শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে কোরবানির গরু, ছাগল

জাহিদ হাসান
  ২০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে বিক্রি করতে আনা কোরবানির পশু তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মহাসড়ক ও ফেরিঘাটে দীঘর্ যানজট ছাড়াও পশুর হাটে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে লাভের আশায় এসেও লোকসানের শঙ্কায় আছেন তারা ।

সরেজমিন রাজধানীর একাধিক গরুর হাট ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সড়ক ও নৌ-পথে গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা জাতীয় পশুকে রাজধানীতে আনতে ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, যানজট ও অতিরিক্ত গরমে প্রাণিগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ফলে ক্রেতারা এসব পশু কিনতে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আর কাক্সিক্ষত দামে বিক্রি করতে না পেরে লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৮ আগস্ট) ঢাকার সবোর্চ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের আদর্্রতা ছিল ৬৯ শতাংশ। এ ধরনের গরমের কারণেই পশুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পশু চিকিৎসকরাও বলছেন, তীব্র গরমের সঙ্গে দীঘর্ যাত্রা শেষে রাজধানীতে পেঁৗছানোর পর হাটে এলে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এসব পশু।

পশু চিকিৎসকরা জানান, দূরপ্লালার পথে তীব্র রোদ-গরমে অনেক গরুর নাক-মুখ দিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে লালা ঝরা, শরীর ব্যথা, খাবারে অরুচি, পেট ফঁাপা এবং ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বড় আকারের গরুগুলোর এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তাছাড়া দুই সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত ২৬টি হাট ছাড়াও অলি-গলিতে হাট বসছে। যেখানে এসব প্রাণি ও ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নেই। ফলে শুধু পশুই নয়, তাদের সঙ্গে থাকা মানুষও অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

উত্তরবঙ্গের পাবনা জেলা থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস ও তার মামা দুই ট্রাকে ২৩টা গরু নিয়ে আসছেন রাজধানীর আফতাব নগর হাটে। তিনি জানান, শুক্রবার রাত ১০টায় উপজেলা শহর থেকে রওনা দিয়ে শনিবার বিকাল ৪টা এখানে পেঁৗছেছেন। পথে গরমের কারণে গরুর মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা ঝরে অসুস্থ হয়ে শুয়ে পড়ায় দুইবার করে যাত্রা বিরতি দিতে হয়েছে। এখন হাটে এনেও দুটি গরুর মাথায় পানি ঢালা হয়েছে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়াচ্ছেন।

একইভাবে কোরবানির পশু বিক্রির বড় হাট গাবতলী ও বসিলা রোডের গরুর হাট ঘুরেও অনেক গরুকে অসুস্থ অবস্থায় দেখা যায়। বেপারীরা বলছেন, এমনিতেই রাস্তার বেহাল দশা, তার ওপর আবার অতিরিক্ত গরমে ট্রাকবোঝাই করে দীঘর্সময় ধরে যাত্রার ধকল পোহাতে হয়েছে। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এসব হাটে পশু চিকিৎসক তুলনামূলক কম থাকায়। সেখানে স্ব-উদ্যোগে বা বেসরকারিভাবে কিছু ডাক্তার এবং ইন্টানির্ চিকিৎসক কাজ করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬টা গরুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সবগুলোই গরমে অসুস্থ ও আঘাতপ্রাপ্ত। তবে কোনোটার অবস্থাই তেমন গুরুতর নয়।

এদিকে দক্ষিণবঙ্গের গরু ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির গরু নিয়ে ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, মাগুরা, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে গরু বোঝাই করে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্য যেতে যানজটে পড়ছেন। এছাড়া দক্ষিণ অঞ্চল থেকে নৌপথে চট্টগ্রাম বিভাগে যেতে ফেরি সংকটে ঘাটে কোরবানির গরুবাহী শতাধিক ট্রাকের দীঘর্ সারি তৈরি হচ্ছে। আর গাড়ির জট থাকার কারণে পানি, খাদ্য সংকট ও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বুধবার থেকে শুক্রবার পযর্ন্ত অসুস্থ হয়ে ১৫টি গরু মারা গেছে।

কোরবানির পশু অসুস্থ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের চিফ ভেটেনারি অফিসার (সিভিও) ডা. মাকসুদুল হাসান হাওলাদার যায়যায়দিনকে বলেন, দীঘর্পথ পাড়ি দিয়ে ট্রাকে নিয়ে আসা এবং ওঠানামা করাতে গিয়েও অনেক পশু আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। গরমের মধ্যে দীঘর্ সময় দঁাড়িয়ে থেকে ভ্রমণ করার কারণে প্রাণিগুলোর মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, শরীর ব্যথা, খাবারে অরুচি, পেট ফাপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওষুধ খেলে আবার ঠিক হয়ে যায়। তাছাড়া বড় গরুর শরীরে চবির্ বেশি। কোরবানির সময় এগুলো বেশি স্ট্রেস নিতে পারে না। আবার হঠাৎ বৈরী পরিবেশে দীঘর্ ভ্রমণে ভড়কে যাওয়া, প্রয়োজনীয় পানি, খাদ্য সংকট ও গরমে প্রাণিগুলো সাধারণত ডি-হাইড্রেশনে ভোগে। হাটে মূলত প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক সময় নাক দিয়ে পানি ঝরলে অন্য জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এ সময় আক্রান্ত পশুগুলোকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামশর্ নিতে হবে। হাটে বালি বিছিয়ে দেয়া যেতে পারে। সাবর্ক্ষণিক বাতাস দেয়া, প্রচুর পানি পান করানো, সুষম খাবার দেয়া, পায়খানা-প্রস্রাব পরিষ্কার করতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল হালিম হাটে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পশু চিকিৎসক থাকার ব্যাপারে যায়যায়দিনকে জানান, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৬টি হাটে রোববার (১৯ আগস্ট) থেকে সরকারি পশু চিকিৎসক টিম থাকবে। তারা সকাল ৯টা থেকে রাত পযর্ন্ত কাজ করবে। ৫ সদস্যের এই টিমে একজন রেজিস্টাডর্ ভেটেনারিয়ান, দুইজন ইন্টানির্ ভেটেনারিয়ান, একজন সাব টেকনিক্যাল স্টাফ ও একজন চতুথর্ শ্রেণির কমর্চারী (কম্পাউন্ডার) আছেন। যারা সাবর্ক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8668 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1