বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার রায় কবে?

ছয়টি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার আদেশ চায় গাম্বিয়া
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সে দেশের আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবুবকর মারি তামবাদু -ইন্টারনেট

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা গণহত্যার আলামত এখনো রাখাইনে বিদ্যমান আছে বলে দাবি করেছে গাম্বিয়া। বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে তৃতীয় ও শেষ দিনের শুনানিতে অংশ নিয়ে এ দাবি করেন গাম্বিয়ার আইনজীবীরা।

এর আগে বুধবার হেগের আন্তর্জাতিক এই আদালতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি খন্ডনের সময় সু চির ওই দাবির জবাবে গাম্বিয়ার আইনজীবীরা বলেন, রাখাইনে এখনো সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা গণহত্যার আলামত রয়েছে।

গাম্বিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, গণহত্যার আলামত আড়াল করতে মিয়ানমার জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি। কিন্তু সেখানে এখনো গণহত্যার আলামত বিদ্যমান।

গাম্বিয়ার আইনজীবী প্যানেল বলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাকান্ডের অভিযোগ অস্বীকার করেনি নেইপিদো। মিয়ানমারের গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকারের জবাবে গাম্বিয়ার এক আইনজীবী আদালতের কাছে রোহিঙ্গা হত্যা ও নিপীড়নের বেশ কিছু ছবি প্রদর্শন করেন। এগুলোকে গণহত্যার আলামত হিসেবে আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন তিনি।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, আইসিজেতে গাম্বিয়ার দায়েরকৃত রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার তৃতীয় এবং শেষ দিনের শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের শীর্ষ এই আদালতে মিয়ানমারকে দাঁড় করিয়েছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। এই মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে রাখাইনে যেকোনো ধরনের সহিংসতা থেকে বিরত রাখতে দেশটির বিরুদ্ধে আদালতের কাছে অন্তর্র্বর্তীকালীন আদেশ চেয়েছে গাম্বিয়া।

বৃহস্পতিবার আদালতে দুই পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-পালটা যুক্তি উপস্থাপন করেন। এ সময় গাম্বিয়ার আইনজীবী পল রাইখলার আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর প্রথম তার যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের গণহত্যার উদ্দেশ্য অস্বীকার করেছে।

এর আগে বুধবার আদালতে নিজ দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি বলেন, রাখাইনে সন্ত্রাসবাদবিরোধী বৈধ অভিযান পরিচালনা করেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু সেখানে কোনো ধরনের গণহত্যা হয়নি।

বৃহস্পতিবার আদালতে গাম্বিয়ার এক আইনজীবী বলেন, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগে নিজ দেশের সৈন্যদের জবাবদিহি করার জন্য মিয়ানমারকে বিশ্বাস করা যায় না এবং সহিংসতা বন্ধের জন্য এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত এ মামলার শুনানির শেষ দিনে গাম্বিয়ার আইনজীবী প্যানেলের প্রধান পল রাইখলার আদালতের কাছে বারবার অন্তর্র্বর্তীকালীন ব্যবস্থার দাবি জানান।

তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে চরম সহিংসতা, এমনকি ২০১৭ সালের কঠোর সামরিক অভিযানের মুখে গণ দেশত্যাগের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে; এই শুনানির সময় মিয়ানমার সেসব অস্বীকারের চেষ্টা করেনি।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেলের সামনে পল রাইখলার বলেন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে মিয়ানমার যে বিবৃতি দিয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কাজের জন্য সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করা হবে, এটা কীভাবে কেউ আশা করতে পারে; যখন সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লেইংসহ শীর্ষ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে এবং তাদের ফৌজদারি আদালতে বিচারের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন।

২০১৮ সালের আগস্টে জাতিসংঘের তদন্তকারীদের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে অভিযানের সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যার উদ্দেশ্যে হত্যা, গণধর্ষণ করেছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। জাতিসংঘের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেন, অভিযানে ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

বুধবার মিয়ানমারের আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি। ২০১৭ সালের আগস্টে পশ্চিম রাখাইনে কয়েক ডজন পুলিশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সমন্বিত হামলার জবাবে সন্ত্রাসবাদবিরোধী ক্লিয়ারেন্স অপারেশন পরিচালনা করেছে সেনাবাহিনী।

নোবেলজয়ী এই নেত্রী বলেন, মিয়ানমার অপকর্মে জড়িত সেনা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে তদন্ত, বিচার ও সাজা দিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের আদালতে বিচার হওয়ায় এটি বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতের থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, এমনকি তার ভাষায় সেখানে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের সময় যদি মানবিক আইনের লঙ্ঘন হয়, সেটি গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে না এবং ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করে না।

বৃহস্পতিবার আদালতের শুনানির পর মামলা প্রত্যাখ্যান এবং চূড়ান্ত বিবৃতি দেয়ার জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় পাবেন। অন্তর্র্বর্তীকালীন ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেয়ার জন্য আদালত কোনো চূড়ান্ত সময় নির্ধারণ করেনি। তবে এ আদেশ দিতে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

আন্তর্জাতিক এই আদালতের সিদ্ধান্ত মানা বাধ্যতামূলক এবং সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ নেই। যদিও সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার মতো ক্ষমতা নেই। তবে খুব কম দেশই এসব সিদ্ধান্ত উপেক্ষা কিংবা পুরোপুরি মেনে চলেছে। অন্তর্র্বর্তীকালীন ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেয়ার পর এ মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79695 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1