বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মেননের ইউটার্ন

যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
রাশেদ খান মেনন

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি- এমন সাক্ষ্য দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজের বক্তব্য থেকে সরে এসেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। শনিবার বরিশালে এক অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত বক্তব্য দেয়ার পরই তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়। বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ১৪ দল এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তার কঠোর সমালোচনা করেন। অন্যদিকে সরকারবিরোধীরা মেননের পক্ষে অবস্থান নেবেন বলে ভাবা হলেও তা পুরোপুরি সত্য হয়নি। সরকারবিরোধীরা তার বক্তব্যে সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি তার সমলোচনা করতে ছাড়েনি। আর মেননের রাজনৈতিক চরিত্রের ইতিহাস টেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সমালোচনার ঝড় তোলেন। এছাড়া রোববার অনেক গণমাধ্যমে ক্যাসিনো বাণিজ্যে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বক্তব্য দেয়ার ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই সংবাদমাধ্যমকর্মীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজের বক্তব্য থেকে সরে আসেন রাশেদ খান মেনন।

রোববার ওয়ার্কার্স পার্টির কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন (এমপি) বলেন, বরিশাল জেলা পার্টির সম্মেলনে তার বক্তব্য সম্পর্কে জাতীয় রাজনীতি ও ১৪ দলের রাজনীতিতে একটা ভুল বার্তা গেছে। তার বক্তব্য সম্পূর্ণ উপস্থাপন না করে অংশবিশেষ উত্থাপন করায় এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। বিবৃতিতে রাশেদ খান মেনন বলেন, 'আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই এ যাবতকালের নির্বাচন ১৪ দলের সংগ্রামেরই ফসল এবং সরকারও গঠিত হয়েছে ১৪ দলের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আজকে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার যে বিপদ বিদ্যমান তাকে মোকাবিলা করতে ১৪ দলের ওই সংগ্রামকেই

\হএগিয়ে নিতে হবে।'

বিবৃতিতে মেনন আরও বলেন, 'আমি কেবল এখনই নয়, জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে পার্লামেন্টে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলাম 'একাদশ সংসদের সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞতাটি সুখকর নয়। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসলেও নির্বাচনকে ভন্ডুল করা, নিদেন পক্ষে জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল প্রয়োগ করেছে নির্বাচনে। এটা যেমন সত্য তেমনি এ ধরনের পরিস্থিতিতে অতি উৎসাহী প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বাড়াবাড়ি করতে পারে। কিন্তু তাতে এই নির্বাচন অশুদ্ধ বা অবৈধ হয়ে যায় না। বক্তৃতায় আমি বলেছি স্বাধীনতা উত্তরকাল থেকে এ যাবত জিয়া-এরশাদ-বিএনপি-জামায়াত আমলের ধারাবাহিক অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটেছে। বিভিন্ন সময় আমি প্রার্থী হিসেবে এ সকল ঘটনার সাক্ষী। আমি বলেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিলে ভোটাধিকার ও ভোটের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমরা যে লড়াই করেছি তা যেন বৃথা না যায় সে জন্য নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে।'

অথচ শনিবার দুপুরে বরিশাল নগরের অশ্বিনী কুমার হলে ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা শাখার সম্মেলনে মেনন অভিযোগ করেন, বিগত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, এই নির্বাচনে আমিও নির্বাচিত হয়েছি। আমি সাক্ষী দিয়ে বলছি, আমি জনগণ, সেই জনগণ, তারা ভোট দিতে পারে নাই। ইউনিয়ন পরিষদে পারে না, উপজেলা পরিষদে পারে না। তাহলে (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা, আপনি-আমি মিলে যে ভোটের জন্য লড়াই করেছি, ঘেরাও করেছি, আজিজ কমিশনের সেই ১ কোটি ১০ লাখ ভোটারের তালিকা ছিঁড়ে ফেলার জন্য নির্বাচন বর্জন করেছিলাম, নমিনেশন সাবমিট করার পরে, আজকে কেন আমার দেশের মানুষ, আমার ইউনিয়ন পরিষদের মানুষ, আমার উপজেলার মানুষ, আমার জেলার মানুষ, আমার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে আসবে না?'

এ বক্তব্যের পরে চতুর্মুখী সমালোচনার ঝড়ে ১৪ দলের শরিক নেতাদের পক্ষ থেকেও অনেকে তার পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। এনিয়েও রোববার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান মেনন। যারা পদত্যাগ চাচ্ছেন তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, 'তারা অলীক জগতে বাস করছেন।'

এর মানে তো বলা যায় আপনি পদত্যাগ করছেন না- এ প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, 'না, এটা তো রিজাইনের বিষয় নয়, রাজনীতির বিষয়। এটা তো পলিটিক্যাল ফাইটের কথা, পলিটিক্যাল এরিনার কথা।'

২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই কেন ভোল পাল্টালেন রাশেদ খান মেনন, গতকাল বিকাল থেকেই এ প্রশ্নের উত্তর জানতে কৌতূহলী ছিলেন সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন পোর্টালগুলোতে এনিয়ে নানা ধরনের মত পাওয়া যায়। একটি অনলাইন পোর্টাল শিরোনাম করেছে প্রধানমন্ত্রীর ধমক খেয়েই সুর পাল্টেছেন মেনন। সেখানে আরও লেখা হয়, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার এই বক্তব্যে অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ৩০ শে ডিসেম্বর নির্বাচন যদি ঠিক না হয় তাইলে উনি এমপি থাকেন কেন? মন্ত্রিত্ব পাননি বলেই তিনি এ ধরনের বক্তব্য রাখছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষোভ গেছে রাশেদ খান মেননের কানেও। তাই সুর পাল্টাতে দেরি করেননি তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<72115 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1