শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে ধর্ষণ-হত্যায় গ্রেপ্তার চারজন পুলিশের গুলিতে নিহত

যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ভারতের তেলেঙ্গানায় এক পশু চিকিৎসককে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনই পুলিশের সঙ্গে 'এনকাউন্টারে' নিহত হয়েছে।

হায়দরাবাদের শাদনগর এলাকার যে জায়গায় নয়দিন আগে ২৭ বছর বয়সী ওই তরুণীর পোড়া লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানেই বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে পুলিশের কথিত ওই 'এনকাউন্টার' ঘটে।

পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাদের সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল তদন্তের জন্য।

সেখানে গ্রেপ্তাররা অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি চালায় এবং তাতে চারজন নিহত হয় বলে সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভি সি সজ্জনার ভাষ্য।

তেলেঙ্গানার আইনমন্ত্রী এ ইন্দ্রকরণ রেড্ডিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, "অভিযুক্তরা পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করলে গুলি চালায় পুলিশ। তাতেই মৃতু্য হয় অভিযুক্তদের।

ভারতের ৪৪ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের ওপর শামশাবাদের আউটার রিং রোডের আন্ডারপাসে গত ২৮ নভেম্বর সকালে ওই চিকিৎসকের পোড়া মৃতদেহ পাওয়া গেলে তেলেঙ্গানাজুড়ে শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ।

মেয়েটির পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুললে তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও এ হত্যাকান্ডের দ্রম্নত বিচার এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়। কয়েকজন চলচ্চিত্র তারকাও সরব হন কঠোর শাস্তির দাবিতে।

তেলেঙ্গানার ঘটনার প্রতিবাদে দিলিস্নতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। মুখে কালো কাপড় বেঁধে 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' লেখা পস্ন্যাকার্ড নিয়ে শত শত মানুষ সেই বিক্ষোভে যোগ দেয়।

তীব্র সমালোচনার মধ্যে পুলিশ মেয়েটির লাশ উদ্ধারের পরদিন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মো. আরিফ, জলস্নু শিবা, জলস্নু নবীন ও চিন্তকুন্ত চেন্নাকেশভুলু নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই পেশায় ট্রাক চালক বা হেলপার।

অপহরণ করে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ওই চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ। মামলা শুনানির জন্য বুধবার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই আদালতে মামলা ওঠার আগেই পুলিশের গুলিতে চার আসামির মৃতু্য হলো।

খবরে বলা হয়, ওই তরুণী চিকিৎসক স্থানীয় একটি পশু-হাসপাতালে কাজ করতেন। ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিজের স্কুটার তেলেঙ্গানার শামশাবাদ টোল পস্নাজার কাছে রেখে ট্যাক্সি নিয়ে গোচিবাওলিতে এক চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি।

তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, টোল পস্নাজায় ওই তরুণীকে স্কুটার রেখে যেতে দেখে ফাঁদ পাতে চার আসামি। স্কুটারের চাকা পাংচার করে দিয়ে তারা সেখানে অপেক্ষা করতে থাকে।

তরুণী চিকিৎসক ফিরে এলে আরিফ তাকে চাকা সারাতে সাহায্য করার প্রস্তাব দেয়। এরপর শিবা তার স্কুটার নিয়ে সেখান থেকে চলে যায় এবং আরিফ, নবীন এবং চিন্তকুন্ত মেয়েটিকে টোল পস্নাজার কাছে একটি ঘরে টেনে নিয়ে ধর্ষণ করে। স্কুটার সারিয়ে ফিরে এসে শিবাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

ধর্ষণের পর ওই তরুণীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। তাদের দুজন ওই স্কুটার নিয়ে গিয়ে কয়েক বোতল পেট্রল কিনে আনে। অন্য দুজন আরিফের লরিতে করে লাশ নিয়ে শামশাবাদের আউটার রিং রোডের আন্ডারপাসে আসে। সেখানে পেট্রল ঢেলে লাশটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরদিন ভোরে এক দুধ-বিক্রেতা পোড়া লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়।

পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, সেই রাতে টোল পস্নাজা থেকে বোনের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল ওই তরুণীর। তিনি বলেছিলেন, চাকা পাংচার হয়ে গেছে, দুই ট্রাক চালক তাকে সাহায্য করবে বলছে। টায়ার সারিয়ে দেবে বলে স্কুটার নিয়ে চলে গেছে একজন। তার ভয় করছে।

বোন তাকে স্কুটার রেখে ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফেরার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু রাত পৌনে ১০টার পর থেকে সেই চিকিৎসকের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ইনডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো তেলেঙ্গানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামির মৃতু্য হলো কথিত 'এনকাউন্টারে'।

২০০৮ সালে ওরাঙ্গলে এক নারীর ওপর অ্যাসিড হামলার তিন আসামি একইভাবে 'হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করে' পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। সাইবারাবাদের বর্তমান পুলিশ কমিশনার ভি সি সজ্জনাই সে সময় ওরাঙ্গলের পুলিশ সুপার ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78849 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1