শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সহায়তা পাচ্ছে নিম্নবিত্ত অসহায় মধ্যবিত্ত

হাসান আরিফ
  ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
রাজধানীর জিরো পয়েন্টে একটি বেসরকারি সংগঠন অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে। ছবিটি শুক্রবার তোলা -যাযাদি

বাংলাদেশে ১৯৯০ সালের পর খাদ্যনিরাপত্তায় প্রশংসনীয় উন্নতি ঘটেছে। এরপরও জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি ছয়জনের একজন ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। তাদের ভাগ্যে জুটছে না পর্যাপ্ত খাদ্য। এই পরিস্থিতির মধ্যেই সারা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে নোভেল করোনাভাইরাস। এ থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশ। দেশে ২৬ মার্চ থেকে টানা ছুটি চলছে। জনসাধারণকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। মধ্যবিত্ত আর দরিদ্র মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের ঘরে চুলা জ্বলছে না। এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সব থেকে বেশি অসুবিধায় আছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তাদের কথা কেউ ভাবছেন না। তারা প্রায় অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছে। তাদের অনেকের ঘরেই খাবার নেই। তারা কারও কাছে বলতেও পারছে না। চরম বিপদগ্রস্ত হয়ে দিন যাপন করছেন তারা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমরা এখনো জানি না করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কতদিন প্রলম্বিত হবে। তাই এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় আহারের ব্যবস্থা করা।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে- এটা এখন সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশও এই নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত নয় বলে সরকারি ভাষ্য। বলা হচ্ছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ধারণা করা হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের ঘরে চলে আসতে পারে। চলতি বাজেটে যা ধরা হয়েছে ৮ শতাংশের ওপরে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাজনিত সংকটের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্পখাত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এসব শিল্পের শ্রমিকগণ সমস্যায় পড়েছেন। এমতাবস্থায়, শ্রমিক ভাই-বোনদের সমস্যার কথা চিন্তা করে বাড়িভাড়া সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার জন্য বাড়ি মালিকদের প্রতি অনুরোধ করেছেন। সবাই সহানুভূতিশীল হলে খেটে খাওয়া শ্রমিক ভাই-বোনেরা কিছুটা স্বস্তিতে বর্তমান সংকট উত্তরণে সক্ষম হবেন এবং আগামীতে রপ্তানি খাতে বেশি অবদান রাখবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

জানা গেছে, অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নিম্ন্নআয়ের ব্যক্তিদের 'ঘরে-ফেরা' কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেওয়ার কথাও সরকার থেকে বলা হয়েছে। বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এসবই করা হচ্ছে দরিদ্র মানুষের জন্য, যারা দিন এনে দিন খায়। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান আর ব্যক্তি উদ্যোগেও তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

দরিদ্র মানুষ সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা পেলেও মধ্যবিত্ত মানুষ প্রায় অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। এই শ্রেণির অনেকের ঘরে খাবার নেই। তারা কারও কাছে বলতেও পারছেন না। তাই এই শ্রেণির মানুষ চরম বিপদগ্রস্ত হয়ে আছেন।

গত ৩১ মার্চ রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ার এক বাসিন্দা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি থানার অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে খাদ্য সাহায্য চেয়েছেন। ওই ব্যক্তি লিখেছেন, 'স্যার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার বাসায় চাল, ডাল, তেলসহ কিছু পাঠানো যাবে কি? বিকাল থেকে না খেয়ে থাকতে হবে। হাতে কোনো টাকা-পয়সা নেই। বিদু্যৎ লাইনও বন্ধ হয়ে যাবে, মাত্র ১২ টাকা ব্যালেন্স আছে। এই মেসেজ পেয়ে ডিএমপির অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার মাহমুদা আফরোজ লাকী দ্রম্নত পদক্ষেপ নিয়েছেন। ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুরো ঘটনাটা নিজের ফেসবুকে লিখে শেয়ার করেছেন মাহমুদা আফরোজ লাকী।

এ তো মিরপুরের এক বাসিন্দার ঘটনা। নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকার এক ভদ্রলোক তার বন্ধুকে কল করে বলেছেন, বন্ধু তোমরা তো বিভিন্ন মানুষকে সহায়তা করছ, পারলে আমাকেও সহায়তা করো। পরে সেই বন্ধুর বাসায় বন্ধু চাল, আলু আর ডাল নিয়ে যায়। বাসার দরজা খুলতেই বাসার শিশুরা সহায়তার ব্যাগ নিয়ে দ্রম্নত মায়ের হাতে তুলে দেয়। ওই ভদ্র লোকের ভাষ্য ছিল এরকম, তারা ওই বাসায় থাকা অবস্থাতেই তার বন্ধুর স্ত্রী খাবার তৈরি করে বাচ্চাদের খেতে দিয়েছিল। তারা হয়তো কয়েক বেলা না খেয়ে থেকেই তাকে ফোন করে সহায়তা চেয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ শহরের এক মোয়াজ্জিন বিভিন্ন বাসায় টিউশনি করতেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে তার টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে। বেতনের টাকায় সংসার চালাতে পারছেন না। তিনিও তার সংসার চালানোর জন্য এলাকার এক ব্যক্তির কাছে সহায়তা চেয়েছেন। এরকম কত পরিবার না খেয়ে আছে তার কোনো হিসাব হয়তো কারো জানা নেই বা তাদের খবর প্রকাশও পাবে না।

এই শ্রেণির পরিবারকে ভিক্ষুক, ছিন্নমূল, আশ্রয়হীন কোনো নামই দেওয়া যাবে না। তাদের কেউ মাদ্রাসার শিক্ষক, কেউ এলাকায় ভাড়া বাসায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের কোচিং করাত, কেউ বা চীন-ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসে, সেগুলো বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করত। মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করে সম্মানের সঙ্গে সংসার চালাতো। নিজেরাও পথেঘাটে ভিক্ষুকদের সাহায্য করত। কিন্তু সবকিছু বন্ধ থাকায় আজ তার নিজের সংসার চলছে না। বলতে পারছে না আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের। কারণ তারাও মোটোমুটি এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে। তারা পথে বের হয়ে বলতে পারছে না 'আমার শিশুটি কাঁদছে, ঘরে খাবার নেই'। তাই অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে তাদের দিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95336 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1