শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চাকসু-জকসু আটকা ভিসি ও সমাবর্তনে: শাকসুর খবর নেই

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় আটকে আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। অন্যদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এই মুহূর্তে কেবল তাদের সমাবর্তনের বিষয়টিই মাথায় রেখেছে। আর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচনের দাবি জোরালো হলেও কোনো সদুত্তর আসেনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনগুলোর জোরালো দাবি থাকলেও শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের সবচেয়ে বড় পস্ন্যাটফর্ম ছাত্রসংসদ। চবি ও জবিতে কবে নাগাদ এ দুই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে তার উত্তর মিলছে না কারো কাছেই।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচনের চূড়ান্ত কাজ শুরু হলে প্রার্থী মনোনয়নসহ বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে।

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পর সিনেটে সাধারণ ছাত্রদের প্রতিনিধি রাখতে চায় না প্রশাসন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনের জন্য আগ্রহী নয়। ৭৩-এর অধ্যাদেশের বাইরে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আইন নেই। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন সংশোধন করে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মনোভাব দেখানোর সুযোগ দেয়া উচিত।

জানা গেছে, চাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের নীতিমালা পর্যালোচনা কমিটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার চাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না।

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী মার্চে চাকসু নির্বাচন দেয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। চাকসুর গঠনতন্ত্র পুরাতন হওয়ায় অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করে চাকসুর নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি কমিটিও গঠন করে দেন ড. ইফতেখার।

পাঁচ সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সফিউল আলমকে। আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আমীর মুহাম্মদ নসরুলস্নাহ ও সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্রকে সদস্য এবং সদস্য সচিব করা হয় ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নির্বাচন ও বিধি-বিধান) মোহাম্মদ ইউসুফকে।

এরই মধ্যে কমিটি দেশের সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রসংসদ কেন্দ্রিক নীতিমালা সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেছে। এ লক্ষ্যে পাঁচ দফা বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু নিয়মিত উপাচার্য না পাওয়ায় তারা প্রতিবেদন জমা দিতে পারছেন না এবং চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় থেমে আছে নির্বাচনী কার্যক্রম।

নির্বাচন পর্যালোচনা কমিটির সদস্য অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান বলেন, ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র সংসদের কাঠামো সংগ্রহ করে আমরা পাঁচ দফা বৈঠক করেছি। কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রশাসন থেকে সবুজ সংকেত পেলে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।

এদিকে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের স্বদিচ্ছা কখনই ছিল না। নির্বাচনের ঘোষণা ও নীতিমালা পর্যালোচনা কমিটি গঠন ছিল লোক দেখানো। পূর্ণ উপাচার্য হিসেবে যিনি আসবেন তাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে চাকসু নির্বাচন দিতে হবে।

ছাত্রলীগের চবি শাখার সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, বহুদিন পর চাকসু নির্বাচন দেয়ার সিদ্ধান্তে আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে সেই কার্যক্রম আবারও থেমে গেছে। নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় আমাদের দাবির লক্ষ্যে আন্দোলনে যেতে পারছি না। তবে নতুন উপাচার্য কেউ নিয়োগ পেলে প্রথম দাবিই থাকবে নির্বাচন।

চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার বলেন, আমাকে পূর্ণ উপাচার্যের দায়িত্ব দিলে স্বল্প সময়ের মধ্যে চাকসু নির্বাচন দেয়া হবে।

জবি শিক্ষার্থী দীপু রায়হান জানিয়েছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা জকসু নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে গত ১ জুলাই উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন। এই দাবিতে ৪ জুলাই পুরো ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন তারা। এ সময় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভও হয়। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসু নির্বাচনের বিধিমালা বা নিয়ম না থাকায় তা দ্রম্নত সংশোধন করে নির্বাচনের দাবিতে অটল থাকেন তারা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাসকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি জকসু নির্বাচনের বিধিমালা ও আইন পরিবর্তন-পরিমার্জন নিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কাজ করছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান, প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী।

কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস বলেন, আমরা অনেকটাইও কাজ শেষ করে ফেলেছি। খসড়া নীতিমালা তৈরি হয়ে গেছে। এখন সেটা কাটিংয়ের কাজ চলছে। নির্বাচন করতে আমাদের বেশ কিছু ক্রাইটেরিয়া দেয়া হয়েছিল সে অনুযায়ী কাজ করছি। আশা করছি ক্যাম্পাস খোলার পর প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। এছাড়া জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংসদে কোনো আইন পাস করতে হবে না বলেও জানান তিনি।

আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মো. রাইসুল ইসলাম নয়ন বলেন, ঢাবির পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও (জাবি) ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা মনে করি ঢাবি-জাবির থেকে জবিতে এই নির্বাচন বেশি জরুরি, কারণ জবির শিক্ষার্থীরা নানান সমস্যায় জর্জরিত। তাই অতিদ্রম্নত জকসু নির্বাচন এখন সময়ে দাবি।

উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, আগামী জানুয়ারিতে জবির প্রথম সমাবর্তনের কাজের ব্যস্ততা না কাটা পর্যন্ত জকসু নির্বাচনের দিকে আগানো যাচ্ছে না। সমাবর্তনের পরপরই জকসু নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অচল শাবিপ্রবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। নির্বাচন করে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করে আবারও তা সচলের জোর দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্র সংগঠনগুলোর।

শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে ১৯৯৩ সালে গঠিত হয় শাকসু। শাকসু প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচবার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন ছিল ১৯৯৭ সালের ২৫ আগস্ট। এরপর দীর্ঘ ২২ বছর থেকে নির্বাচন বন্ধ রয়েছে।

দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের কোনো পস্ন্যাটফর্ম না থাকায় তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি নাযিরুল আযম বলেন, সব সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করে শাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হোক। ছাত্রদের অধিকার আদায় ও ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শাকসুর বিকল্প নেই।

ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, শাবিপ্রবি ছাত্রলীগ সবসময় নির্বাচন চায়। প্রশাসন যদি নির্বাচনের আয়োজন করে, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কাজ করব।

শাকুসর বর্তমান অবস্থা ও আগামীর পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

১৯৯৭ সালের পর থেকে ২২ বছর শাকসু অকার্যকর থাকলেও এই সময়ের মধ্যে আট দফা ইউনিয়ন ফি বৃদ্ধি করেছে প্রশাসন। ২০০০ সালের আগে ফি ছিল ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা; সর্বশেষ ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদের জন্য ফি বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়।

আট দফা ফি বাড়িয়ে তা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে- জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, ছাত্রদের বিভিন্ন প্রয়োজনে বা অনুষ্ঠানে ছাত্রদের মাধ্যমেই এই টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63567 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1