শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সবজি চাষে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বকশীগঞ্জের হালিমা বেগম

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা
  ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
জামালপুরের বকশীগঞ্জের সবজি ক্ষেত পরিচর্যা করছেন হালিমা বেগম -যাযাদি

জামালপুরের বকশীগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও জৈব উপায়ে সবজি চাষ করে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছেন নারী সবজি চাষি হালিমা বেগম। আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমে তিনি এখন সফল সবজি চাষি। মানুষের সমালোচনাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে মাঠে-ঘাটে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এই নারী। তার বাড়ি মেরুরচর ইউনিয়নের পূর্ব কলকিহারা গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুন মাসে পূর্ব কলকিহারা গ্রামে আড়াই বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেন হালিমা বেগম। এর মধ্যে জুলাইয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়। ১৮ দিন বন্যার পানি থাকায় নষ্ট হয়ে যায় হালিমার সবজি খেত। কিন্তু দমে যাননি অদম্য নারী হালিমা বেগম।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফের সবজি চাষ করেন হালিমা বেগম। তিনি দেড় বিঘা জমিতে শসা, ১৬ শতাংশ জমিতে করলা ও ১৩ শতাংশ জমিতে ঢেঁড়স চাষ করেছেন। সবজি চাষে তার ২২ হাজার টাকা খরচ হয়।

বর্তমানে তার সবজি খেতে শসা, করলা ও ঢেঁড়স বিক্রি শুরু হয়েছে। হালিমার খেতের সবজির চাহিদা অন্যান্য কৃষকের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, তিনি সব সময় জৈব উপায়ে এবং কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই সবজি চাষ করে থাকেন। হালিমা বেগম তার ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যবহারের পরিবর্তে কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেন। তিনি নিজেই এসব জৈব সার উৎপাদন করেন। তার কাজে সহায়তা করেন তার স্বামী তোফাজ্জল হোসেন।

পূর্ব কলকিহারা গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী হালিমা বেগমের সংসার চলত অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে। স্বামী তোফাজ্জল হোসেন অন্যের কাজ করে যা রোজগার করতেন তা দিয়ে কোনোমতে দিন পার হতো তাদের। ২০১০ সালে দাতা সংস্থা অক্সফ্যামের সহযোগিতায় রি-কল প্রকল্প কাজ শুরু হয় পূর্ব কলকিহারা গ্রামে।

এক পর্যায়ে পূর্ব কলকিহারা সূর্যউদয় উন্নয়ন সংঘ নামে গ্রামভিত্তিক সংগঠনে (সিবিও) উৎপাদক দলের সদস্য হিসেবে যোগ দেন হালিমা। রি-কল প্রকল্পের কর্মকর্তা ও ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটরদের পরামর্শ ও তাদের আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে থাকেন হালিমা বেগম।

২০১৮ সালে দাতা সংস্থা অক্সফ্যাম বকশীগঞ্জ উপজেলায় নতুন করে কাজ শুরু করলে ভাগ্য খুলে যায় হালিমা বেগমের। উন্নয়ন সংঘ রি-কল ২০২১ প্রকল্পের মাধ্যমে হালিমা বেগমকে বিভিন্ন সবজি চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

হালিমা পরিবেশবান্ধব সবজি চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করে অন্যের জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন নিজ উদ্যোমে। উন্নয়ন সংঘ রি-কল ২০২১ প্রকল্প থেকে পরিবেশবান্ধব সবজি চাষের জন্য কৃষি প্রদর্শনী পস্নট, কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও সেক্স ফেরোমেন ফাঁদের জন্য ১৪ হাজার টাকা দেওয়া হয় তাকে। এতে করে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন হালিমা বেগম। গত জুলাইয়ের বন্যায় তার সবজি খেত পানিতে বিনষ্ট হলে বন্যার পর ফের শসা ও বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেন। ইতোমধ্যে তার উৎপাদিত ফসলের খেত থেকে সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে। সপ্তাহে দুই দিন শসা তুলে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে তার খেত থেকে ৬ থেকে ৮ মণ শসা উঠানো হয়। প্রতি মণ শসা ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হালিমা বেগম উন্নয়ন সংঘ রি-কল ২০২১ প্রকল্প থেকে সার্বিক সহযোগিতায় পাওয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে শসা চাষ করে ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। শসা ও অন্যান্য সবজি চাষে এক লাখ টাকা থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। নারী সবজি চাষি হালিমা বেগম জানান, সবজি চাষ করেই তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। তার দেখাদেখি অন্য নারীরা সবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তারাও এখন সবজি চাষ করছেন।

বকশীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর আজাদ জানান, 'উপজেলা কৃষি দপ্তর হালিমা বেগমকে ফসল উৎপাদন সম্পর্কে সব সময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

আমাদের একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সবজি উৎপাদনে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা- তার খোঁজখবর রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<70809 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1