শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নগদ টাকাই ভরসা সবার

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

চলমান করোনাভাইরাস সংকটের কারণে নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনার কথা বলা হলেও গ্রাহকদের মধ্যে হচ্ছে এর উল্টোটা। করোনা প্রতিরোধের জন্য ভোগ্যপণ্য, প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি মানুষ অতিরিক্ত নগদ টাকা হাতে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোতে ভিড় জমিয়েছে।

বিশ্লেষকরা নগদ টাকা ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করলেও তারা বলছেন, যে কোনো ধরনের সংকটে হাতে নগদ টাকা থাকলে মানুষ নিরাপদ বোধ করেন।

করোনা মোকাবিলায় সরকার টানা ১০ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। গত বুধবার থেকে ঢাকাসহ সারাদেশের ব্যাংকগুলোয় টাকা তুলতে ভিড় করেছিলেন গ্রাহকরা।

এই প্রতিবেদক রাজধানী বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি ব্যাংকের পাঁচটি শাখা পরিদর্শন ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকটি শাখায় যোগাযোগ করে এ ধরনের তথ্য পেয়েছেন।

মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন একজন ব্যাংকার গত বুধবার করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক সংকটের ভয়ে এক লাখ টাকা তুলেছেন। ওইদিন ব্যাংকগুলোর পূর্ণ কার্যদিবস ছিল।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে দেশের ব্যাংকগুলো ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল কর্মদিবসে চার ঘণ্টা ব্যাংক খোলা রাখবে। লেনদেন করা যাবে দুই ঘণ্টা, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।

স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, মানুষ সামগ্রিকভাবে উদ্বিগ্ন হয়েছে তাদের স্থায়ী ও পেনশন জমা স্কিম মেয়াদপূর্তির আগেই ভাঙিয়ে ফেলেছেন।

এদিকে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৩ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে রেপো সুদহার বিদ্যমান বার্ষিক শতকরা ৬ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস করে শতকরা ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করেছে। বাজারে ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরবরাহের জন্য নগদ জমা সংরক্ষণ হার (সিআরআর) ৫০ পয়েন্ট বেসিসে হ্রাস করে ৫ শতাংশ করেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে নগদ টাকার সংকট হবে না বরং মানুষ যেভাবে নগদ টাকা তুলছে, এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নগদ টাকা থেকে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। নিউমোনিয়া জাতীয় ভাইরাস সংক্রমণের উৎস হতে পারে নগদ টাকা। যা বিশ্বব্যাপী আগুনের মত ছড়িয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে জনগণের উচিত নগদ টাকাবিহীন লেনদেন করা।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মানুষ সরকারের সাধারণ ছুটিতে গ্রামে গেলেও যেকোনো ধরনের সংকটে হাতে নগদ টাকা থাকলে নিরাপদ বোধ করেন।

জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে নোট বেশি নোংরা হয়। নোট পরিষ্কার করতে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ উদ্যোগও নিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে অধিকাংশ নোট দুই সপ্তাহের জন্য তুলে নিয়েছে। যেসব নোটে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে, সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হবে।

করোনাভাইরাস ছড়ানোর ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভও নোট পৃথক করার উদ্যোগ নিয়েছে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নোটের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর কারণে নোট ধ্বংস করেছে।

বাংলাদেশে ৪৮ জন আক্রান্ত এবং পাঁচজন মারা গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোট পৃথকে কোনো উদ্যোগ নেয়নি; কারণ আমাদের দেশ এখনো নগদ টাকার ওপর অধিক নির্ভরশীল। বাজারে অর্থের যোগান ও সরবরাহের সঙ্গে নগদ টাকার শক্ত সম্পর্ক রয়েছে।

এ বিষয়ে মিউচু্যয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নগদ টাকা তোলার চাপ বেড়েছিল। নগদ টাকার ব্যবহার ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করে জানিয়ে গ্রাহকদের বারবার ডিজিটাল চ্যালেন ব্যবহার করার অনুরোধ করেছি।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, গ্রাহকের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সাধারণ ছুটিতে আমাদের ১৩৮টি শাখার মধ্যে ১২০ খোলা থাকবে। গ্রাহক যেকোনো সময় নগদ টাকা পাবেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা ডিজিটাল লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94529 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1