বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিতে ফের গ্রেপ্তার আতঙ্ক

হাসান মোলস্না
  ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
গ্র্রেপ্তার এড়িয়ে নেতাদের নিরাপদে থাকার নির্দেশনাও দল থেকে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণে আন্দোলন সফলের দায়িত্বে সাধারণত যেসব নেতা থাকেন, তাদের অধিকাংশই শনিবার রাতে বাড়ি থাকেননি। তারা ছিলেন নিরাপদ স্থানে। অনেক নেতা নিজের মোবাইল ফোন শনিবার রাত থেকেই বন্ধ করে রেখেছেন

বুয়েটের ছাত্রহত্যাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী চলমান অস্থির অবস্থার মধ্যে দলীয় কর্মসূচি থেকে বেশকিছু নেতাকর্মী আটক করায় বিএনপিতে ফের গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এরমধ্যে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা ও কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে এই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। বিশেষ করে যেসব নেতার জামিনে নেই তারা এরই মধ্যে গা-ঢাকাও দিতে শুরু করেছেন।

গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে দেশে এক রকম স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছিল না। এ সময়ে বিএনপির যেসব নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদের বেশিরভাগই জামিনে মুক্ত ছিলেন। এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে 'অসম' চুক্তি এবং বুয়েটছাত্র হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী অস্থির অবস্থা চলছে। এ সুযোগে সরকারকে বেকাদায় ফেলতে বিএনপিও কর্মসূচি দিয়েছে। শনিবার জনসমাবেশের কর্মসূচি থেকে দলের প্রায় শতাধিক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে। আর রাতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) প্রধান সমন্বয়কারী মেজর (অব.) ইহসাককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সমাবেশে ও বিমানবন্দরের গ্র্রেপ্তারের ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রোববার আদালত মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে জামিন দিলেও নেতাদের অনেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্র্রেপ্তার এড়িয়ে নেতাদের নিরাপদে থাকার নির্দেশনাও দল থেকে দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণে আন্দোলন সফলের দায়িত্বে সাধারণত যেসব নেতা থাকেন, তাদের অধিকাংশই শনিবার রাতে বাড়ি থাকেননি। তারা ছিলেন নিরাপদ স্থানে। অনেক নেতা নিজের মোবাইল ফোন শনিবার রাত থেকেই বন্ধ করে রেখেছেন।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা। সে সব মামলার অনেকগুলোর আসামি আবার অজ্ঞাত। এজন্য চাইলে যে কাউকেই সেসব মামলায় গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। এভাবে মামলার পর মামলা দিয়ে দলটিকে শেষ করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। সঙ্গত কারণে গ্র্রেপ্তার আতঙ্ক তো থাকবেই। সরকার বিনা ভোটে হওয়ায় তাদের মধ্যেও আতঙ্ক আছে যেকোনো সময় পতন হতে পারে। এজন্য বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের কোমর সোজা করতে দেয়ার মতো ঝুঁকি ক্ষমতাসীনরা নেবেন না। তাই গ্র্রেপ্তারের পথ বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

বিএনপির এই নেতার মতে, সরকার তার নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে বিএনপির ওপর নতুন করে গ্রেপ্তারের খড়গ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন করে আরও কিছু নেতাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। উদ্দেশ্য, বিএনপিকে সুসংগঠিত হতে না দেওয়া।

গত এপ্রিলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত এক দশকে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় লাখখানেক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসবের আসামি ২৫ লাখের মতো। বিএনপির বিরুদ্ধে যত মামলা করা হয়েছে তারমধ্যে পঁচিশ হাজারের মতো আছে 'গায়েবি মামলা'। সেসব মামলায় আসামির সংখ্যাও লাখ দশেকের মতো হবে। এজন্য দলটির অনেক নেতাকর্মীর এখন সময় কাটে আদালতে হাজিরা দিয়ে আর আগাম জামিন নেয়া নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে।

দীর্ঘদিন বিরতির পরে আবারও গ্র্রেপ্তার শুরু হওয়ায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে বাকস্বাধীনতা নেই, যে কারণেই হত্যা করা হয়েছে বুয়েটের আবরার ফাহাদকে। এর প্রতিবাদে বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছে। তাতে ভীত হয়েই সরকার এখন দলের নেতাকর্মীদের আটক করছে। এমন করে সরকার পার পাবে না।

একই বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল বলেন, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল ও আবরার হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্র্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসত্য মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার এবং নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে দেশে এখন ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব চলছে। আর এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কব্জায় নিয়ে তাদের দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের ঘায়েল করার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। বানোয়াট মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন দুঃসহ জীবন অতিবাহিত করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71061 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1