শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
টক অব দ্য কান্ট্রি

যুবলীগ চেয়ারম্যানের চ্যালেঞ্জ ও সুর বদল

বিশেষ সংবাদদাতা
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ওমর ফারুক চৌধুরী

ক্যাসিনোতের্ যাবের অভিযান, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার এবং সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি-জুয়ার আসর পরিচালনা, অনিয়ম ও অপকর্মের অ্যাকশন নিয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর দেয়া বক্তব্য ও অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। হঠাৎ বুধবারর্ যাবের অভিযানের কঠোর সমালোচনায় মেতে ওঠা যুবলীগ চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবার সুর নরম করলেন কেন তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। এ পর্যালোচনায় বিভিন্ন সময়ে যুবলীগ চেয়ারম্যানের দেয়া বক্তব্য এবং তার ঘোষিত ট্রাইবু্যনালে যুবলীগ নেতাদের অপকর্মের বিচারের বিষয়টিও রয়েছে। কেন তিনি বুধবারের বক্তব্যে সরকারের এই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যুবলীগ চেয়ারম্যানের বুধবারের দেয়া বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে অবহিত করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং দলীয় নেতাদের একাংশ মনে করছে, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অ্যাকশন নিয়ে বুধবার যে ভঙ্গিমায় কথা বলেছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান তা প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা। খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে গ্রেপ্তার ও ক্যাসিনোতের্ যাবের অভিযানকে রাজনীতিবিরোধী ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ তুলে তিনি সংগঠনে থাকা অন্যান্য অপরাধী নেতাকে বাঁচাতে চাইছেন কি না সে প্রশ্নও উঠেছে।

যুবলীগ চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নয়, সাংবাদিকদের নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন গোয়েন্দাদের সম্পর্কেও। একই সঙ্গে তিনি এ অপরাধের বিষয়ে তার ব্যর্থতা রয়েছে বলে উলেস্নখ করেন।

গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, 'আপনি বলছেন ৬০টি ক্যাসিনো আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আপনারা ৬০ জনে কি এতদিন আঙুল চুষছিলেন? তাহলে যে ৬০ জায়গায় এই ক্যাসিনো, সেই ৬০ জায়গার থানাকে অ্যারেস্ট করা হোক। সে ৬০ থানায় যের্ যাব ছিল, তাদের অ্যারেস্ট করা হোক।' ওইদিন বিকেলে মিরপুরের দারুস সালাম এলাকার গোলারটেক মাঠে ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) কয়েকটি ওয়ার্ডের যৌথ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি বক্তব্য রাখেন।

ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, 'অপরাধ করলে শাস্তির ব্যবস্থা হবে। প্রশ্ন হলো, এখন কেন অ্যারেস্ট হবে। অতীতে হলো না কেন, আপনি তো সবই জানতেন। আপনি কি জানতেন না? না কি সহায়তা দিয়েছিলেন- সে প্রশ্নগুলো আমরা এখন তুলব। আমি অপরাধী, আপনি কি করছিলেন? আপনি কে, আমাকে আঙুল তুলছেন?'

সাংবাদিকদের উদ্দেশে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, পাঁচশ' জায়গা নির্ধারণ করলেন ক্যাসিনো চলে, যুবলীগ চালায়। আপনি সাংবাদিক, আপনাকে বলতে হবে সেই ক্যাসিনোগুলো কোথায়? কারা কারা জড়িত?

যুবলীগ চেয়ারম্যান গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, 'গোয়েন্দারা এতই যদি তৎপর হয় তাহলে এতদিন কী করছিলেন? পত্র-পত্রিকা যদি এতই তথ্য জানে, তাহলে এতদিন তথ্যগুলো তুলে আনেনি কেন? আমি কেন জানলাম না? আমরা কেন জানলাম না? আপনি অতীতে জানতেন? লুকিয়ে রেখেছিলেন কেন?'

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওমর ফারুক চৌধুরীর্ যাবের অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে এটিকে শুভ উদ্যোগ বলে উলেস্নখ করেন। তিনি বিবিসিকে আরও বলেন, 'এসবের পেছনে কারা জড়িত তার বিস্তারিত আমি জানার চেষ্টা করব। এগুলো চিহ্নিত করে আমি কীভাবে সমাধান করব সেই উপায় এখন আমি দেখব।'

সাক্ষাৎকারে যুবলীগ চেয়ারম্যান স্বীকার করেন, অবৈধ ক্যাসিনো চালানো এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের কারণে যুবলীগের ভাবমূর্তির সংকট সরকারকে বিব্রত করছে। তিনি বলেন, 'নিশ্চয়ই সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। তবে আমার বা যুবলীগের সৃজনশীল যে কাজগুলো আছে, সেগুলোকে তো আপনারা স্বীকৃতি দেন না।'

তবে বুধবারের দেয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি বৃহস্পতিবারও বলেছেন, এতদিন কেন অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়নি? তিনি বলেন, 'অঙ্কুরেই যদি এ ব্যবস্থাগুলো নেয়া হতো, নিশ্চয়ই আপনি এ প্রশ্নগুলো করতেন না।'

এ সাক্ষাৎকারে তিনি অপকর্ম চিহ্নিত করা এবং এসবের পেছনে কারা জড়িত তার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করার কথা বলে সমাধানের উপায় দেখার কথা বললেও ট্রাইবু্যনাল প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67591 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1