বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
সাগর-রুনি হত্যা মামলা

র্যাবের তদন্ত নিয়ে উচ্চ আদালতের হতার্শাযাবের তদন্ত নিয়ে উচ্চ আদালতের হতাশা

নতুনধারা
  ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
সাগর-রুনি দম্পতি

যাযাদি রিপোর্ট

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন নাহার রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জেনে হতাশা প্রকাশ করে উচ্চ আদালত বলেছে, চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবেই এটি তালিকায়ই থেকে যাবে।

সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে।

আদালতের নির্দেশে এদিন মামলাটির সমস্ত নথিপত্র (সিডি) নিয়ে হাজির ছিলেন তদন্ত কর্মকর্তার্ যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলম।

তার পক্ষে আদালতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পি। হত্যাকান্ডে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে নিজের মামলা প্রত্যাহারের আবেনকারী তানভীর রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

জুলাইয়ে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত এফবিআই থেকে চারটি ডিএনএ টেস্টের মধ্যে দুটির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এ দুটি টেস্টের সঙ্গে আসামিদের মিল পাওয়া যায়নি।'

'বাকি দুটি টেস্টের রিপোর্ট পেলে ডিএনএর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হত্যাকারীদের কল্পিত চেহারা আঁকার চেষ্টা করা হবে।'

তখন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, 'তাহলে কী ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টের ওপর এ মামলার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে? কবে আসবে ডিএনএ রিপোর্ট?'

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, শিগগিরই চলে আসবে।

বিচারক তখন মামলা বাতিলের আবেদনকারী তানভীরের বিষয়ে বলেন, 'একটা লোক ৭ বছর ধরে আদালতে যাচ্ছে-আসছে; তারিখে তারিখে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আপনারা এখনো তদন্তই শেষ করতে পারছেন না।'

আইনজীবী ফাওজিয়া করিম তখন বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়ার কারণে তিনি বিয়ে করতে পারছেন না। সামাজিকভাবে তিনি নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন।

এ পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, তদন্তে নতুন কোনো ক্লু (সূত্র) আছে কিনা।

তদন্ত কর্মকর্তার নেতিবাচক জবাবে বিচারক বলেন, 'ক্লু না থাকলে এ তদন্ত দিয়ে কী হবে? চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবেই এটি তালিকায়ই থেকে যাবে।'

তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মামলাটির তদন্ত শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়ার আরজি জানালে বিচারক বলেন, 'কী হবে? গত ৮ বছরে কিছু হয়নি এক মাসে আর কী হবে? ডিএনএ রিপোর্ট দিয়ে কল্পিত চেহারা আঁকা ছাড়া আর কিছু হবে না।

'আগে আইন ছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে বা তদন্তে কিছু না পেলে তদন্ত স্টপ হয়ে যেত। পরে কিছু পেলে আবার শুরু করা যেত এখন তো সে আইনও নাই।'

এরপর বিচারক তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, যে ল্যাপটপ খোয়া গিয়েছিল সেটি কি উদ্ধার করা গেছে? জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার করা যায়নি।

বিচারক তখন জানতে চান, কী কী আলামত জব্দ করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ছুরি, বঁটি, কাপড় টাঙানোর দড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি। মোট ২৩টি আলামত জব্দ করা হয়েছে। সবগুলো আলামতই বাসায় ব্যবহার্য।

জব্দকৃত ছুরি-বঁটি হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছে কিনা বিচারক জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ডিএনএ টেস্টেই এসেছে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

বিচারক তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন, 'ল্যাপটপ মিসিং নিয়ে তো পত্রপত্রিকায় সে সময় রিপোর্ট হয়েছে, সেসব রিপোর্ট নিয়ে কি কাজ করেছেন আপনারা?'

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, 'এ মামলায় আমি সবে দায়িত্ব নিয়েছি। গত ৪ জুলাই থেকে। এর আগে আরও ৬ জন তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।'

তখন বিচারক বলেন, এটা একটা সমস্যা, মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো।

এরপর আগামী বৃহস্পতিবার পরবর্তী আদেশের জন্য রাখে আদালত।

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে থাকা তানভীরের ক্ষেত্রে মামলা বাতিল চেয়ে করা আবেদনে গত ২০ অক্টোবর আদালত রুল জারির পাশাপাশি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে মামলার নথি (সিডি) নিয়ে তাকে বলে।

প্রায় আট বছরে পুলিশ ওর্ যাবের ছয়জন কর্মকর্তার হাত ঘুরলেও শেষ হয়নি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকান্ডের তদন্ত।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। দুজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ওই রাতে তারা ছাড়া ঘরে ছিল তাদের একমাত্র শিশুসন্তান।

হত্যাকান্ডের পর রুনির ভাই মো. নওশের আলম রোমানের করা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম। তার কাছ থেকে তদন্তের দায়িত্ব গিয়েছিল ডিবির পরিদর্শক রবিউল আলমের কাছে।

৬২ দিন পর ডিবি আদালতের কাছে ব্যর্থতা স্বীকার করলে ২০১২ সালের এপ্রিলে তদন্তের দায়িত্বে আসের্ যাব। এরপরর্ যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার হাত ঘুরে তদন্তভার আসে শফিকুলের হাতে। তার আগে দায়িত্বে ছিলেন এএসপি মহিউদ্দিন।

তবে এই পর্যন্ত আদালত থেকে ৬৩ বার সময় নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। সময়ে সময়ে তারা দিয়ে যাচ্ছেন তদন্তের অগ্রগতির প্রতিবেদন।

মামলাটিতে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন ওই বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও আবু সাঈদ।

রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানকে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর দুই বছর কারাগারে থাকার পর ২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামিন পান।

যে বাড়িটিতে সাগর-রুনি খুন হন সেই বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পালও জামিনে বাইরে রয়েছেন।

এদিকে গত ১ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৬৮ বারের মতো পেছানো হয়।

ওই দিন ঢাকার মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস আগামী ১৪ নভেম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখ দেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75156 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1