বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

'ভুল' ফাল্গুনে বাসন্তী সাজে

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
সংশোধিত দিনপঞ্জি বলছে আজ পহেলা ফাল্গুন। তবে অনেকের কাছে গতকাল বৃহস্পতিবারই ছিল বসন্তের প্রথম দিন। তাই কন্যাসহ বাসন্তী রঙে সেজে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন এ দম্পতি। ছবিটি ঢাবির চারুকলার সামনে থেকে তোলা -বাংলা ট্রিবিউন

নতুন সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে পহেলা ফাল্গুন ১৩ নয়, ১৪ ফেব্রম্নয়ারিতে। কিন্তু অনেকেই জানেন না এই পরিবর্তনের খবর। দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজি ১৩ ফেব্রম্নয়ারিকে যারা পহেলা ফাল্গুন হিসেবে উদ্‌যাপন করে আসছেন, তাদের অনেকেই বৃহস্পতিবার সকাল সকাল বের হয়েছেন বাসন্তী সাজে।

বসন্তের প্রধান উৎসব হয় চারুকলায়। সে অনুযায়ী চারুকলার সামনে বাসন্তী সাজে ভিড় জমে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুদের। কিন্তু তাদের খটকা লাগে কোনো আয়োজন না দেখে।

তেমনই এক পরিবার আকিব রহমানের। স্ত্রী-কন্যাসহ বাসন্তী রঙে সেজে এসে শোনেন আজ পহেলা ফাল্গুন না। তিনি বলেন, 'সেই ছোটবেলা থেকে জানি ১৩ ফেব্রম্নয়ারি পহেলা ফাল্গুন।

আজ এসে শুনি দিনটি নাকি বদলে গেছে। বদলে যাওয়ার বিষয়টি বেশি শেয়ার করা হলে, হয়তো আমাদের এই হয়রানি হতে হতো না।' বাসন্তী আর নীল রঙের জামায় ঝলমলে রোদ্দুরেও তার কন্যার মন খারাপ, জানালেন আকিব রহমান।

পহেলা ফাল্গুন উদযাপন করতে এসেছেন আলিয়া রহমান বিন্তি। শীতের শেষে ঋতুরাজকে বরণ করবেন কাছের মানুষ নিয়ে। কিন্তু হায়! কোথাও তো কোনো আয়োজন নেই। ক্যাম্পাসের রাস্তায় তাই নিজেদের মতো করে ঘুরে বাসার দিকে রওনা দিচ্ছেন।

আবার কেউ কেউ জেনেশুনে অভ্যাসবশত ফাল্গুনের সাজে বের হয়েছেন ঘুরতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাসমনিয়া রহমান হলুদ শাড়ি পরে ফাল্গুন উদ্‌যাপন করতে বের হয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আজ পহেলা ফাল্গুন না, এটা জানি। কিন্তু আগামীকাল সময় পাব না। তাই আজ বের হয়েছি।'

ফাইয়াজ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছেন রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে। তিনি বলেন, 'বটতলায় আজ পহেলা ফাল্গুনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছি।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কাল ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা ফাল্গুন একসঙ্গে পালন করা হবে। তারপরেও আজ অনেকে বের হয়েছি। আমিও এলাম।'

এছাড়া ক্যাম্পাসে অনেককে হলুদ শাড়ি এবং হলুদ পাঞ্জাবি পরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।

এই বিভ্রান্তির বিষয়ে শিক্ষাবিদ রফিকুল ইসলাম মনে করেন, যে কোনো ধরনের কনফিউশন না রাখাটা জরুরি। তিনি বলেন, 'বাংলা ক্যালেন্ডার এবং পঞ্জিকা দুই ধরনের তথ্য দেওয়ায় সবসময়ই বিশেষ দিনগুলোকে নিয়ে কনফিউশন তৈরি হয়েছে। ফলে সেই কনফিউশন ঘোচাতে যদি এক জায়গায় আনার কোনো প্রক্রিয়া হয়, সেটিকে আমাদের স্বাগত জানানো উচিত। একটু সময় লাগবে, কিন্তু আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠব।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সমাজ গবেষক মেজবাহ কামাল মনে করেন, সময়ে-অসময়ে প্রয়োজনের সঙ্গে মিলিয়ে পরিবর্তন হতে পারে। তবে সেসব ক্ষেত্রে কখনোই তাড়াহুড়া না করার পরামর্শ দেন তিনি। মেজবাহ কামাল বলেন, 'যেকোনো পরিবর্তনের পর সেই বিষয়ে যথাযথভাবে প্রচার এবং সচেতনতার কাজটি করা খুব জরুরি। তা না-হলে এক ধরনের কনফিউশন থেকে যায়।' ঘন ঘন যেন পরিবর্তন না করতে হয়, সেদিকেও নজর দিতে বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদের সভায় ২০২০ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছুটির তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, দীর্ঘদিনের চেনা ১৩ ফেব্রুয়ারি উদ্‌যাপিত পহেলা ফাল্গুন দিনটি বদলে গেছে।

আর এই বদলে যাওয়া খুব বেশি প্রচার না হওয়ার কারণে গতকাল অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন। এমন একজন ফয়জুর রহমান। পহেলা ফাল্গুনের আনুষ্ঠানিকতা দেখে তারপর সকাল ৯টায় অফিস ধরবেন বলে সকাল সকাল বাসা থেকে বের হয়েছেন। কিন্তু ক্যাম্পাসে গিয়ে বুঝতে পারেন, কোনো একটা ভুল হয়েছে। অনেক প্রশ্ন মনে নিয়ে অফিসে গিয়ে তারপর ফেসবুক খুলে বুঝতে পারেন, আসলে ভুলটা কোথায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সকাল থেকে এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর এই দিনে মেমোরি শেয়ার করেন অনেকেই। অনেককে দেখা যায় পহেলা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা জানাতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88508 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1