শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বাপাউবোর প্রকল্প

এক কোটির গাড়ি, দুই কোটির বিদেশ ভ্রমণ!

বাঁধ মেরামত কাজে জিপ নয় স্পিড বোটে করে দ্রম্নত পৌঁছানো সম্ভব। তাই কোটি টাকায় বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রস্তাবে 'না' করে দিয়েছে কমিশন
নতুনধারা
  ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট

প্রকল্পের কাজ হবে নদীতে। সেই কাজ তদারকি করার জন্য নৌযান জরুরি হলেও প্রায় কোটি টাকার বিলাসবহুল জিপ গাড়ির আবদার করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। এছাড়া কোনো কারণ ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণের জন্য দুই কোটি টাকা চেয়েছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ বা মেরামত কাজ করা হবে। কাজগুলো যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে বাস্তবায়ন করা হবে।

তবে বাঁধ মেরামত কাজে কোটি টাকার (৯৫ লাখ টাকা) জিপ গাড়ির আবদার অযৌক্তিক মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। তাদের বক্তব্য, পানির মধ্যে প্রকল্পের জন্য জিপ নয়, স্পিড বোট যৌক্তিক। বাঁধে ভাঙন ধরলে জিপ নয় স্পিড বোটে করে দ্রম্নত পৌঁছানো সম্ভব। তাই কোটি টাকায় বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রস্তাবে 'না' করে দিয়েছে কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ ভ্রমণের জন্য দুই কোটি টাকা আবদার করেছে। কিন্তু কেন বিদেশ ভ্রমণ সে বিষয়ে কিছু উলেস্নখ করা হয়নি। তাই এই আবদারও নাকচ করা হয়েছে।

এছাড়া অনাবাসিক ভবন মেরামত বাবদ ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল, সেটাও বাতিল করে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, সরকারি অর্থায়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে প্রকল্পের টাকা খরচ করে বিদেশ যাওয়া কেন?

কৃষি, পানিসম্পদ ও পলস্নী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, 'প্রকল্পের আওতায় তাদের (বাপাউবো) প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাদের এ বিষয়ে একটা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সুতরাং নতুন করে ২ কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ যাওয়ার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।'

প্রকল্প থেকে ৯৫ লাখ টাকার গাড়ি বাতিল করা প্রসঙ্গে সচিব বলেন, 'প্রকল্পে গাড়ি দেওয়া হয় প্রকল্প তদারকির জন্য। বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ কাজ পানির মধ্যে হয়ে থাকে। তাহলে পানির মধ্যে প্রায় কোটি টাকা দামের গাড়ির কাজ কী? বাঁধের কোথাও ভাঙন দেখা দিলে সেখানে ৯৫ লাখ টাকার গাড়ি নিয়ে পৌঁছানো যাবে? এই প্রকল্পে দরকার স্পিড বোট। সড়কের কোনো প্রকল্প হলে গাড়ির অনুমোদন দেওয়া যেত। এর আগে ৩৪ থেকে ৩৫টি স্পিড বোট দেওয়া হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।'

'গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলাধীন কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের খানাবাড়ী ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে রক্ষা' প্রকল্পের আওতায় এমন আবদার করা হয়েছিল। প্রথম গাড়ি কেনা ও বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব আসে পরিকল্পনা কমিশনে। এরপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) মাধ্যমে গাড়ি কেনা ও বিদেশ ভ্রমণ খাত বাদ দেয় পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পলস্নী প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ২ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছিল। বিস্তারিত আলোচনা করে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাপাউবোর অন্য কিছু প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ রয়েছে বিধায় এ প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে মোটরসাইকেল কেনা বাবদ ৩ লাখ টাকার অনুমোদন দেওয়া হলেও একটা জিপ গাড়ি কেনা বাবদ ৯৫ লাখ টাকা বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২২ জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি প্রবাহের পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করার কারণে নদীর বুক জুড়ে অনেক চরের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর ডানতীর ক্রমান্বয়ে পশ্চিম দিকে সরে আসছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের বন্যায় গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট ও সুনামগঞ্জের থানবাড়ী এলাকায় প্রায় ২৬শ' মিটার প্রচন্ড ভাঙন দেখা দেয়। নদীর তীর ভাঙনে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাটবাজার, ঘরবাড়ি, কাঁচা-পাকা সড়কসহ বিপুল পরিমাণে ফসলি জমি যমুনা গর্ভে বিলীন হয়।

এই জন্য প্রকল্পের আওতায় ৫টি স্থানে মোট ৫ হাজার ৯৬২ মিটার নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ বাবদ ৩৮২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মিটার বাবদ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় ১৮ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ চাওয়া হয়েছে। নির্মাণ পরবর্তী কোনো মেরামত না করায় এবং বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা ইত্যাদির কারণে বাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। বিধায় প্রকল্পের আওতায় বাঁধ পুনরাকৃতিকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে বাঁধের ওপরের গড় প্রস্থ ৪ দশমিক ৩ মিটার। প্রস্তাবিত প্রকল্পে বাঁধের গড় প্রস্থ ৬ মিটার হবে। উচ্চতা ৪ দশমিক ৫ মিটার এবং স্স্নোপ হবে প্রায় দেড় কিলোমিটার।

প্রকল্পের আওতায় অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যয় বাবদ ৪, পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট কেনা বাবদ ৫, সিল ও স্ট্যাম্পস বাবদ ২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া মুদ্রণ ও বাঁধাই বাবদ ১, বিজ্ঞাপন বাবদ ১, শ্রমিক মজুরি বাবদ ৫, সম্মানী ভাতা বাবদ ৬, জরিপ বাবদ ৫, আসবাবপত্র কেনা বাবদ ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া মধ্যবর্তী মূল্যায়ন বাবদ ৮, মোটরযান মেরামত বাবদ ১, ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি বাবদ ৫০, প্রাইস কন্টিনজেন্সি বাবদ ৫০ লাখ টাকা সংস্থান রাখা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে কমিশন। তবে গাড়ি কেনা ও বিদেশ ভ্রমণ খাত একেবারে না করে দিয়েছে।

বিদেশ ভ্রমণ ও গাড়ি কেনা প্রস্তাব বাতিল প্রসঙ্গে বাপাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) এ এম আমিনুল হক বলেন, 'ওনারা (পরিকল্পনা কমিশন) যেটা ভালো মনে করেছেন, তাই করেছেন। আমিও মনে করি, আমাদের কাজ যেহেতু পানিতে তাই গাড়ির বদলে স্পিড বোট কেনাই ভালো।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84344 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1