প্রোগ্রামারসহ বিশেষজ্ঞদের কমিটির সদস্য করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63406 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1