শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা, এ্যানিসহ আহত ২০

তবুও আমি পিছু হটব না: তাবিথ এই হামলা নিজেদের সংঘর্ষ : আতিকুল অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবে ইসি
নতুনধারা
  ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
গাবতলীতে মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারের সময় ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা করা হয়। এতে তিনি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন -যাযদি

যাযাদি রিপোর্ট

রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় হামলা হয়েছে। হামলায় তাবিথসহ ২০ জন আহত হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতির পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় দমে না থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। অন্যদিকে এ হামলা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম। আর অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখার কথাও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বিএনপি সূত্র প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ১১টার দিকে গাবতলী পর্বত সিনেমা হলের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। সেখান থেকে প্রচার মিছিল নিয়ে আনন্দনগরের তেলের মিল এলাকায় এলে পেছন থেকে হঠাৎ 'জয় বাংলা' স্স্নোগান দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের শতাধিক নেতাকর্মী ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। হামলার নেতৃত্বে ছিলেন ৯নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিল প্রার্থী মুজিব সরোয়ার মাসুম নিজেই। হামলাকারীরা বিএনপি প্রার্থীকে কিলঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় দলের নেতাকর্মীরা তাবিথ আউয়ালকে ঘিরে বেষ্টনী তৈরি করলে তাতে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ইট নিক্ষেপ ও ঘুষিতে তাবিথ আউয়াল মুখ ও মাথায় আঘাত পান।

এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক সেখানে প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এরপর তাবিথ আউয়াল বক্তব্য দিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এ জন্য ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে দায়ী করেন। তার বক্তব্যের সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ফের হামলা চালায়। নেতাকর্মীদের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে বক্তব্য থামিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পিছু না হটে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় পুলিশ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে অবস্থান নেয়। পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও তাদের ওপর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে পেটাতে থাকেন। হামলায় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার সাইফুদ্দিন রবিন, সাঈদ খানসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

হামলার পরও তাবিথ আউয়াল প্রচার থেকে বিরত থাকেননি। নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আমাকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, হামলা আমাদের দমাতে পারবে না। আমরা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার চালিয়ে যাবে।'

হামলায় আহত শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'আমাদের ওপর দুই দফা হামলা হয়েছে। আমাদের প্রার্থীসহ ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন।'

হামলার পর গোলারটেক, ডিয়াবাড়ি, বর্ধনবাড়ি, বাঘবাড়ি, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড হয়ে ১১নং ওয়ার্ডের কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড গিয়ে ফের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তাবিথ।

সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, 'আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছিলাম। পেছন দিক থেকে কাপুরুষের মতো আমাকে টার্গেট করে আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। আমার সঙ্গের সহকর্মী নেতৃবৃন্দকে আঘাত করা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হলো- এ হামলা কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সামনেই হয়েছে।'

তিনি বলেন, তারা নিজের চোখে দেখেছেন এ হামলা ৯নং ওয়ার্ডে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মজিব সরোয়ার মাসুম ও তার লোকেরা করেছে। পুলিশ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আশা করি।

তিনি আরও বলেন, এমন হামলা করে মনোবল নষ্ট করা যাবে না। বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থকদের পিছু হটাতে পারবে না। প্রচারণার কাজ এগিয়ে যাবে ইনশালস্নাহ। আগামী ১ ফেব্রম্নয়ারি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তা প্রমাণ করব।

এরপর লেকভিউ, দক্ষিণ পাইকপাড়া, বটতলা, মধ্য পাইকপাড়া, লালওয়াল, নতুন বাজার, ডি টাইপ কলোনি, কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেট, পোড়াবস্তি, শহিদ মিনার রোড গণসংযোগ করেন।

এসব স্থানে গণসংযোগে তাবিথ আউয়াল বলেন, ভোটারা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন। ইভিএম নিয়ে ভোট নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে।

গণসংযোগকালে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা বেলাল আহমেদ, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাইদুল ইসলামসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এরপর ১৬নং ওয়ার্ড কাফরুল এলাকায় ৩ ঘণ্টা প্রচারণা চালান তাবিথ আউয়াল। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গঠিত পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু যুক্ত হন। পরে কচুক্ষেত স্বাধীনতা চত্বরে পথসভা করেন তারা। সেখানে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবুর রহমান রাব্বির (ঘুড়ি প্রতীক) পক্ষে ভোট চান নেতারা।

তাবিথ আউয়ালের মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক মাহমুদ হাসান জানান, তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ইসিতেও এ বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।

তাবিথের ওপর হামলা 'নিজেদের সংঘর্ষ': আতিকুল

ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা প্রসঙ্গে বলেন, 'তারা নিজেরা সংঘর্ষ বাধাতে পারেন।' মঙ্গলবার উত্তর সিটির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী সমাবেশে আতিকুল ইসলাম একথা বলেন।

আতিকুল ইসলাম বলেন, 'হামলার বিষয়ে এখনো শুনিনি। তারা নিজেরা সংঘর্ষ বাধাতে পারেন। আমরা সব সময় উন্নয়নের কথা বলে আসছি, এখনো বলব, আমরা চাই উন্নয়ন।'

অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে : রিটার্নিং অফিসার

তাবিথ আওয়ালের ওপর হামলার অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল কাশেম। গতকাল দুপুরে আগারগাঁওয়ের তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।

আবুল কাশেম বলেন, এখন পর্যন্ত তারা বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85451 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1