শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ

মুসলিমবিরোধী নাগরিকত্ব বিল ভারতের লোকসভায় পাস

বিজেপি সরকার পার্লামেন্টে বিলটি তোলার পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বিলটির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে
যাযাদি ডেস্ক
  ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০৭
ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল পাসের বিরুদ্ধে দেশটির বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে। সোমবার গুজরাটের অন্যতম বড় শহর আহমেদাবাদে বিক্ষোভ করেন সাধারণ মানুষ -আউটলুক ইনডিয়া

প্রতিবেশী তিন দেশ থেকে যাওয়া অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে বহুল আলোচিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের পার্লামেন্ট। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) নিম্নকক্ষ লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলটি উত্থাপন করেন। ৯০ মিনিট উত্তপ্ত বিতর্কের পর ২৯৩-৮২ ভোটের ব্যবধানে এটি পাস হয়। আইনে পরিণত হতে হলে বিলটির এখন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে হবে। তবে সেখানে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বিলটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিলটিকে মুসলিমবিরোধী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর ভারতে অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে একটি খসড়া বিলে অনুমোদন দেয় দেশটির মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে শরণার্থী হওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে এ বিলটি আনা হয়। এর আগে ২০১৬ সালে একবার পার্লামেন্টে এ বিলটি লোকসভার অনুমোদন পেলেও রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়। তখন আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে বিলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। সোমবারও বিজেপি সরকার পার্লামেন্টে বিলটি তোলার পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বিলটির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের আশঙ্কা এতে করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করবে। নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের মাধ্যমে ভারতের ৬৪ বছরের পুরনো নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৯৫৫ সালের ওই আইনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব পেতে হলে ভারতে থাকতে হবে ১১ বছর। তবে সংশোধিত বিলে বলা হয়েছে- হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা যদি প্রমাণ করতে পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫ পারে তারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে এসেছে, তাহলে তারা পাঁচ বছরেই আবেদন করতে পারবে। বিজেপি সরকার বলছে, এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়স্থল হবে ভারত। তবে সমালোচকদের মতে, বিজেপির মুসলমান জনগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার নীতির অংশ হিসেবেই পার্লামেন্টে বিল তোলা হয়েছে।

‘বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন থামেনি বলেই এই বিল’

বিবিসি বাংলা:

প্রতিবেশী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন না-থামাটাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনার অন্যতম প্রধান কারণ বলে ভারতের সরকার পার্লামেন্টে দাবি করেছে।

সোমবার লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশসহ তিনটি প্রতিবেশী দেশের সংবিধানকে উদ্ধৃত করে আরও বলেছেন, এই দেশগুলোর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলেই সেখানে অন্য ধর্মের মানুষরা নিপীড়িত হচ্ছেন।

অমিত শাহ জানিয়েছেন, এই বিলটি আনতে সরকার বাধ্য হয়েছে। তার অন্যতম কারণ সেই বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশেই হিন্দু-বৌদ্ধরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা লোকেরাও এই বিলের সুবিধা পাবেন।’

‘তিনি বলেন, সে দেশে কিন্তু নরসংহার থামেনি-একাত্তরের পরও বেছে বেছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে।’

এমনকি, ইসলামি প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মতোই বাংলাদেশেও যে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

অমিত শাহ পার্লামেন্টে বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২(ক)-তেও বলা আছে, ওই প্রজাতন্ত্রের ধর্ম হবে ইসলাম।’

‘এই তিনটি দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম বলেই সেখানে মুসলিমদের নির্যাতিত হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না- কিন্তু অন্য ধর্মের মানুষরা অত্যাচারের শিকার হতে পারেন।’

তিনি আরও দাবি করেন, সাতচল্লিশে কংগ্রেস যদি ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হতে না দিত, তাহলে আজ এই বিল আনার কোনো প্রয়োজনই হতো না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে