বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমানীদের মান ভাঙানোর উদ্যোগ নেবে বিএনপি

হাসান মোলস্না
  ১০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

দলের সিনিয়র দুই নেতার পদত্যাগে বিব্রত বিএনপি। আদর্শিক কারণে নয়, ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগের ঘটনা ঘটছে বলে সিনিয়র নেতারা পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন। তবে সম্ভাব্য আরও পদত্যাগের খবর দলটিকে ভাবনায় ফেলেছে। সঙ্গত কারণে পরবর্তীতে যাতে এমন ঘটনা ধারাবাহিকভাবে না ঘটে সে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা গুরুত্বসহকারে ভাবা হচ্ছে।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা অকপটে স্বীকার করেন, দুই বড় নেতার দলত্যাগে বিএনপিকে ভাবিয়ে তুলেছে। তারা বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ডানের বাম, বামের ডানপন্থি মতাদর্শের মেধাবী নেতাদের নিয়ে গঠন করেছিলেন বিএনপি। তাতে মতামত দেওয়া, প্রতিবাদ করা এমনকি ভিন্নমত গ্রহণ করতেন জিয়াউর রহমান। দুনিয়া থেকে জিয়া সরে গেলেও তার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিএনপিতে। জিয়ার মৃতু্যর পর দীর্ঘকাল খালেদা জিয়াকে সামনে রেখে দলটিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন ওইসব মেধাবীরা। কিন্তু সম্প্রতি ছন্দ পতন হচ্ছে। বিশেষ করে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সূত্রমতে, কী কারণে দলের ত্যাগী নেতারা দল ছেড়েছেন এবং ছাড়ার আভাস দিচ্ছেন- তা অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। তাতে সবার সামনে আসা কারণটি হচ্ছে, তারেক রহমানের নানা কর্মকান্ড ও সিদ্ধান্তে দলের সিনিয়র অনেক নেতা ক্ষুব্ধ। এর বাইরে থাকা অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে রাজপথে দৃশ্যমান আন্দোলন কর্মসূচি না দেওয়া, খালেদা জিয়াকে ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ, 'অকারণে' মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া ও দল পুনর্গঠনসহ দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিনিয়র নেতাদের অবজ্ঞা, সম্প্রতি অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে দুই নেতাকে স্থায়ী কমিটিতে নিয়োগ দেওয়া ইত্যাদি। তবে দলীয় কারণ ছাড়া ব্যক্তিগত কারণও আছে পদত্যাগের বা পদ ছাড়ার আভাস দেয়ার। এর মধ্যে রয়েছে, নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা ও মামলা-হামলা থেকে রক্ষা পাওয়া। তবে ১ যুগ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে বিএনপির পতাকাতলে থাকার পরে বিএনপি ছাড়ার ভাবনার মূল কারণ ব্যক্তিগত নয় সাংগঠনিক তা অনেকেই অনুধাবন করছেন। এজন্য এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এম মোরশেদ খান ও লে. জে. অব. মাহবুবুর রহমানের পদত্যাগের খবরে নড়েচড়ে বসেছেন দলের সিনিয়র নেতারা। এর ধারাবাহিকতায় যেন আরও এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেই চেষ্টাই করছেন তারা। কিন্তু অনুসন্ধানের মাধ্যমে দল ছাড়ার কারণগুলো শনাক্ত করে দলকে সত্যিকারের ভালোবাসা সিনিয়র নেতারা পড়েছেন উভয় সংকটে। না পারছেন বিপস্নবীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে, না পারছেন হাইকমান্ডকে বুঝাতে। এজন্য খালেদা জিয়ার মুক্তির আগ পর্যন্ত অভিমানী নেতাদের ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন।

দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, মূলত তিনটি কারণেই ১ যুগ ত্যাগ স্বীকার করার পরে বিএনপি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন নেতারা। কারণ তিনিট হচ্ছে- জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রতি তারেক রহমানের অবজ্ঞা, তাদের গুরুত্ব না দেওয়া এবং নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া। এজন্য চলমান সমস্যা সমাধান করে অভিমানীদের দলে রাখাটা খুবই কঠিন। কিন্তু এরপরও চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

সূত্রমতে, অভিমানীদের মান ভাঙাতে দ্রম্নত নির্বাহী কমিটির সভা করার পাশাপাশি যারা দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় আছেন তা জানার চেষ্টা করা হবে। তারা কি ব্যক্তিগত কারণে নিষ্ক্রিয়, ক্ষমতাসীনদের চাপে নিষ্ক্রিয় নাকি কোনো অভিমান আছে- তা জানা হবে। যদি অভিমান থাকে তাহলে অভিমানটা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে নিষ্ক্রিয় নেতাদের সঙ্গে সিনিয়র নেতারা আলোচনা করবেন। প্রয়োজনে দলের হাইকমান্ডও আলোচনা করে যৌক্তিক কারণ থাকলে সেই সমস্যা সমাধান করে রাজনীতিতে সক্রিয় করা হবে।

সূত্রমতে, এরই মধ্যে পদত্যাগী নেতাদের দল ছাড়ার কারণ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। সর্বশেষ বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন এম মোরশেদ খান। তার বিষয়ে দলের কাছে থাকা তথ্য হচ্ছে, ব্যক্তিগত স্বার্থের বিষয়টি থাকলেও মূল কারণ দলে যথার্থ মূল্যায়ন না পাওয়া। এজন্য মোরশেদ খান ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, বিএনপির রাজনীতি এখন আর রাজনীতি নেই। এরা স্কাইপের মাধ্যমে রাজনীতি করতে চায়। এটি করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। শুধু বিএনপি নয়, তিনি আর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই থাকবেন না।

এর আগে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন সিলেটের ইনাম আহম্মেদ চৌধুরী। তার অভিযোগ, দল তার প্রতি অবিচার করেছে। খালেদা জিয়াবিহীন বিএনপিতে যারা পরিচালকের আসনে আছেন তাদের সঙ্গে আর যাই হোক রাজনীতি করা যাবে না বলেই দলত্যাগ করেছেন তিনি। সাবেক সেনাপ্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানও রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। আলোচনা আছে, তারেক রহমানের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কারণে একরকম হেনস্থা হয়েই অভিমানে দল ছেড়েছেন তিনি। এর আগে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী দল থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, সম্পূর্ণ শারীরিক কারণে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন। তবে পদত্যাগের পরের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে বিএনপি এখন অনেকটাই দূরে। ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন দলের ভাইস-চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু। নতুন কমিটিতে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মনোনীত করায় খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফালু পদত্যাগপত্রে লিখেন, 'সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণে তার পক্ষে ওই পদে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।' তাই নতুন কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

সম্প্রতি শহীদ জিয়ার ঘনিষ্ঠখ্যাত মাহবুবুর রহমান ও বিএনপির বড় দাতা এম মোরশেদ খানের পদত্যাগের পর অনেকেই একই সিদ্ধান্তে যাচ্ছেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর রয়েছে। এ তালিকায় উঠে আসছে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুলস্নাহ আল নোমানসহ অন্তত আরও ডজনখানেক নেতার নাম। তবে আর যেন কোনো নেতা দল না ছাড়েন তার কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার কথা সিনিয়র নেতারা ভাবছেন বলে জানা গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75014 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1