মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
চূড়ান্ত হচ্ছে নীতিমালা

স্কুল-কলেজে ফেসবুক নিষিদ্ধ!

নূর মোহাম্মদ
  ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

শিক্ষার্থীদের শারীরিক আঘাত বা মানসিক বিপর্যস্ত করা, অশালীন বা অসৌজন্যমূলক আচরণ অর্থাৎ স্কুল বুলিং থেকে সুরক্ষা দিতে একটি নীতিমালা করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় স্কুলে ফেসবুক ব্যবহার, আইসিটি ডিভাইস বহন, ছবি তোলা, ভিডিও করা এবং রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থী নীতিমালা ভঙ্গ করে এসব ব্যবহার করলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে নীতিমালায়। স্কুল বুলিং প্রতিরোধে, পরিবার, সমাজ এবং স্কুল কী করবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশে প্রায় দুই বছর পর নীতিমালাটি চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। আজ শনিবার ব্যানবেইসে সারাদেশে শতাধিক শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক, অভিভাবকদের নিয়ে একটি কর্মশালার মাধ্যমে 'স্কুল বুলিং নীতিমালা-২০১৯' চূড়ান্ত করা হচ্ছে। নীতিমালায় বুলিং প্রতিরোধের উপায় হিসেবে পারিবারিক শিক্ষা, অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) জাবেদ আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত। শনিবার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের নিয়ে একটি কর্মশালার পর এটি চূড়ান্ত করার পর প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। আদালতের নির্দেশে নীতিমালায় এটি করা হয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয় নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ শেখানোর দিকে বেশি নজর দিতে হবে। নীতিমালায় বুলিংয়ের ব্যাপারে কঠোর নীতি অবলম্বন করাতে বলা হয়েছে। শাস্তি দেয়ার চেয়ে বুলিং করলে কঠোর শাস্তি পেতে হয়- এ ধারণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। বুলিং করলে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে দেয়া হবে এমন বার্তা সবার মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে। প্রয়োজনে টিসি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বুলিংয়ের ঘটনা ঘটলে দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে কোনো শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে আঘাত করা যাবে না। প্রয়োজনে কাউন্সিলিং করতে হবে। অভিভাবকদের ডেকে বোঝাতে হবে। বুলিং রোধে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, করিডোর, ক্লাসরুমে সিসি ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি মনিটরিং করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বুলিংয়ের ব্যাপারে আতঙ্ক কাজ করবে। বুলিংয়ের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি হয় এমন নাটক-সিনেমা দেখার পাশাপাশি স্কুলে এসব নাটক শিক্ষার্থীদের দিয়ে মনস্থ করার ব্যবস্থা করতে হবে। বুলিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীকে প্রথমে মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মচারীদের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। বুলিং ক্রিমিনাল ক্রাইম না হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নিতে পারেন। শিক্ষকদের কোনো চাপমুক্তভাবে নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে। শিক্ষক যুক্তিসঙ্গত উপায়ে তা হ্যান্ডেল করবেন। বুলিংয়ের শিকার ও বুলিং করা উভয়ের কাছে লিখিত নেয়ার ব্যবস্থা করা উত্তম। এক্ষেত্রে কেউ সাক্ষী থাকলে তার থেকেও লিখিত রিপোর্ট নেয়া যাবে। বুলিংয়ের শিকার ও বুলিং করা উভয়কে আলাদাভাবে বা একসঙ্গে প্রতিরোধ কমিটি প্রয়োজনীয় কথা বলবে।

বর্তমানে সাইবার বুলিং যেমন বাজে মেসেজ পাঠানো, কোনো গোপন বিষয় মিডিয়ায় প্রকাশ করে দেয়া, অনলাইনে হুমকি দেয়া নতুন সমস্যা। সাইবার বুলিং ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিরুৎসাহী করতে হবে। বুলিংয়ের শিকার ও বুলিং করা উভয়কে যত্নসহকারে কাউন্সিলিং করে তাদের আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। বুলিং করা শিক্ষার্থী ও ভিকটিম উভয়ের জন্য ফাইল মেইনটেন করতে হবে। তাদের রেকর্ডগুলো পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যাতে সহায়ক হয়। স্কুলের যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে অভিভাবকদের সঙ্গে মিটিং করতে হবে এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। স্কুলে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা না করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ম-গোত্র ইত্যাদি যে কোনো বিষয়ে যেন বৈষম্য তৈরি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা যাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাত না পায় সে বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। দলগত বুলিং শিক্ষার্থীদের পরস্পরকে আলাদা থেকে যতটা সম্ভব বিচ্ছিন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সেকশন পরিবর্তন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিনিয়র ও ভালো শিক্ষার্থী তাৎক্ষণিকভাবে বুলিং বন্ধ করতে বলবে। বুলিংয়ের শিকার হলে দ্রম্নত উদ্ধার করবে এমন ব্যবস্থা করতে হবে। দূরে দাঁড়িয়ে না দেখে দ্রম্নত ভিকটিমকে উদ্ধার করতে হবে। অভিভাবকদের করণীয় বিষয়ে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সন্তানকে স্কুলের নিয়ম-কানুন মেনে চলা, অন্যান্য শিক্ষার্থী বা বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সন্তানকে সর্বোচ্চ ভালোবাসার মধ্য দিয়ে লালন-পালন করতে হবে। তাদের মধ্যে মূল্যবোধ শেখাতে হবে, যাতে তারা বুলিংকারী না হয়ে ওঠে। নিজ সন্তানকে বুলিংকারী বা বুলিংয়ের শিকার যাই হোক না কেন, পূর্বাপর কিছু না জেনে অভিভাবকরা ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্তানদের সামনে পিতা-মাতা কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবেন না। বুলিংকারী শিক্ষার্থীর ব্যাপারে স্কুল কোনো পদক্ষেপ নিলে অভিভাবকরা তার বিরোধিতা না করে স্কুলকে সহযোগিতা করার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় স্কুল বুলিং বলতে বোঝানো হয়েছে, স্কুল চলাকালীন সময় বা শুরুর আগে ও পরে, ক্লাস রুমে, স্কুলের ভেতরে, প্রাঙ্গণে বা স্কুলের বাইরে কোনো শিক্ষার্থী দ্বারা অন্য শিক্ষার্থীকে শারীরিক আঘাত করা বা মানসিক বিপর্যস্ত করা, অশালীন বা অপমানজনক নামে ডাকা, অসৌজন্যমূলক আচরণ করা, কোনো বিশেষ শব্দ বার বার বলে উত্ত্যক্ত বা বিরক্ত করাকে স্কুল বুলিং হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাধারণত স্কুলে মৌখিক, শারীরিক ও সামাজিক- এ তিন ধরনের বুলিং হয়ে থাকে। মৌখিক বুলিং হলো কাউকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু বলা বা লেখা, যা খারাপ কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিত করে। যেমন- উপহাস, খারাপ সম্বোধন বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা বা হুমকি দেয়া। শারীরিক বুলিং বলতে কাউকে আঘাত করা, হাত দিয়ে চড়-ধাপ্পড় বা পা দিয়ে লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা মারা, ঘুষি মারা, কারও জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে দেয়া, মুখ বা হাত দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করা। সামাজিক বুলিং বলতে বোঝানো হয়েছে- সামাজিক স্ট্যাটাস, এক বা দলগত বন্ধুত্ব বা পারস্পরিক সম্পর্ক, ধর্মীয় পরিচিতি বা বংশগত অহংকারবোধ থেকে কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা বা তা করতে প্ররোচিত করা বা কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে বারণ করা, কারও সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, প্রকাশ্যে কাউকে অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র জাত তুলে কোনো কথা বলা ইত্যাদি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63717 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1