শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
তালিকা তৈরি হচ্ছে এনজিওদের

রোহিঙ্গা নিয়ে উভয় সংকটে সরকার

দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো শরণার্থীদের মৌলিক অধিকার ও মিয়ানমারে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানানোর পাশাপাশি এ ব্যাপারে তাদের নানামুখী ইন্ধন জুগিয়ে গোটা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলেছে
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

জাতিসংঘের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইসু্যতে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রম্নতি দিলেও শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে তারা পাল্টা বাংলাদেশকেই চাপের মুখে ফেলেছে। অথচ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইসু্যতে জাতিসংঘ কিংবা প্রভাবশালী ওই দেশগুলো দীর্ঘদিনেও মিয়ানমারের ওপর তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। ফলে দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসন ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম আরও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুলে যাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। এতে দেশের রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি করবে বলে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা আশঙ্কা করছেন। অথচ এ ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার পথ এখনো পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন রয়েছে।

এদিকে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো শরণার্থীদের মৌলিক অধিকার ও মিয়ানমারে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানানোর পাশাপাশি এ ব্যাপারে তাদের নানামুখী ইন্ধন জুগিয়ে গোটা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমিন ওইসব ইন্ধনদাতা এনজিওদের তালিকা তৈরি করে তাদের নজরদারির আওতায় আনার হুশিয়ারির পাশাপাশি শরণার্থী রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা জানালেও এতে সংকট আরও বাড়বে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রবেশে বা কোনা বেসরকারি সংস্থার কর্মকান্ড চালানোর ক্ষেত্রে আরও কড়াকড়ি করার বিষয় সরকারের আলোচনায় রয়েছে। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে তালিকা ধরে রোহিঙ্গাদের যাদের সাক্ষাৎকার এখন নেয়া হয়, তাতে মূলত তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হয়। এই স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার প্রশ্ন বাদ দেয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে। রোহিঙ্গাদের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টির একটা চিন্তাও কর্মকর্তাদের মাঝে রয়েছে।

তবে এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএমের সাবেক কর্মকর্তা আসিফ মুনির। তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গাদের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করে কোনো লাভ হবে না। যেটা করতে হবে যে, মিয়ানমারের ওপর শক্ত অবস্থান নিতে হবে। যেটা আমরা দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দেখছি না। সবসময় মিয়ানমার বলছে, কীভাবে কী করতে হবে এবং বাংলাদেশ সেভাবেই মেনে নিচ্ছে। সেখানে কৌশলের পরিবর্তন আনতে হবে।'

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সৈয়দা রোজানা রশীদ মনে করেন বাংলাদেশের পক্ষে বাস্তবে কঠোর কোনো অবস্থান নেয়া সম্ভব হবে না। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে বাংলাদেশ খুব বেশি কঠোর হতে পারবে না দুটি কারণে। এর একটা মানবিক দিক আছে, এটি মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা। আর এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে কোনোভাবেই ইতিবাচক দেখাবে না। এটা কোনো পণ্য নয় যে, ঠেলে পাঠিয়ে দিলাম।' কূটনৈতিকভাবেই সরকারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে যোগ করেন সৈয়দা রোজানা রশীদ।

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্বিতীয়বারের মতো ব্যর্থ হওয়ায় এ কার্যক্রম আরও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশ অপরাধমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতায়ও যুক্ত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

এর আগের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রম্নপ (আইসিজি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, 'বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বড় ধরনের নিরাপত্তার সংকট তৈরি করতে পারে' তারা বলছে, 'জঙ্গি দলে ভেড়ানোর জন্য উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের টার্গেট করা হচ্ছে' তারা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মধ্যে আরসার রিক্রুটমেন্টের কথাও বলেছে?বাংলাদেশকে ব্যবহার করে আরসা আন্তঃসীমান্ত হামলার দিকেও যেতে পারে।?আইসিজি মনে করে, রোহিঙ্গাদের ওপর এই নির্যাতন মুসলমানদের ওপর নির্যাতন হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।? মিয়ানমারে আল কায়েদা, আইএস, জিহাদি গ্রম্নপগুলোকে হামলার আহ্‌বান জানাচ্ছে তারা।

যদিও এ আশঙ্কা অনেকটাই অবান্তর বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অনেকেই। তাদের ভাষ্য, এখানে জঙ্গি তৎপরতা বাড়বে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা অনেকটা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।? বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা এসেছেন তারা নিরীহ এবং সাধারণ।?অল্পকিছু বিদ্রোহী বা আরসা থাকলেও থাকতে পারে। তবে তারা এখানে সক্রিয় হতে পারবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের গোয়েন্দা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক নজরদারি রাখছে বলে মনে করেন তারা।

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইসু্যতে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে দেশি-বিদেশি বেশকিছু এনজিও নানা অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি বেগতিক হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে সরকার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত কিছু দেশি-বিদেশি এনজিওকে এরই মধ্যে নজরদারির আওতায় এনেছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, 'রোহিঙ্গারা যাতে দেশে ফেরত না যায়, সে ব্যাপারে কিছু এনজিও ইন্ধন যোগাচ্ছে এবং সেখানে রাজনীতি করছে। তারা প্ররোচনা দিচ্ছে যে, তাদের না যাওয়া উচিত। আমরা তাদের ওপর একটু নজরদারি করব। কারণ তারা টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন ভঙ্গ করছে। এছাড়া এখানে অনেক মাঝি আছেন, যারা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নেতা। তাদের অনেকে বিভিন্ন রকম অপকর্মে লিপ্ত আছেন, আমরা তাদের শাস্তি দেব।'

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়াগুলোকে রাখাইনে গিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেব। আমরা বাকি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বলব, যে বাংলাদেশে এখানে সারাক্ষণ হইচই না করে আপনারা বরং রাখাইনে গিয়ে কাজ করেন। ওখানে পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে কি না, সেটা দেখেন। আপনাদের মিডিয়াও রাখাইনে যাওয়া উচিত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ-ও জানিয়েছেন, তারা এখনো রোহিঙ্গাদের বুঝিয়ে উদ্বুদ্ধ করে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন। সেজন্য রোহিঙ্গা শিবিরের নেতাদের রাখাইনে নিয়ে পরিবেশ দেখানোর জন্য তাদের একটি প্রস্তাব রয়েছে। তবে বিশ্বাসটা তৈরি করার দায়-দায়িত্ব মিয়ানমারের।

এদিকে প্রত্যাবাসন ইসু্যতে সরকারের হাল না ছাড়ার নেপথ্যে যে 'ভরসা' তা কতটুকু সফলতা এনে দিতে সক্ষম হবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, সরকারের এই আশাবাদের কারণ, বাংলাদেশের কূটনৈতিক দেন-দরবারের কারণে প্রথমবারের মতো চীন এবার এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছে। তবে তাদের এ সম্পৃক্ততা তেমন কোনো সাফল্য আসেনি। এমনকি রোহিঙ্গাদের মনে নিরাপত্তার ভরসা তৈরি করতে মিয়ানমার যে উলেস্নখযোগ্য কিছু করছে তার কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ওপর এতটা ভরসা করা কতটা সঙ্গত হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বাইরে তৃতীয় দেশ হিসেবে শুধুমাত্র চীন রোহিঙ্গা ইসু্যত বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে। তবে অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত নিরাপত্তাসহ আরও নানা ইস্যুতে মিয়ানমার ও চীন একে অপরের ওপর অনেক নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে সম্পর্কও বেশ ঘনিষ্ঠ। চীনের সমর্থন ছাড়া মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের মদদ পাওয়া বেশ কঠিন। কাজেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে, বাংলাদেশের সহায়তায় চীন কতোটা এগুবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায় বলে, উলেস্নখ করেন মাহমুদ আলী।

চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পেছনে দুটি কারণকে চিহ্নিত করেছে মাহমুদ আলী। প্রথমত, মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় চীনের স্বার্থ এবং দ্বিতীয়ত চীনের গ্যাস এবং জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সম্পৃক্ততা। চীন এমন কয়েকটি ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চীন বড় কোনো চাপ প্রয়োগ করবে বলে তিনি মনে করেন না।

মিঃ আলী জানান, মিয়ানমারের ভেতরে চীনের বহু দশকের বিনিয়োগ রয়েছে। বিশেষ করে ষাটের দশক থেকে মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসন এবং অতি সম্প্রতি যে দলীয় রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাদের সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এর কারণ মিয়ানমারের স্বার্থ নয়। এর কারণ চীনের একটা বিশাল অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক স্বার্থ রয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরের মলাক্কা প্রণালী দিয়ে চীনের ৮৫% তেল এবং জ্বালানি গ্যাস সরবরাহ হয়। সেই প্রণালীতে শত্রুভাবাপন্ন দেশের নিয়ন্ত্রণ থাকায় চীনকে নানারকম সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। চীনের বড় আশঙ্কা হলো এই প্রণালিকে তারা যদি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে না নিতে পারে, তাহলে যেকোনো সময়, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সেজন্য তারা মিয়ানমার, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশের মাধ্যমে তাদের জ্বালানি সরবরাহের বিকল্প একটি ব্যবস্থা করে রেখেছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপকূলে চাউথিউ নামের একটি বন্দরে চীন সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। চীন মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল এবং জ্বালানি গ্যাস আমদানি করে, যা কিনা এই বন্দরে নামানো হয়। এই তেল এবং জ্বালানি গ্যাস সরবরাহের জন্য চীনারা গত কয়েক বছর ধরে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে ওই বন্দর দিয়ে দুটি পাইপলাইন বসিয়েছে এবং এ জন্য মিয়ানমারকে তাদের অনেক অর্থ দিতে হয়েছে। ওই পাইপলাইন দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের তেল এবং জ্বালানি গ্যাস চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে পাঠানো হয়।

পাইপলাইনের যেন কোনো ক্ষতি না হয় এবং জ্বালানি তেল/গ্যাসের সরবরাহ যেন নিরবচ্ছিন্ন থাকতে পারে, সেজন্য চীন কিছুটা মিয়ানমার সরকারের কাছে দায়বদ্ধ বলে মনে করেন মিঃ আলী।

কাজেই এই পাইপলাইন যেহেতু রাখাইন অঞ্চলের ভেতর দিয়ে যায়। তাই রাখাইন রাজ্য যেন মিয়ানমার সরকারের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেটা চীনের স্বার্থের মধ্যেও পড়ে।

'যখন মিয়ানমার সরকার দাবি করছে যে, আরাকানি বিদ্রোহীরা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অর্থাৎ পুলিশ, আধাসামরিক ও সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীও ওই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে, তখন চীন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারছেনা।'- বলেন মাহমুদ আলী।

এদিকে ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক বৈরী হলেও মিয়ানমার প্রশ্নে এই দুই দেশ গত দুই তিন দশক ধরে একই নীতিমালা অনুসরণ করে আসছে বলে জানান মিঃ আলী। আর তা হলো, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যাই ঘটুক না কেন, বাইরে থেকে তারা কোনো ধরনের চাপ আসতে দেবে না। ভারত বাংলাদেশের মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গা ইসু্যতে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে নেই। মিঃ আলীর মতে, চীন বা ভারত কোন দেশই নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশের স্বপক্ষে এসে দাঁড়াবে না। এটা বাংলাদেশ যতো দ্রম্নত অনুধাবন করতে পারবে ততোই মঙ্গল।

এদিকে, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই সংকটপূর্ণ অবস্থা চলতে থাকলে সন্ত্রাসবাদ জন্ম নিতে পারে এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টাকে আদৌ কতোটা গুরুত্ব দিচ্ছে মিয়ানমার, চীন বা ভারত? এমন প্রশ্নে মিঃ আলী বলেন, 'সন্ত্রাসবাদের এই আশঙ্কাকে মিয়ানমার, চীন বা ভারত সবাই আমলে নিয়েছে। কিন্তু আপাতত তারা এই মুহূর্তে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আপেক্ষিক স্বার্থের দিকগুলোকেই বেশি বিচার-বিবেচনা করছে।'

এ অবস্থায় রোহিঙ্গা সংকট সামাল দিতে বাংলাদেশকে আরও বাস্তবসম্মত নীতিমালা গ্রহণ করার পাশাপাশি, স্বনির্ভর হয়ে ওঠা প্রয়োজন বলে মনে করেন মিঃ আলী। 'অন্য দেশের ওপর অতি নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশের উচিত হবে অর্থনৈতিক নীতিমালা শক্তিশালী করা, দেশের অভ্যন্তরে সমর্থনের যে ঘাঁটি রয়েছে সেটা গড়ে তোলা। যেন বাংলাদেশ নিজের দেখাশোনা নিজেই করতে পারে।'

গত ৭০ বছর ধরে অমীমাংসিত ফিলিস্তিন সংকট সেইসঙ্গে সাম্প্রতিক কাশ্মীরের অস্থির পরিস্থিতির উদাহরণ টেনে মিঃ আলী বলেন, 'এটি শুধু রোহিঙ্গাদের বিষয় নয়। যেকোনো দুর্বল জনগোষ্ঠী কোনো সবল জনগোষ্ঠীর বিপক্ষে উঠে দাঁড়ায়, তখন তাদের কেউই সমর্থন করে না বা সমর্থন করলেও অতি সীমিত সমর্থন করে। তেমনি বাংলাদেশ বা রোহিঙ্গা কারও ব্যাপারেই কোনো রাষ্ট্র নিজের স্বার্থ বাদ দিয়ে অন্য রাষ্ট্রকে সমর্থন করতে যাবে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63894 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1