শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে 'বাংলা বন্ড'

বিনিয়োগকারীদের সুদ পরিশোধে ত্রিমুখী সংকট

মুদ্রার বিনিময়মূল্য স্থিতিশীলতা হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা
আহমেদ তোফায়েল
  ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশের মুদ্রা ব্যবস্থার ইতিহাসে নতুন এক যুগের সূচনা হলো। বিশ্বব্যাংক গ্রম্নপের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) বিশ্বে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি 'টাকা বন্ড' চালু হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে 'বাংলা বন্ড'। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে গত সোমবার আইএফসির সহায়তায় এ বন্ড চালু হয়। আর ওইদিনই এটি আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকাভুক্ত হয় লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে (এলইসি)।

এ বন্ডে বেসরকারি খাতে যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা সুদ পাবেন ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বন্ড থেকে টাকা নিয়ে যারা তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন তাদের সুদ পরিশোধ করতে হবে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রশ্ন হচ্ছে, বন্ডে যারা বিনিয়োগকারী এবং বন্ড থেকে যারা টাকা নেবেন তারা সুদ টাকায় না ডলারে পরিশোধ করবেন তা পরিষ্কার করা হয়নি।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, সুদ যেভাবেই পরিশোধ করা হোক না কেন অর্থনীতিতে তিন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। এক. ডলারে সুদ পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে, দুই. টাকায় পরিশোধ করলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং তিন. মুদ্রার বিনিময়মূল্য স্থিতিশীল না থাকলে এর সুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের সুদ পরিশোধ টাকায় হবে না ডলারে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ডলারে হলে বৈদেশিক মুদ্রার চলমান সুদ পরিশোধের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। আর টাকায় হলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সুদ হয়তো টাকায় পরিশোধ হবে। তবে তারা সেটা ডলারে স্থানান্তর করে নেবে; কিন্তু সমস্যা হতে পারে মুদ্রার বিনিময়মূল্য স্থিতিশীল থাকা না থাকা নিয়ে। এছাড়া ডলারে সুদ পরিশোধ হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর একটা প্রভাব পড়বে। কারণ টাকা যখন দেওয়া হবে তখন সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকেই দিতে হবে। সুতরাং সুদ যেভাবেই পরিশোধ করা হোক না কেন বৈদেশিক মুদ্রা এবং মূল্যস্ফীতির ওপর একটা প্রভাব থাকবেই।

জানা গেছে, এলইসিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এখন প্রবাসী বাংলাদেশিরা টাকা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন। বিনিয়োগ সুযোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অর্থায়ন সংকটও কিছুটা দূর হবে এর মাধ্যমে। বন্ডটি হবে তিন বছর মেয়াদি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, প্রাণ এগ্রো ও নাটোর এগ্রোর জন্য আইএফসির কাছে বন্ড ছেড়ে ১৬০ কোটি টাকা চায় প্রাণ-আরএফএল গ্রম্নপ। অনেক আগেই এর প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং আইএফসি ৮০ কোটি টাকা দেয়ও। বাকি ৮০ কোটি টাকা এখন এই বন্ড থেকে দেবে।

সূত্রগুলো জানায়, প্রাথমিকভাবে বন্ডটি তিন বছর মেয়াদি করা হলেও পরে তা বাড়িয়ে পাঁচ বছর, এমনকি ১০ বছর মেয়াদি করারও পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতেও প্রথমদিকে তিন বছর মেয়াদি রুপি বন্ড ছাড়া হয়েছিল। পরে তা পাঁচ বছর করা হয় ও বর্তমানে তা ১০ বছর। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আট বছর ধরেই টাকা বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনার কথা বলে আসছিলেন। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক-আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভা শেষে মুহিত জানিয়েছিলেন, ১০০ কোটি ডলার অর্থাৎ ৮ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, এ দফায় ৮০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়া হলেও শিগগিরই এর আকার হবে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং পর্যায়ক্রমে তা ৮ হাজার কোটি টাকাতেই উন্নীত হবে; কিন্তু কেন বন্ড ছেড়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের জন্য ঋণের অর্থ জোগাড়ের প্রয়োজন হলো? এর ফলে কী লাভ হবে বাংলাদেশের?

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের শিল্প-কারখানায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য দিনকে দিন কষ্টকর হয়ে পড়েছে, ফলে সরকার বিকল্প বিনিয়োগের রাস্তা খুঁজতে চায়। প্রচুর পরিমাণে ঋণের টাকা অনাদায়ী পড়ে আছে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে হচ্ছে, যেটা তাদের পক্ষে খুবই কষ্টকর।

তিনি বলেন, বন্ড ছেড়ে বিনিয়োগ জোগাড় করা সারা বিশ্বেই একটি প্রচলিত পন্থা। বাংলাদেশ এখন সেই পথে পা দিচ্ছে। দেশের আর্থিক অবস্থা এখন অনেক মজবুত। সবচেয়ে বড় কথা, যেসব বেঞ্চমার্কের ভিত্তিতে কোনো দেশের অর্থনীতির মূল্যায়ন হয় তার অন্যতম হচ্ছে ঋণের পরিমাণ। বাংলাদেশে এখন জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ মাত্র ৩৪ শতাংশ যেটা পুরো বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ ইতিবাচক বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশে থেকে প্রতিযোগিতামূলক সুদে বেসরকারি বিনিয়োগ জোগাড়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

তাছাড়া টাকা স্থিতিশীল, অর্থনীতিতে উলেস্নখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল। এমন অবস্থা থাকলে যে কোনো বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগ থেকে ভালো মুনাফা পাবেন। এখনকার বিশ্বে খুব কম জায়গাতেই বিনিয়োগ থেকে বড় মুনাফা আসে। সুতরাং ডলারে বিনিয়োগ না করে অনেক মানুষই টাকায় বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<76023 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1