শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকার

দুই পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন তাবিথ

নতুনধারা
  ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল

হাসান মোলস্না

নির্বাচনের আগে ও পরে দুটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। পরিকল্পনা একটি স্বল্প আরেকটি দীর্ঘ মেয়াদি। নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীনদের অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে, ঘুনেধরা দুর্নীতিতে ভরপুর সিস্টেমের বিরুদ্ধে এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা। নির্বাচনী গন্ডি পার হওয়ার পরে ঢাকা উত্তরকে একটি বাসযোগ্য আধুনিক নগর গড়ার জন্য রয়েছে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে যায়যায়দিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাবিথ আউয়াল এসব কথা বলেন।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ২০১৫ সালের ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে দল সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী ছিলেন। ধনাঢ্য পিতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর প্রথম সন্তান তাবিথ বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং বৈদেশিক কমিটির সদস্য। উচ্চ শিক্ষিত তাবিথ একজন তরুণ ব্যবসায়ীও। ১৯৭৯ সালে জন্ম নেওয়া তাবিথ যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে ইনফরমেশন সিস্টেম টেকনোলজিতে এমএসসি করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে বিবিএ করেন। উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন তাবিথ। ২০১৫ সালে বিএনপির মনোনীত মেয়রপ্রার্থী নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। খেলাধুলা জগতেও রয়েছে তার পরিচিতি। বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচিত সহসভাপতি তিনি।

সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচন এবং পরবর্তী নানা পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলেন তাবিথ আউয়াল। ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল মনে করেন, আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেতার চেষ্টা করবে। কিন্তু জনগণ যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে তাহলে ক্ষমতাসীনরা পরাজিত হবে। কারও একার পক্ষে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা শহর গড়া সম্ভব নয়। আগামী ৩০ জানুয়ারি নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের দায়িত্ব নিতে হবে ঢাকাবাসীকে। আর নির্বাচিত হতে পারলে আগামী ৫ বছরে ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর গড়ে জনগণের আস্থার প্রতিদান দেবেন তাবিথ আউয়াল।

যাযাদি: সিটি নির্বাচনকে ঘিরে প্রাথমিক পরিকল্পনা কী?

তাবিথ আউয়াল: ঢাকাকে অধুনিক শহর হিসেবে গড়তে পরিকল্পনা রয়েছে অনেক আগে থেকেই। ঢাকা গড়তে সবার আগে জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে তা বেশ কঠিন। কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। এবারও একইভাবে বা অন্য কোনো অপকৌশলের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা সিটি নির্বাচনে জয়ী হতে চাইবে। এই অপকৌশল ঠেকাতে তার এবং বিএনপির কিছু কৌশল ও কার্যক্রম রয়েছে। সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী মাঠে থেকে কেন্দ্র ও ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি কাজ করবে। তবে মূল কাজ করতে হবে জনগণকে। নির্ভয়ে এবং সব বাধা অতিক্রম করে নিজের ভোটটা নিজের দিতে হবে।

যাযাদি: নির্বাচনে বিজয়ে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা কী?

তাবিথ আউয়াল: ক্ষমতাসীনদের ভোটের অধিকারকে স্থায়ীভাবে কেড়ে নেওয়ার মহাষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধিই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। তবে এবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতসীনদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে সফল হতে হবে।

যাযাদি: নির্বাচনে বিজয়ী হতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনটি মনে করেন?

তাবিথ আউয়াল: জনগণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে ওঠাটাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকদের কাছে আমার এবং দলের প্রত্যাশা হচ্ছে, তারা তাদের ভোট যথাযথভাবে প্রয়োগ করবেন এবং কেউ যদি ভোট প্রয়োগে বাধা দেন বা বিশৃঙ্খলা করে তা প্রতিহত করে এবং নিজেরা নিজেদের ভোটাধিকার আদায় করবে। তাহলে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা সফল হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের অধিকার কায়েম হবে। যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেটা ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচনী আন্দোলনের মাধ্যমেই এগোতে হবে।

যাযাদি: জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?

তাবিথ আউয়াল: সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। কারণ এবার ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে মাঠে নামব। এ ছাড়া সরকারের দুর্নীতি, জুলুম, নির্যাতনের কারণে অনেকেই ক্ষুব্ধ। তরুণ প্রার্থী হিসেবে যুবসমাজের বড় একটি অংশের সমর্থন পাব। প্রতীক এবং তরুণ নেতৃত- এ দুইয়ের সমন্বয়ে বিপুল ভোটে জয়ী না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

যাযাদি: সিটি নির্বাচনে বিজয়ী হলে নগরকে কীভাবে গড়ে তুলবেন?

তাবিথ আউয়াল: নির্বাচিত হলে বাসযোগ্য আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলার দিকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। কীভাবে নগরের উন্নয়ন করতে হয়, তা নিয়ে দীঘদিন ধরে কাজ করছেন। নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হবে। নিত্যদিনের সমস্যা যানজট। সব সংস্থাকে সমন্বয় করে যানজট নিরসনে দেওয়া হবে অগ্রাধিকার। উন্নয়নের বড় বাধা দুর্নীতি। নির্বাচিত হলে নগর ভবনকে দুর্নীতিমুক্ত করা হবে। প্রতিটি কাজে আনা হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।

যাযাদি: নগরবাসীর জন্য আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?

তাবিথ আউয়াল: বায়ু দূষণ, পানি দূষণ এবং শব্দ দূষণ রোধ করে ট্রাফিক জ্যামমুক্ত আধুনিক ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে বিশেষ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। ইশতেহারে এর প্রায় সবকিছুই থাকবে। মূল লক্ষ্য আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলা। নগরবাসীর প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ হবে। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

যাযাদি: গত সিটি নির্বাচনের মতো এবারও ভোট বর্জনের কোনো সম্ভাবনা রয়েছে?

তাবিথ আউয়াল: নির্বাচনের পরিস্থিতি একজন প্রার্থীকে মাঠ থেকে সরে যেতে বাধ্য করে। গতবারের নির্বাচনকে কিছুতেই নির্বাচন বলা যায় না। সেই নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া এবং নির্বাচনে থাকার মতো অবস্থাও ছিল না। ওই নির্বাচনে শুধু বিএনপির নয়, আরও চার প্রার্থীও নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। এটা ছিল দলের এবং গণসিদ্ধান্ত। আর এবারও নির্বাচনে তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এরপরও এবার নিজের এবং দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কোনো মেয়র এবং কাউন্সিলরপ্রার্থী নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে যাবে না। লড়াই শেষ পর্যন্ত হবে। এই নির্বাচনের লড়াই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। অর্থাৎ ভোট গণনা করে ফলাফল এবং প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হলে সেগুলোও হতে পারে।

যাযাদি: একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইসির কার্যক্রমে বিএনপি সন্তুষ্ট হয়নি, আসন্ন সিটি নির্বাচনে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো আলামত দেখেছেন?

তাবিথ আউয়াল: নির্বাচন কমিশনের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। নির্বাচন করার যে পরিবেশ এবং প্রচার করার যে পরিবেশ- সেই পরিবেশ তারা এখন পর্যন্ত তৈরি করেন নাই বা তৈরি করতে পারেননি। এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কোনো আলামত নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত ৬ ফেব্রম্নয়ারি নথিপত্র দেখে একজন কমিশনার বলেছেন, একজন প্রার্থীকে শোকজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অথচ নির্বাচন অফিসার বলছেন উনি কোনো নির্দেশনা পাননি। এই কমিশনার আবার প্রার্থিতা কখন থেকে শুরু তারও একটি নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন। এগুলো জনগণ ও জাতির জন্য অনেকটা অবমাননাকর।

যাযাদি: ইভিএমে ভোট পদ্ধতিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

তাবিথ আউয়াল: এ বিষয়ে অনেক অভিযোগ ও প্রশ্ন আছে। ইভিএম ব্যবহারটা কি জনকল্যাণে এবং জনস্বার্থে করা হচ্ছে? না কি কোনো ব্যক্তিগত ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির পকেটের স্বার্থে? নাকি ভোট চুরি করার স্বার্থে। এসব বিষয় জনগণের কাছে এখনো পরিষ্কার না। নির্বাচনে ৮০ হাজার মেশিন ঢাকা উত্তর সিটিতে লাগবে। মেশিনের বাণিজ্য থেকে কে লাভবান হবে? নির্বাচন কমিশন না সরবরাহকারীরা, না কি আসলে জনগণ?

যাযাদি: ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট না করার দাবি জানাবেন?

তাবিথ আউয়াল: ইভিএম নিয়ে আগামী দিনগুলোতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করবেন। এই সংলাপে ইভিএমের টেকনিক্যাল বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা হবে। দলের পক্ষ থেকে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট না করার দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<83435 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1