বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাতকরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল

মনিরুল ইসলামের ভাষ্য
নতুনধারা
  ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, কোনো একক কারণে বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়নি। তিনি (আবরার) শিবির করেন কি না, হত্যার পেছনে এটি একটি মাত্র (অন্যতম) কারণ। কিন্তু যারা তাকে হত্যা করেছেন, তারা এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কেউ তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে, সালাম না দিলে, তাদের সামনে হেসে দিলে ইত্যাদি কারণে তারা নির্যাতন করতেন।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

মনিরুল বলেন, 'অভিযুক্তরা র?্যাগিংয়ের নামে নতুনদের আতঙ্কিত রাখতে এসব কাজ করেন। এসব বিষয়ে আমরা আগে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে তদন্তে একজন সাক্ষী বলেছেন, তিনি একজনকে সালাম দেননি বলে তাকে পেটানো হয়েছে। র?্যাগিংয়ের নামে উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ডের অভ্যস্ততার অংশ হিসেবেই আবরার হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগে থেকে মনিটরিং করলে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারত। এটা তাদেরই মনিটর করার কথা।'

মনিরুল ইসলাম বলেন, 'তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি রাত ১০টার পর থেকে আবরারের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। ২টা ৫০-এর দিকে ডাক্তার তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে পেটানো হচ্ছিল।'

পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, 'বিশ্বজিৎ হত্যায় যারা রড দিয়ে পিটিয়েছিল তাদের ফাঁসি হয়েছে। অভিযুক্ত কয়েকজন আবার খালাসও পেয়েছে। সেই মামলায় আমরা তেমনভাবে সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণের জন্য ট্রেডিশনাল তদন্ত বা চাক্ষুষ সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। আবরার হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তদন্ত সহায়ক দল ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ, ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রম্নপের তথ্য রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ, পাশাপাশি আটজন আসামির বক্তব্যও হত্যাকান্ডের অনেক বিষয় প্রমাণ করে, যদিও এ ধরনের ঘটনায় চাক্ষুষ সাক্ষী থাকলেও সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসে না। কিন্তু আমরা যেভাবে চার্জশিট প্রস্তুত করেছি আশা করছি সবার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।'

মনিরুল ইসলাম বলেন, আবরারকে হয়তো একটু আগে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এমন নৃশংস পরিণতি হতো না।

স্কেচ ভিডিও প্রদর্শন

সংবাদ সম্মেলন শেষে তদন্ত দলের পক্ষ থেকে একটি স্কেচ ভিডিও দেখানো হয়। সেই ভিডিওতে তুলে ধরা হয় আবরার হত্যার নৃশংস দৃশ্য। প্রত্যক্ষদর্শী, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সাক্ষীদের দেয়া তথ্যমতে ভিডিওটি তৈরি করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্ত দল।

২ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ভিডিটিতে প্রথমে আবরারের প্রাণের বুয়েট ক্যাম্পাস ও তার শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুমটি দেখানো হয়েছে। হলের করিডোরে আবরারের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তার বড় ভাইকে (ছাত্রলীগের বড় ভাই) জানাচ্ছেন তার এক রুমমেট।

৪ অক্টোবর আবরারের বিষয়ে হলের ক্যান্টিনে মিটিং করে অভিযুক্তরা। এর পরপরই হলের গেস্টরুমে মিটিংয়ে বসে তারা আবরার ফাহাদকে নিয়ে আলোচনা করে।

৬ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বড় ভাইয়ের নির্দেশে কয়েকজন আবরারকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ২০১১ নম্বর রুমে যেতে বলেন। সেদিন আবরারকে তার ল্যাপটপ ও মোবাইলসহ ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই রুমে তাকে ফ্লোরে বসিয়ে একটি পক্ষ জিজ্ঞাসাবাদ করে যে, 'হলের কেউ বিতর্কিত ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না?' আরেকপক্ষ তার ল্যাপটপ ও মোবাইল চেক করছে।

এ সময় হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। যন্ত্রণায় মাটিতে বমি ও প্রস্রাব করে দেন আবরার। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ২০১১ থেকে ২০০৫ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০০৫ নম্বর রুমে তিনি আরও অসুস্থ হলে রুম থেকে বের করে তাকে সিঁড়ির পাশে শুয়ে রাখা হয়। দীর্ঘক্ষণ সেখানে পড়ে থাকার পর বুয়েটের চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর একে একে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের চিত্র দেখায় ডিএমপি।

ভিডিওর বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, 'আদালত সাধারণত সাক্ষ্য হিসেবে এ ধরনের ভিডিও গ্রহণ করেন না। তবে আদালত যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা এটা জমা দেব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75436 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1