শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এসিআর জালিয়াতি করে পদোন্নতির পাঁয়তারা

নূর মোহাম্মদ
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) ভয়াবহ জালিয়াতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তি না দিয়ে উলটো পদোন্নতি দেওয়ার পাঁয়তারা করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। এসিআর জালিয়াতির ঘটনা তদন্তাধীন অবস্থায় সম্প্রতি অতি গোপনে তাদের পদোন্নতির প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তদন্তাধীন অবস্থার চারজন কর্মকর্তা বিদেশ সফর করেছেন। এ নিয়ে শ্রম ও কমসংস্থান মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদোন্নতির পুরো প্রক্রিয়াটি অতি গোপনীয়তার সঙ্গে করতে চাচ্ছে অধিদপ্তর। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নির্দেশনা না মেনে সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা ছাড়াই অভিযুক্ত সেই ৪৮ কর্মকর্তার পদোন্নতির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পুনরায় পাঠিয়েছে অধিদপ্তর।

জানা গেছে, সারাদেশে কলকারখানা পরিদর্শনের জন্য গঠিত এ প্রতিষ্ঠানটির ৪৮ কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য গত বছর এসিআরে ভয়াবহ প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়। এসিআরে নম্বর বাড়ানো ও জাল স্বাক্ষর করে তাদের পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ার পর তা অনুমোদন না করে তা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায় পিএসসি। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব একেএম রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন-কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জয়নাল আবেদীন ও মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রুহুল আমীন। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও একটু দেরিতে প্রতিবেদন জমা হয়। এরপর গত ২৯ ডিসেম্বর এসিআর জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে জনপ্রশাসন, পিএসসি ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির তদন্ত চলকালীন গত ৯ জানুয়ারি সেই ৪৮ জন কর্মকর্তার পদোন্নতির প্রস্তাব পুনরায় অতি গোপনীয়তায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠায় কলকারখানা অধিদপ্তর। সেই প্রস্তাব কঠোর গোপনীয়তায় পিএসসিতে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে এসিআর জালিয়াতির বিষয়টি দ্রম্নত তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এই চিঠি দেন।

এ ব্যাপারে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম যায়যায়দিনকে বলেন, 'পদোন্নতির প্রস্তাবের এ বিষয়টি আমার জানা নেই। ফাইল দেখে বলতে হবে। তদন্ত শেষ হলে দুদকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাব।'

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর ২৪ জুন সরকারি বিধিবিধানের (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি, বার্ষিক গোপনীয় অনুশাসন নীতিমালার) কোনরূপ তোয়াক্কা না করে কলকারখানা অধিদপ্তর দ্বিতীয় শ্রেণির ৪৮ জন শ্রম পরিদর্শককে প্রথম শ্রেণির সহকারী মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতির জন্য পিএসসিতে প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু পদোন্নতির প্রস্তাবে এসিআর জালিয়াতি, সকল ফিডার পদধারীদের সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা না থাকাসহ নানা অনিয়মের কারণে ২৪ জুলাই মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায় পিএসসি। নিয়োগবিধি অনুযায়ী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সিল ও স্বাক্ষরসংবলিত প্রমাণকসহ সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা, জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ সংক্রান্ত সরকারের প্রকাশিত সব বিধি-বিধান ও পদ্ধতি অনুসরণ করে তালিকা প্রস্তুত করে দিতে বলে পিএসসি। কিন্তু অধিদপ্তর সেটি না করে তড়িঘড়ি করে পুনরায় পদোন্নতির উদ্যোগ নিয়েছে।

এ ব্যাপারে উপ-মহাপরিদর্শক জোবেদা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কোনো কিছু জানার থাকলে মহাপরিদর্শক বা জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। বক্তব্যের জন্য মহাপরিদর্শককে একাধিবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিএসসির নির্দেশনা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ এবং বিধিবিধান ও পদ্ধতি অনুসরণ করে ফিডার পদধারী সব শ্রম পরিদর্শকের সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সিল ও স্বাক্ষর করে প্রত্যয়ন করতে বলা হয়। কিন্তু সে নির্দেশনা না মেনে আগের জ্যেষ্ঠতা তালিকাই পদোন্নতির জন্য পুনরায় পাঠানোকে রহস্যজনক বলছেন পদোন্নতি-বঞ্চিতরা। তাদের পদোন্নতি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে বাদ পড়বেন ফিডার পদধারী পদোন্নতি প্রত্যাশী ৩৩তম বিসিএস থেকে নিয়োগ পাওয়া ৪৩জন শ্রম পরিদর্শক। এ ছাড়া সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি ৩৪তম, ৩৫তম বিসিএস থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের।

জানা গেছে, এসিআর জালিয়াতি করা সেই কর্মকর্তাদের পদোন্নতির প্রস্তাব পুনরায় পাঠানোয় গত ৫ ফেব্রম্নয়ারি প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পিএসসির সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কলকারখানার মহাপরিদর্শককে শোকজ করেছে। এ ছাড়া কেন সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা করা হবে না জানতে চেয়ে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাদপড়া শ্রম পরিদর্শকদের একাংশ পদোন্নতির স্থগিতাদেশ চেয়ে প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যাল ও পিএসসির চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন।

অন্যদিকে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে বাদ পড়ায় সংক্ষুব্ধ ৫৭ জন শ্রম পরিদর্শক প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যালে মামলা করেছেন। এ মামলা তুলে নিতে তাদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে বাদী পক্ষের কয়েকজনকে প্রত্যন্ত ও দুর্গম স্থানে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় বাদী পক্ষ হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত থাকায় শ্রম পরিদর্শক ফয়জুর রহমান ও তারিকুল ইসলামের নামে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। কলকারখানা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের দুর্নীতির একটি ভিডিও প্রকাশ করার অভিযোগে শ্রম পরিদর্শক শেখ কামরুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনার অভিযোগে নাফিজ হারুন অমিকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88629 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1