জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিতে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলকে 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলে অবস্থান স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশ।
ঢাকা সফর শেষে বুধবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ফিরে যাওয়ার ঠিক পরেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে প্রথম সরকারি অবস্থান জানাল।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'ভারত সরকার কর্তৃক সংবিধানের ৩৭০ বাতিল ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বাংলাদেশ মনে করে।'
'আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া সব দেশের জন্য অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে মূলনীতির কথা বাংলাদেশ বরাবরই বলে আসছে।'
ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা নিশ্চিত করা ছিল। এর আওতায় এতোদিন এই রাজ্যের নিজস্ব আইন চালুর ক্ষমতা ছিল। পাশাপাশি রাজ্যের বাইরের মানুষদের সম্পত্তি কেনা ও বিয়ের সুযোগ বন্ধ ছিল। ৫ অগাস্ট সরকারি সিদ্ধান্তে সংবিধানের এ অনুচ্ছেদ রদ করা হয়।
ওইদিন থেকে কাশ্মীরের টেলিফোন লাইন, ইন্টারনেট ও টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে রেখেছে দিলিস্ন এবং লোকজনের অবাধ চলাচল ও জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।
পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান
এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও যান চলাচল বন্ধ করার পাশাপাশি কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
পাকিস্তানের ডাকে ভারতের সিদ্ধান্ত নিয়ে বুধবার বৈঠকে বসার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে বিধিনিষেধ আরোপের খবরে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন মহাসচিব।
এ ঘটনায় এর আগে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছিলেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
সোমবার রাতে বাংলাদেশ সফরে ঢাকায় নামার পর দ্বিপক্ষীয় অনেক বিষয় নিয়ে কথা বললেও জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি জয়শঙ্কর।
ঢাকা ছাড়লেন জয়শঙ্কর
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বাংলাদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে গেছেন এস জয়শঙ্কর।
বুধবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাকে বিদায় জানান।
এর আগে তিনি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফরের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন।
গত ৩১ মে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর এটা প্রথম সৌজন্য সফর হলেও সোমবার রাতে ঢাকায় নেমেই জয়শঙ্কর বলেছিলেন, 'দুই দেশের সম্পর্ককে উচ্চতর পর্যায়ে নিতে' অমীমাংসিত সব বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন।
ঢাকা ছাড়ার আগে মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। তারপর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর অমীমাংসিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, আসামে নাগরিকপঞ্জি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।