বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
পালানোর সময় সাদাত গ্রেপ্তার

মাঠ ছাড়লেও ক্লাসে যাবেন না বুয়েট শিক্ষার্থীরা

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এএসএম নাজমুস সাদাতকে দিনাজপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ
নতুনধারা
  ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে সায়েম -যাযাদি

যাযাদি রিপোর্ট

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের 'মাঠপর্যায়ের আন্দোলনের ইতি টেনেছেন'। তবে, এ হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে চার্জশিট দাখিলের পর আসামিদের স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে একথা জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম সায়েম।

গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ ব্যাচ) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। এ হত্যাকান্ডের পর আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উলস্নাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত করতে ডিবিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরদিন থেকে

\হ১০ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছিল।

যদিও বুয়েট কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু দাবিই বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনে অনড় শিক্ষার্থীরা বলে আসছিলেন, দাবিগুলো বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত তারা আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না।

তবে মঙ্গলবারের ব্রিফিংয়ে সায়েম বলেন, 'বুয়েট প্রশাসন চলমান তদন্ত প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে সদিচ্ছা ইতোমধ্যে দেখিয়েছে। আমরা সেই সদিচ্ছার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বুধবার (১৬ অক্টোবর) আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচিতে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এদিন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে গণশপথে অংশ নেব। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাস রুখে দেয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো।'

আবরার ফাহাদের খুনিদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, 'সুস্পষ্টভাবে আমরা বলতে চাই মাঠপর্যায়ের কর্মসূচির ইতি টানলেও সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকব আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো প্রশাসন বাস্তবায়ন করছে কি-না এবং ফাইনালি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চার্জশিট দাখিলের পর অপরাধীদের একাডেমিকভাবে স্থায়ী বহিষ্কারের আগ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোরকম একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবে না। আমরা খুনিদের সঙ্গে একাডেমিক কালচার শেয়ার করতে রাজি নই।'

আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে সায়েম বলেন, 'বিগত কয়েক দিন ধরে আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, ভাইয়ের লাশকে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করে আড়ালে-অন্তরালে অনেক স্বার্থান্বেষী সংগঠন নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, এদের সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এর পাশাপাশি আমরা দেশবাসীকে আহ্বান জানাই, এসব স্বার্থান্বেষী মহলের এজেন্ডা দেখে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। রাজপথে আমাদের অবস্থানকে দীর্ঘায়িত করে এ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার সুযোগ আমরা দিতে চাই না।'

সাদাত 'ভারতে

পালানোর সময়' গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এএসএম নাজমুস সাদাতকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, মঙ্গলবার ভোরে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর থানার কাটলা বাজার এলাকা থেকে সাদাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বুয়েটের যন্ত্র কৌশল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদাত ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন। বুয়েট ছাত্রলীগের এই কর্মী দিনাজপুর জেলার হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান।

কারাগারে অনিক সরকারকে

কেউ মারেনি :মন্ত্রণালয়

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের আসামি তার সহপাঠী অনিক সরকার কারাগারে অন্য বন্দিদের মারের শিকার হয়েছেন বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তা নাকচ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পঞ্চদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী অনিক সরকার গত ৬ অক্টোবর হত্যাকান্ডের পরপরই গ্রেপ্তার হন। পরে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ডিবি পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত ১২ অক্টোবর অনিক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে পাঠানো হয় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

অনিকের আগে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন আরেক আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল। অনিকই সেদিন আবরারকে বেশি পিটিয়েছিলেন বলে জবানবন্দিতে তিনি উলেস্নখ করেন বলে সংবাদপত্রে খবর আসে।

অনিককে কারাগারে নেওয়ার পর কয়েকটি সংবাদপত্রে খবর আসে, সেখানে কারারক্ষী ও অন্য বন্দিদের হাতে লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হন তিনি।

তার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও কারা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।

'এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও কারা অধিদপ্তরের কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশার বক্তব্য হলো- অনিক সরকার গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছলে তাকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কারা সেলে রাখা হয়। কারা অভ্যন্তরে প্রবেশের পর অনিক সরকার কারারক্ষী বা কারাবন্দি কারও দ্বারাই আঘাতপ্রাপ্ত বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হননি।'

ক্ষতিপূরণ রিট

শুনানিতে অপারগতা

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় তার পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। পরে রিটটি সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের (কজলিস্ট) কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয় হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার রিট আবেদন শুনানির জন্য উপস্থাপনের পর হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিব্রতবোধ করে তালিকা থেকে বাদ দিতে আদেশ দেন। আদালতে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী একেএম ফয়েজ। এ রিটের শুনানির জন্য অন্য কোনো কোর্টে যাবেন বলে জানান আইনজীবী একেএম ফয়েজ।

তিনি জানান, 'রিটের বিষয়ে শুনানি করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কোর্ট ডিলিট করে দিয়েছেন এবং অন্য কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এখন আমরা অন্য কোর্টে যাব।'

গত ১৩ অক্টোবর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে রিটটি করেন আইনজীবী শাহীন বাবুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী একেএম ফয়েজ। ক্ষতিপূরণের সঙ্গে হত্যার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত (জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি) এবং আবরারের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যও নির্দেশনা চাওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71335 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1