শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় দাবদাহে রোগের প্রাদুর্ভাব

আতিয়ার রহমান, খুলনা
  ২৭ জুন ২০১৯, ০০:০০

প্রায় মধ্য আষাঢ়ের বৃষ্টিহীন তপ্ত রোদে পুড়ছে খুলনা। আষাঢ় আজ কাঠফাটা চৈত্রের ছদ্মবেশে পুড়িয়ে চলছে দিগ্‌বিদিক। টানা কয়েকদিন তাপমাত্রা বাড়ায় তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ নগরজীবন। সেইসঙ্গে পানি সংকটে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। দাবদাহের কারণে তামাটে বর্ণ ধারণ করেছে সবুজ প্রকৃতি।

অসহনীয় গরমে সড়কে পথচলা থেকে শুরু করে বাসা বাড়িতেও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। গতকাল বুধবার সকাল থেকে শুরু করে গোধূলি লগ্নের আগ পর্যন্ত সমানে তাপ বিলাচ্ছে সূর্য। এতে অস্থির হয়ে পড়ছে সবাই। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা থাকলেও সে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা মিলছে না। তীব্রগরমের মধ্যে পানির অপ্রতুলতায় চরম অসুবিধায় পড়েছেন নগরবাসী। একটু প্রাণ জুড়াতে শিশু-কিশোররা নদী কিংবা পুকুরের পানিতে মেতে উঠছে দুপুর হওয়ার সাথে সাথেই।

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক বিকাশ রায় বলেন, মেঘদূত-এ আষাঢ়ের বৃষ্টি হয়েছে বিরহীর জন্য অত্যন্ত বেদনাময়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় মেঘমেদুর বর্ষায় সকলকে ঘরের বাইরে যেতে মানা করেছিলেন। সেসব এখন শুধু বইয়ের পাতায় শোভা পায় যেন। এখন আষাঢ়ের মেঘে চারদিক ছেয়ে যাওয়ার বদলে চৈত্রের দাবদাহ। সকাল থেকেই ঘর্মাক্ত নগরী যেন ক্লান্তিতে ঝিমায়। গ্রামের চাষিরা পানিশূন্য মাঠের পানে চেয়ে চাষের দুরাশা নিয়ে হতাশায় ঝিমিয়ে নেয় গাছতলায়। বাঙালির জীবনের ঐতিহ্যে মিশে থাকা আষাঢ় আজ কাঠফাটা চৈত্রের ছদ্মবেশে পুড়িয়ে চলেছে দিগ্‌বিদিক। প্রচুর গরমে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সবজির ক্ষেত নুইয়ে পড়ছে বা সবুজ সবজির বাগানের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানা গেছে। গরমে কাজ করা দায় বিধায় কৃষি কাজে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তীব্র গরমে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীকুলও অস্থির হয়ে উঠছে।

এ ছাড়া নগরীর বস্তি বা কম ভাড়ার টিনের বাসায় বসবাস করা মানুষরা ঘর ছেড়ে বাইরে কোনো কিছুর ছায়ায় পাখা হাতে নিয়ে বসে সময় পার করছে। দাম ও বিক্রি বেড়েছে হাতপাখার। আষাঢ়েও জমজমাট বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ফ্যান ও এসি।

এদিকে ভ্যাপসা গরমে ডায়েরিয়া ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন গরমজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে হাসপাতালগুলোয়। সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। গরমে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

ময়লাপোতা এলাকার মামুন নামের এক শ্রমিক বলেন, রোদে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। গরমে অস্থির হয়ে পড়ছি। সূর্যের তাপে সারা দিন যেমন গরম রাতেও তেমন গরম।

তিনি জানান, গরমে সারা রাত ঘুমানো যাচ্ছে না। বাসার ছোট ছেলেমেয়েরা তো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

সাত রাস্তর মোড়ে কর্মরত কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, আষাঢ়ে এত গরম কখনো দেখিনি। প্রচুর গরম। তারপরেও দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে। ছাতায় রোদ ঠেকালেও গরম কমাতে পারছে না।

চিকিৎসকরা গরমে খোলা খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়াও রোদের হাত থেকে বাঁচতে বাইরে ছাতা ও পানি সাথে রাখার তাগিদ দিয়েছেন।

খুলনা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক যায়যায় দিন কে বলেন, তীব্র গরমে হাসপাতালে রোগীর ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও ভাইরাস জ্বর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।

খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বুধবার বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আগামী দুই দিনের মধ্যে খুলনাঞ্চলে স্বস্তির বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলেই কমে যাবে তাপমাত্রাও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<55472 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1