বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
ছুটি ঘোষণা: প্রক্টরের পদত্যাগ

বশেমুরবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
হামলায় আহত এক শিক্ষার্থীকে সহপাঠীরা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন -স্টার মেইল

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর শনিবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদি রিপন বলেন, 'আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গোপালগঞ্জের নবীনবাগ এলাকার মেসে থাকি। সেখান থেকে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলাম। পথে গোবরা সোবাহবান সড়কে আমাদের ওপর উপাচার্যের লোকজন লাঠি, রামদাসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমাদের ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।'

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিল আহমেদ বলেন, 'আমাকে একদল গুন্ডা লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করলে দৌড়ে পানির মধ্যে চলে যাই। আমাদের আন্দোলন শুধুমাত্র উপাচার্যকে অপসারণের জন্য। অন্য কারও সঙ্গে নয়। তবে কেন আমাদের ওপর হামলা করা হলো?'

এদিকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ রোববার থেকে ১১ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নুরউদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই আদেশে শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

শিক্ষার্থীদের বেলা ১১টা পর্যন্ত হল থেকে বের হতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনে যোগ দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের একটাই দাবি ভিসির অপসারণ। টানা চারদিন আন্দোলন এবং তিন দিনের আমরণ অনশন কর্মসূচি চলছে তাদের। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পানি ও বিদু্যৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে যুক্ত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক সমাজ ১৬টি দাবি সংবলিত পত্র দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে।

গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান টুটুল বলেন, 'আমার ইউনিয়নের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একটা আইন আছে। সেখানে যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা প্রক্টরিয়াল বডি দেখবে। এখানে কেন বহিরাগতরা বা ভিসির লোক এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করবে?' তিনি হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করার কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ূন কবীর। তিনি বলেন, 'আজ শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা করা হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে করা হয়েছে। এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। নৈতিকতার দিক বিবেচনা করে আমি আমার পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।'

তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর কে বা কারা হামলা করেছে, তা আমার জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্পাসে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।'

১৪৪ ধারা জারি করা হয়নি বলে জানান গোপালগঞ্জের নির্বাহী হাকিম শাহিদা সুলতানা। তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করতে হবে। তবে উপাচার্য আমাকে অনুরোধ করেছিলেন ১৪৪ ধারা জারি করতে।'

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ফেসবুকে লেখার জেরে ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। উপাচার্য বহিষ্কারাদেশ তুলে নেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে জোর আন্দোলন গড়ে তোলেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৪টি সিদ্ধান্ত নিয়ে তা রেজিস্ট্রার মো. নুরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি আদেশে প্রকাশ করে। ওই আদেশের ৪ নম্বরে বলা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাক্‌?স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার করা হবে না। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান করা হবে না। যে ফেসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে এতকিছু, সে বিষয়ে আদেশের ১২ নম্বরে বলা হয়, ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67898 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1