শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আয়কর মেলায় উপচেপড়া ভিড়

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:১৫
বৃহস্পতিবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে সাত দিনব্যাপী আয়কর মেলার প্রথম দিনে রিটার্ন দাখিল ও আয়কর জমা দেওয়ার জন্য করদাতাদের উপচেপড়া ভিড় - আমিনুল ইসলাম শাহীন

আয়কর মেলার প্রথমদিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে ভিড় করেন করদাতা ও সেবা প্রার্থীরা। করদাতাদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রিটার্ন জমা দিতে হয়। রিটার্ন জমা দেওয়ার পাশাপাশি কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিতেও মেলায় ভিড় করেন করদাতারা। সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ৯টায় মেলা শুরু হওয়ার আগেই করদাতা ও সেবাপ্রার্থীরা মেলা প্রাঙ্গণে আসতে থাকেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে করদাতা ও সেবাপ্রার্থীদের ভিড়। তবে সব থেকে বেশি ভিড় দেখা যায় রিটার্ন জমা দেওয়ার স্থানে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্ন জমা দেওয়ার স্থানে কয়েকশ মানুষের লাইন দেখা যায়। করসেবা প্রদান ও কর সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের মতো এবারও আয়কর মেলার আয়োজন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর- স্স্নোগানে এবার রাজধানীতে কর মেলা বসেছে অফিসার্স ক্লাবে। গতকাল শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। এনবিআর জানায়, এবারের মেলায় হেল্প ডেস্ক, রিটার্ন বুথ ও ই-পেমেন্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে ই-টিন জোন ও রিটার্ন পূরণের স্থান। মেলা প্রাঙ্গণে এবার ৩৯টি হেল্প ডেস্ক করা হয়ছে, যা গত বছর ছিল ৩৩টি। রিটার্ন বুথ রাখা হয়েছে ৫২টি, যা গত বছর ছিল ৪৯টি। আর ই-পেমেন্ট বুথ করা হয়েছে ১৪টি, যা গত বছর ছিল ১টি। বুথের সংখা বাড়ানো হলেও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে করদাতাদের কর দিতে হচ্ছে। মূলত ওয়ার্কিং ডে (অফিস খোলা থাকা) হওয়ায় করদাতাদের একটি বড় অংশ সকালেই কর দিতে মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় করে। এ কারণে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণ এক প্রকার জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মেলায় আগতরা জানান, কর দিতে কী কী করতে হবে তা মেলা প্রাঙ্গণের হেল্প ডেস্ক থেকে জেনে নেওয়া যাচ্ছে। যারা নতুন করদাতা তাদের প্রথমে ই-টিন খোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই ই-টিন খোলা যাচ্ছে। ই-টিন খোলার পর ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও বেতনের স্টেটমেন্ট নিয়ে এসে ফরমপূরণ করে আয়কর দেওয়া যাচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে কর দিতে আসা আনোয়ার নামের একজন বলেন, বেলা পৌনে ১১টার দিকে এখানে এসেছেন। তিনি আগেও কর দিয়েছেন। তাই কী করতে হবে জানা ছিল। কিন্তু রিটার্ন জমা দিতে এসে দেখেন দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়েছেন আধা ঘণ্টার ওপরে। সামনে আরও ২০-৩০ জনের মতো আছে। মনে হচ্ছে আরও আধা ঘণ্টার মতো লাগবে। তিনি বলেন, সময় একটু বেশি লাগলেও কর দিয়ে যাবেন। এতে এক বছরের মতো আর টেনশন থাকবে না। তাছাড়া মেলায় কর দেওয়া তুলনামূলক সহজ। এখানে কর দিতে কোনো হয়রানি হতে হয় না। কোনো সমস্যা হলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ আছে। ফলে সঙ্গে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করা যায়। ফয়সাল নামের একজন বলেন, কর দেওয়ার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে সব সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ফরম পূরণে ভুল হচ্ছে কিনা সন্দেহ হলেই সেটা হেল্প ডেস্ক থেকে দেখিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। গত বছরও মেলা প্রাঙ্গণে এসে কর দিয়েছেন। কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি। আশা করছেন এবারও কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। তবে সকালে এসেও এবার মেলা প্রাঙ্গণে অনেক ভিড় দেখছেন। তিনি আরও বলেন, গত বছর মেলার প্রথম দিন সকালে এত ভিড় ছিল না। কিন্তু শুক্রবার ও শনিবার অনেক ভিড় ছিল। এ কারণে এবার মেলার প্রথম দিনই কর দিতে এসেছি। ভেবেছিলাম অল্পকিছু সময় লাইনে দাঁড়িয়েই কাজ শেষ করতে পারবেন। কিন্তু রিটার্ন জমা দিতে এসে দেখেন তার সামনে প্রায় একশ মানুষ লাইনে আছেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমজাদ হোসেন নামের একজন বলেন, তিনি মতিঝিলের একটি অফিসে কাজ করেন। তাই অফিসে যাওয়ার আগেই কর দিতে এসেছেন। মেলায় কর দিতে কোনো ভোগান্তি হয় না। এবারও করদাতাদের সেবায় পে-অর্ডার, ই-পেমেন্ট ও নগদ ক্যাশে চালানের ব্যবস্থা করেছে সোনালী, জনতা ও বেসিক ব্যাংক। এ জন্য মেলা প্রাঙ্গণে খোলা হয়েছে ব্যাংকের জন্য আলাদা বিশেষ গ্যালারি। সেখানে রয়েছে আলাদা আলাদা বুথ। সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক করদাতা ই-পেমেন্ট, পে-অর্ডার ও ক্যাশে চালান নিয়ে তথ্যের ধোঁয়াশায় পড়ছেন। তাদের জন্যই ব্যাংক শাখার ওই গ্যালারির সামনে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের হাঁক ছেড়ে ডাকতে দেখা যায়। সেখানে কথা হয়, বেসিক ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় আয়কর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে পে-অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকে গিয়ে পে-অর্ডার করতে হতো। বেসিক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য ২৩ টাকা এবং অন্যদের জন্য ৩৫ টাকা খরচা হতো। তবে গত বছর থেকে মেলা প্রাঙ্গণেই পে-অর্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাত দিনই ফ্রি পে-অর্ডার সার্ভিস চলবে। আবার যে কোনো ব্যাংকের ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ই-পেমেন্টও করা যাচ্ছে। সোনালী ব্যাংক সিনিয়র অফিসার মো. আল আমিন বলেন, মেলায় আসা করদাতাদের সুবিধায় পে-অর্ডার ও চালানের কপি নিয়ে তারা দাঁড়িয়ে আছেন। খুব সহজে পূরণ করে আয়কর জমা দিতে পারছেন তারা। চালান জমা দিলেই অনলাইনে ফেরিফিকেশন করা যাচ্ছে। পে-অর্ডার, ই-পেমেন্ট ও নগদ ক্যাশে চালান পে-অর্ডার দেওয়া যাচ্ছে। ভেতরে ঘুরে দেখা যায়, সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের বুথগুলোতে করদাতাদের ভিড় বেশি। সাজানো হয়েছে টেবিল ও হেল্‌থ ডেস্ক। যেখানে বসে পে-অর্ডার ও চালানের কাগজ পূরণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বুথে জমা দিচ্ছেন অনেকে। এনবিআর জানিয়েছে, এবারের মেলায় হেল্প ডেস্ক, রিটার্ন বুথ ও ই-পেমেন্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে ই-টিআইএন জোন ও রিটার্ন পূরণের স্থান। মেলা প্রাঙ্গণে এবার ৩৯টি হেল্পডেস্ক করা হয়ছে, যা গত বছর ছিল ৩৩টি। রিটার্ন বুথ রাখা হয়েছে ৫২টি, যা গত বছর ছিল ৪৯টি। আর ই-পেমেন্ট বুথ করা হয়েছে ১৪টি, যা গত বছর ছিল ১টি।

প্রথম দিনে ৩২৩ কোটি

টাকার আয়কর

আয়কর মেলার প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ৩২৩ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮৫ টাকা আয়কর আদায় হয়েছে। মেলার আয়োজক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল মেলা প্রাঙ্গণ থেকে সেবা নিয়েছেন এক লাখ ৩৫ হাজার ৭৫৮ জন। এর মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছেন ৬৩ হাজার ২৭২ জন। আর চার হাজার ৩৬৬ জন নতুন ই-টিআইন নিবন্ধন করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে