শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব বিমানবন্দর অকেজো করে দেয় মুক্তিবাহিনী

নতুনধারা
  ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট

আজ বিজয়ের মাসের পঞ্চম দিন। মুক্তিকামী বাংলার অপ্রতিরোধ সৈনিকরা ডিসেম্বরের এই দিনে এসে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশির ভাগ বিমান বিধ্বস্ত করতে সক্ষম হয়। মিত্র বাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো সারা দিন ধরে অবাধে আকাশে উড়ে পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। অকেজো করে দেয় সব বিমানবন্দর। এ দিনে সারা দেশে যুদ্ধের কোনো বিরতি হয়নি। চলেছে মুক্তির যুদ্ধ। নিরস্ত্র-নিরপরাধ মানুষের ওপর পাক হানাদার বাহিনী ৯ মাস ধরে যে অতর্কিত সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে, এদিন ছিল তার জবাব দেয়ার দিন। মুক্তিকামী বাংলার অপ্রতিরোধ্য সৈনিকরা আঁচ করেছে। তাই বিজয়ের স্বপ্নে বিভোর মুক্তিসেনারা মাতৃভূমি উদ্ধারে এগিয়ে চলেছে বীরদর্পে।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর হিসাবমতে, এদিনে ১২ ঘণ্টায় ২৩২ বারে তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটিতে ৫০ টনের মতো বোমা ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনীর কনভয়ের ওপরও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর জঙ্গি বিমান আক্রমণ চালিয়েছে। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর ৯০টি গাড়ি ধ্বংস হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর সেনা বোঝাই কয়েকটি লঞ্চ এবং স্টিমার ধ্বংস হয়। বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর যৌথ কমান্ডের সফল আক্রমণে ধ্বংস হয় পাকিস্তানি সাবমেরিন গাজী। এই সাবমেরিনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে ধার করে আনা। ফলে সাবমেরিনটির ধ্বংস পাকবাহিনীর পরাজয়ে একটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা দেয়। এদিনে কৌশলে মুক্তিকামী

নৌবাহিনীর যৌথ কমান্ড চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সব নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে বন্দর ত্যাগের পরামর্শ দেয়। প্রধান হুঁশিয়ারি ছিল চট্টগ্রাম বন্দর সম্পর্কে। বলা হয়, সবাইকে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে চলে যেতে হবে। সবার স্বার্থ ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পূর্ববর্তী দিন তেমন বোমা বর্ষণ হয়নি। এদিন বের হয়ে আসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। পরবর্তী দিন প্রচন্ডভাবে আক্রমণ চালানো হবে। এ সতর্ক বাণীতে দুটি কাজ হলো। প্রথমত, বিশ্বের সব দেশ বুঝল বাংলাদেশের বন্দরগুলো রক্ষা করার কোনো ক্ষমতা আর পাকিস্তানি বাহিনীর নেই। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ ও বিমানগুলো সব বন্দরকে ঘায়েল করার সুযোগ পেল।

কতগুলো ঘাঁটিতে সেদিন লড়াই হয়। বড় লড়াই হয় লাকসামে। আরেকটা লড়াই হয় ঝিনাইদহের কাছে কোটচাঁদপুরের। দুটি লড়াইয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপকভাবে পরাজিত হয়। এর ফলে বিধ্বস্ত অবস্থায় তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে, ভারতের ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশন আখাউড়ার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাথে মিলিত হয়। তারা আখাউড়ার দক্ষিণ এবং পশ্চিমাংশ দিয়ে অবরোধ করে। অতঃপর পাকিস্তানি বাহিনী মিত্রবাহিনীর সাথে যুদ্ধে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে। ফলে আখাউড়া সম্পূর্ণ শক্রমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে সুবেদার আশরাফ আলী খান, সিপাহি আমীর হোসেন, লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামান, সিপাহি রুহুল আমীন, সিপাহি সাহাব উদ্দীন ও সিপাহি মুস্তাফিজুর রহমান শহীদ হন। আখাউড়া মুক্ত হওয়ার পর কিছু পাকিস্তানি সৈন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ১৬০ জন পাকিস্তানি সৈন্য মিত্রবাহিনীর হাতে নিহত হয়।

রণাঙ্গনের এই যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনা চলে। এদিন নিরাপত্তা পরিষদের পুনরায় যে অধিবেশন বসে তাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের এক প্রস্তাবে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানে এমন এক রাজনৈতিক নিষ্পত্তি প্রয়োজন যার ফলে বর্তমান সংঘর্ষের অবসান ঘটবে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সহিংসতার দমন পরিস্থিতির যে অবনতি ঘটেছে তাও অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। একমাত্র পোল্যান্ড প্রস্তাবটি সমর্থন করে। চীন ভোট দেয় বিপক্ষে। অন্য সব সদস্য ভোটদানে বিরত থাকে। ওই দিন আরও আটটি দেশের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নে দ্বিতীয় ভেটো প্রয়োগ করে। এদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত অবস্থা চিন্তিত করে তোলে প্রবাসী সরকারকে। কারণ এদিনও ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। এদিকে পূর্ব পাকিস্তানের পুতুল শাসক গভর্নর ডা. মালিক দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। তিনি বলেন, দেশ আক্রান্ত। ভারতীয়দের সহযোগিতায় কিছু বিশ্বাসঘাতক দেশ আক্রমণ করেছে। এ দেশের সেনাবাহিনী তাদের প্রতিরোধ করছে। তাদের সাহায্য করার জন্য প্রতিররোধ তহবিল করা হয়েছে। সে তহবিলে মুক্তহস্তে সাহায্য করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান। তবে তার আহ্বানে কেউ যে এগিয়ে আসেননি তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78542 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1