বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইউএস-বাংলার পাইলট ছিলেন মানসিকভাবে বিপযর্স্ত

যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের পাইলট আবিদ সুলতান ‘ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মারাত্মক মানসিক চাপ ও উদ্বেগের’ মধ্যে ছিলেন এবং ওই অবস্থায় তিনি একের পর এক যেসব ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন, তার পথ ধরেই গত মাচের্ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তজাির্তক বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিএস-২১১ বিধ্বস্ত হয় বলে এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসার কথা জানিয়েছে নেপালের ইংরেজি দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট।

ওই দুঘর্টনার কারণ অনুসন্ধানে নেপাল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনের ওই প্রতিবেদনের অনুলিপি হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে, পাইলট আবিদ সুলতান ত্রিভুবনে নামার প্রস্তুতির সময় বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ‘অসত্য’ তথ্য দিয়েছিলেন; এক ঘণ্টার ওই পুরো ফ্লাইটে তিনি ককপিটে বসেই ধূমপান করছিলেন।

ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে রওনা হয়ে গত ১২ মাচর্ দুপুরে কাঠমান্ডুতে নামার সময় দুঘর্টনায় পড়ে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১। আরোহীদের মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়, যাদের ২৭ জন ছিলেন বাংলাদেশি।

কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে, ফ্লাইটের পুরো সময়টায় প্রধান বৈমানিক আবিদের আচরণ তার স্বাভাবিক চরিত্রের সঙ্গে ‘সামঞ্জস্যপূণর্ ছিল না’, এ বিষয়টি আগেই নজরে আনা উচিত ছিল বলে নেপালি তদন্তকারীদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে ওই তদন্ত দলে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে থাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃর্পক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট অপারেশন কনসালটেন্ট সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনটি ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনটি দেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূণর্ ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য। এমন কোনো কিছুই এখনো তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসেনি।’

এই তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে ইউএস-বাংলা কতৃর্পক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি।

কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে, ইউএস-বাংলার জনসংযোগ বিভাগের জিএম কামরুল ইসলাম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে নেপালি পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অবতরণের সময়ের ছয় মিনিট আগে পাইলট আবিদ সুলতান ত্রিভুবনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে তার উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো ও লক করার কথা জানিয়ে বলেন- ‘গিয়ারস ডাউন, থ্রি গ্রিনস।’

কিন্তু ওই ফ্লাইটের কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ যখন অবতরণের আগে শেষবারের মতো সব প্রস্তুতি মিলিয়ে দেখেন, তখন দেখা যায় ল্যান্ডিং গিয়ার তখনো নামানো হয়নি। এর কয়েক মিনিটের মাথায় ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি রানওয়ের একপাশে বিধ্বস্ত হয় এবং অগ্নিকুÐে পরিণত হয়।

শতাধিকবার ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের অভিজ্ঞতা যার রয়েছে, সেই আবিদ সুলতানের পরিচালনায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি কীভাবে বিধ্বস্ত হলো, সে প্রশ্ন উঠেছিল আগেই।

কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে, দুঘর্টনার দিন ঢাকা-কাঠমাÐু ফ্লাইটের ককপিট বসে বার বার ধূমপান করেন আবিদ। কিন্তু তিনি কখনো ধূমপানের অভ্যাসের কথা ইউএস বাংলা কতৃর্পক্ষের কাছে বলেননি। এ থেকে তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, ককপিটে বড় ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন পাইলট।

‘ককপিটের ভয়েস রেকডার্র পরীক্ষা করার পর আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, ক্যাপ্টেন বড় ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। ঘুমের অভাবে তিনি ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত ছিলেন বলেও মনে হয়েছে।’

নেপালের পত্রিকাটি লিখেছে, প্রায় এক ঘণ্টার ওই ভয়েস রেকডের্ কো-পাইলট পৃথুলার সঙ্গে কথোপকথনে পাইলট আবিদের মানসিক অস্থিরতা এবং পরিস্থিতি সম্পকের্ তার অসতকর্তার বেশ কিছু নমুনা পাওয়া গেছে।

‘এছাড়া তিনি এক নারী সহকমীর্র বিষয়েও বেশ কিছু ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেন, যিনি ইউএস বাংলাতেই কোপাইলট হিসেবে কাজ করেন। ওই নারী সহকমীর্ ইন্স্ট্রাক্টর হিসেবে আবিদের সুনাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাদের মধ্যে সম্পকর্ কেমন ছিল, সেই আলোচনা ছিল ফ্লাইটের সময়ের একটি বড় অংশজুড়ে। ওই ফ্লাইটের কো পাইলট পৃথুলা ছিলেন আবিদের গল্পের একজন নীরব শ্রোতা।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই আলোচনার এক পযাের্য় আবিদ অনেকটাই ভেঙে পড়েন এবং বলেন, সেই নারী সহকমীর্র আচরণে তিনি খুবই আহত হয়েছেন এবং কেবল তার কারণেই তিনি কোম্পানি ছেড়ে দিচ্ছেন।

নেপাল এয়ারলাইন্সের একজন বৈমানিককে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি লিখেছে, ফ্লাইট উড্ডয়ন বা অবতরণের প্রস্তুতির সময় ককপিটে সহকমীের্দর মধ্যে ব্যক্তিগত আলোচনা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ওই সময় পাইলটের পুরো মনোযোগ উড়োজাহাজ চালনায় নিবদ্ধ করার নিয়ম।

তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে, ক্যাপ্টেন আবিদকে চাকরি দেয়ার সময় ইউ-এস বাংলা তার আগের মেডিকেল হিস্ট্রি পযাের্লাচনা করেনি। আর ২০০২ থেকে ২০১৮ সাল পযর্ন্ত সময়ে কোনো মেডিকেল পরীক্ষায় তার হতাশা বা অবসাদে ভোগার কোনো তথ্য কখনো আসেনি।

তবে আবিদের মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদনে তার ধূমপানের অভ্যাস নিয়ে ‘অসঙ্গতি’ রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে কাঠমান্ডু পোস্ট।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মেডিকেল পরীক্ষার সময় পূরণ করা ফরমে আবিদ বলেছেন, তিনি কখনই ধূমপান করেননি। ২০১৫ সালে লিখেছেন, তিনি একসময় ধূমপান করলেও ২০১০ সালে ছেড়ে দিয়েছেন। আবার ২০১৬ ও ২০১৭ সালে লিখেছেন, তিনি কখনই ধূমপান করেননি।

রিপোটর্ ‘ভিত্তিহীন-মনগড়া’: ইউএস-বাংলা

এদিকে নেপালের ‘দি কাঠমান্ডু পোস্ট’ পত্রিকায় ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ও দুঘর্টনা সম্পকের্ কিছু তথ্য মনগড়া ও ভিত্তিহীন বলে অভিযোগ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কতৃর্পক্ষের।

সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এ বিজ্ঞপ্তিতে ইউএস-বাংলা কতৃর্পক্ষ জানিয়েছে, আন্তজাির্তক নিয়ম অনুযায়ী (আইকাও প্রণোদিত) যেকোনো দুঘর্টনা-পরবতীর্ পূণার্ঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ পযর্ন্ত এ ধরনের অসমথির্ত মতামত প্রকাশ কোনো গণমাধ্যমের কাছেই কাম্য নয়। আইকাও’র এনেক্স ১৩-এর নিয়মানুসারে নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃর্পক্ষ এবং বিমান চলাচল বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃর্পক্ষের সহযোগিতায় এ দুঘর্টনা বতর্মানে তদন্তাধীন।

‘একটি দুঘর্টনা তদন্তাধীন অবস্থায় এ ধরনের একটি প্রতিবেদন দুটি অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। এক. অযাচিতভাবে এয়ারলাইন্স ও ক্রুদের ভাবমূতির্ ক্ষুণœ করা। দুই. দুঘর্টনা ঘটার প্রকৃত কারণ আড়াল করার চেষ্টা।’

‘প্রতিবেদনে প্রকাশিত কোনো তথ্যের ভিত্তি নেই। কারণ এ দুঘর্টনা সম্পকের্ গঠিত তদন্ত কমিটি এখন পযর্ন্ত অফিসিয়ালি কোনো তদন্ত প্রতিবেদন বা কোনো বক্তব্য দেননি। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কতৃর্পক্ষ ‘দি কাঠমান্ডু পোস্ট’-এর প্রতিবেদনকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের শুভাকাক্সক্ষীদের এ ধরনের মনগড়া ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদনে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<9515 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1