শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজপথে উত্তাপ ছড়ানোর ছক জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের

ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি এবং বুয়েটছাত্র হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী চলমান অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার এখনই উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন জোটের নেতারা
হাসান মোলস্না
  ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ঝিমিয়ে পড়া ঐক্যফ্রন্ট আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আগামী ডিসেম্বরে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের পূর্বপরিকল্পনা থেকে সরে এসে চলতি মাসেই বড় ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচিতে যেতে চায় সরকারবিরোধী এই রাজনৈতিক জোট। ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি এবং বুয়েটছাত্র হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী চলমান অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার এখনই উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন জোটের নেতারা। সেই হিসেবে আন্দোলনের ছক তৈরি হচ্ছে। জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশে ফেরার পরই বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সূত্রে জানা গেছে, কয়েকটি দলের মধ্যে দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে একরকম মুখ থুবড়ে পড়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের কারণে সম্পূর্ণ নেতিয়ে যাওয়া ঐক্যফ্রন্ট ডিসেম্বরের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে নিজেদের শক্তিশালী করে মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছিল। সে হিসেবে নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বড় ধরনের শো'ডাউনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। কিন্তু চলমান অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততার গুরুত্ব বিবেচনা করে এখনই মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

আগামীকাল রোববার সমাবেশ ও শোকর্ যালিতে ব্যাপক লোকসমাগমের মাধ্যমে পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের বিষয়টি জানান দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এরপর ঐক্যফ্রন্টের মূল চালিকাশক্তি বিএনপির মহাসচিব দেশে ফেরার পরই কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ঐক্যফ্রন্ট সূত্রমতে, সরকার পদত্যাগ করে জাতীয় সরকার ঘোষণা করা, খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তিসহ সংকট নিরসনে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে পথ নির্ধারণ এবং 'গুম-খুন'সহ ভোট ডাকাতির ঘটনার পাশাপাশি দুর্নীতি-লুটপাট তদন্তে গ্রহণযোগ্য জাতীয় কমিশন গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হবে। তাদের প্রধান দাবি জাতীয় সরকারের একটি রূপরেখাও এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। জাতীয় সরকারের রূপরেখায় থাকা বিষয়গুলো হচ্ছে, 'অবৈধ' সরকারের পদত্যাগের পর সাংবিধানিক শূন্যতা ও সংকট পূরণ করবে জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার গঠন করা হবে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শক্তিগুলোর সংলাপের মাধ্যমে। জাতীয় সরকার রাষ্ট্রের ধ্বংসপ্রাপ্ত তিনটি মৌলিক স্তম্ভকে পুনরুদ্ধার-পুনর্গঠন করার উপায় নির্ধারণ করবে। জাতীয় সরকার গণতান্ত্রিক-শাসনতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাবনা উত্থাপন করবে। জাতীয় সরকার জাতীয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্য এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে 'মর্যাদাপূর্ণ অংশীদারিত্বের' নীতি অনুসরণ করবে।

বিএনপি সূত্রমতে, ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে আন্দোলন করার বিষয়ে বিএনপির অনেক নেতার আপত্তি থাকলেও তা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। কারণ সবাই জানে আন্দোলন সফল করার জন্য চালকের আসনে সব সময় বিএনপিই থাকবে। আর ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে আন্দোলন হলে ভিন্নদিকে রঙ দেয়ার সরকারি কৌশল খুব একটা কাজে আসবে না। এজন্য বিএনপির অনেকেই ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে আন্দোলনে যেতে আগের মতো আপত্তি করছেন না।

সূত্রমতে, বিগত সময়ে একাধিকবার সরকারবিরোধী আন্দোলন ব্যার্থ হলেও এবার সফলতার আশা করছেন বিএনপি ও ফ্রন্ট নেতার। এজন্য আসন্ন আন্দোলন সফল করতে জাতীয় ঐক্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকারের বিপক্ষে থাকা সব রাজনৈতিক দলকে এক পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের একটি প্রক্রিয়া নিয়ে এগোচ্ছেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের পাশাপাশি ডান, বাম ও ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে এ ঐক্য গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। দলগুলোর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে বলে দাবি ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের।

ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলনের পরিকল্পনার বিষয়ে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, বছরের শেষ দিকে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দেশের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্ট বসে থাকতে পাওে না। আন্দোলন একরকম শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে নতুন নির্বাচনের দাবিতে এই আন্দোলন আরও বেগবান হবে।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। ডান, বাম এমনকি ইসলামি দলগুলোর সঙ্গেও তারা দফায় দফায় বৈঠক করেন। শেষ পর্যন্ত ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই রাজনৈতিক জোট মাত্র আটটি আসনে জয়লাভ করে। এরপর নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বর্জনের পাশাপাশি শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু এক পর্যায়ে প্রথমে গণফোরাম এবং পরে বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদে যোগ দিলে ফ্রন্টে সৃষ্টি হয় দূরত্ব। এ নিয়ে ফ্রন্টের শরিকদের অনেক নেতা প্রকাশ্যে সমালোচনাও করেন। একপর্যায়ে কাদের সিদ্দিকী ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে যান। দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝিসহ নানা কারণে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত আর মাঠে দেখা যায়নি ঐক্যফ্রন্টকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<70801 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1