শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৯ খাতে পিছিয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি

নতুনধারা
  ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

বিবিসি বাংলা

বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দ্রম্নত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। কিন্তু গত সপ্তাহেই ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আরেক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ নাজুক চিত্র উঠে আসে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সপ্তাহখানেক পরই 'গেস্নাবাল কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট-২০১৯' প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনটি বলছে, বিশ্বের ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫তম; কিন্তু গত বছরই এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৩।

যে খাতগুলোতে নাজুক বাংলাদেশ-

১. নিরাপত্তা, দুর্নীতি ও বাকস্বাধীনতা: গত বছরের তুলনায় সংঘবদ্ধ অপরাধ, খুন, সন্ত্রাস ও পুলিশের ওপর আস্থা ও নির্ভরশীলতা- এসব নিরাপত্তা ইসু্যতে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। আর পুলিশের ওপর আস্থা ও নির্ভরশীলতায় দক্ষিণ

এশিয়ার সবচেয়ে তলানিতে আছে দেশটি।

অন্যদিকে বিচারিক স্বাধীনতা বা বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা বলতে কোনো দেশের সরকার, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিচার ব্যবস্থাকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে তা বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে গতবারের স্কোর ছিল ৩৮ (১০০-এর মধ্যে)। আর দেশভিত্তিক অবস্থান ছিল ৯৩তম। আর এবছর ৩৫.২ স্কোর নিয়ে অবস্থান ৯৬তম। এটিও দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন।

রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার্সের 'ওয়ার্ল্ডস প্রেস ফ্রিডম-২০১৯' সূচক থেকে তথ্য নিয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪০টি দেশের মধ্যে এ বছর মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩তম (স্কোর ৪৯.৩)। আর গত বছর ছিল ১১৯তম (স্কোর ৫১.৪)। অবশ্য রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডার্সের মূল ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন ১৫০তম।

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সর্বশেষ ২০১৮ সালে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, তাতে ২৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ এবং উগান্ডা একই অবস্থানে (১২৫তম)। আর গত বছর ২৮ স্কোর নিয়ে ১২০তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।

কপিরাইট বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি কতটা সুরক্ষিত সে প্রশ্নেও বেশ তলানিতে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জরিপে ২০১৮ সালে ৩৯.২ স্কোর নিয়ে ১১৯তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর এবছর স্কোর কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৬, অবস্থান ১২৫-এ।

২. সেবাখাত নিম্নমুখী : যোগাযোগ অবকাঠামো এবং বিদু্যৎ-গ্যাস-পানির মতো সেবাখাতগুলোর অবকাঠামো পর্যালোচনা করে বলা হচ্ছে এসব ক্ষেত্রেও বিশেষ ভালো অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। ১৪০টি দেশের মধ্যে দুটিতেই অবস্থান ১০০-এর নিচে।

সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থায় গত বছর থেকে মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও সড়কে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থান (১২৪তম)। আর সেবাখাতে গত বছর থেকে আরও নিচে নেমেছে [১০৯ থেকে ১১৩তম অবস্থানে] দেশটি। এক্ষেত্রে পানির ব্যবস্থাপনার প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি অবনমন হয়েছে। নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা এবং পানি সরবরাহের ওপর নির্ভরশীলতা, এ সূচকে গত বছর ১১৬তম অবস্থানে থাকলেও এবারের অবস্থান ১২৪-এ।

৩. তথ্যপ্রযুক্তির গ্রহণে সক্ষমতা : তথ্যপ্রযুক্তিকে কোন দেশে কীভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে তাও তুলে ধরা হয়েছে গেস্নাবাল কম্পিটিটিভ ইনডেক্সে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল টেলিফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার ইত্যাদি। ১৪১টি দেশের মধ্যে গত বছর ৩৯.৮ স্কোর পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০২-এ। আর এ বছর ছয় ধাপ পিছিয়ে অবস্থান ১০৮ (স্কোর ৩৯.১)।

৪. সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা : মুদ্রাস্ফীতি এবং ঋণের বৈচিত্র্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গত বছরের ৮৮তম অবস্থান থেকে ৯৫তম অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতিতে ১০৫ এবং ঋণের বৈচিত্র্য সূচকে ৮০ থাকলে এবার যথাক্রমে ১১৪ এবং ৮৩ অবস্থানে দেশটি।

তবে বিশ্বব্যাংক রোববারের প্রতিবেদনে বলেছে, শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি ৭ শতাংশের ওপর রাখতে সহায়তা করছে।

৫. গ্র্যাজুয়েটদের মান, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান : মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরনো শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক কাজের জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন তার কতটা অর্জন করতে পারে- এমন প্রশ্নে ৩৯.৯ স্কোর নিয়ে ১২৩-এ ঠেকেছে বাংলাদেশের অবস্থান। এখানে গত বছর দেশটির অবস্থান ছিল দুই ধাপ ওপরে। এবারেরটা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্নতো বটেই, এমনকি কাছাকাছি যে দেশ নেপাল, তার অবস্থানও ৯৭তম।

কোন দেশে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে শিক্ষকরা কী মুখস্থবিদ্যার ওপর জোর দেন নাকি উদ্ভাবনী ও ক্রিটিক্যাল চিন্তা-ভাবনাকে উৎসাহিত করেন সেই প্রশ্নে বাংলাদেশ ৮ ধাপ পিছিয়ে এবার ১১৫তম অবস্থানে। এটিও দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন।

৬. নিয়োগ-বরখাস্ত ও শ্রমিক অধিকার : শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা এবং নমনীয়তা- এসব বিষয়কে শ্রম বাজারের আওতায় এনে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গত বছর ১১৫তম অবস্থান থেকে এ বছর ১২১-এ অবস্থান এসে ঠেকেছে।

শ্রমিকদের নিয়োগ ও বরখাস্ত করা কতটা সহজ সে প্রশ্নে এবার ২৫ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রমিক অধিকার প্রশ্নে ১৭ ধাপ পিছিয়ে এসে ঠেকেছে ১০৯তম অবস্থানে।

৭. নাজুক ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা : প্রাইভেট সেক্টরের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অর্থ সংস্থান, উদ্যোক্তাদের জন্য মূলধনের প্রাপ্যতা, বিমা সুবিধা এবং ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ও স্থিতিশীলতা- এ সূচকে গত বছর থেকে তিনধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। তবে স্কোর সামান্য [৫২.৮ থেকে ৫২.১] উন্নতি হয়েছে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা, ক্রেডিট গ্যাপ, ব্যাংক ঋণ ইত্যাদি সূচকে আফ্রিকার দেশ মালি বা ঘানা থেকেও নিচে অবস্থান করছে বাংলাদেশ (১২৯তম)। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বাংলাদেশ একদমই দুর্বল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

৮. ব্যবসায় বৈচিত্র্য : আর্থিক সামর্থ্য, ব্যবসা শুরু করার সময় ও উদ্যোক্তা সংস্কৃতি নিয়ে ব্যবসায় বৈচিত্র্য ধারণাটির সূচক অনুযায়ী গত বছরের চেয়ে একধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের অবস্থান ১২০।

৯. উদ্ভাবনী সক্ষমতা : বৈচিত্র্যপূর্ণ দক্ষ কর্মী, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতা, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণে কোন দেশ কতটা এগিয়ে সেই সূচকে তিন ধাপ পিছিয়ে এবারের অবস্থান ১০৫।

বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ, বিশেষ সুবিধা ও বরাদ্দ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামডাক- এ প্রশ্নে পাঁচ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের অবস্থান ৮২।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71241 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1