পিরোজপুরের কঁচা নদীতে ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নিমার্ণকে ঘিরে কমর্ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকেরা। চলছে ফিল্ড নিমাের্ণর কাজ। এখানে কাজ করছে চীনা প্রকৌশলী এবং বাঙালিরা। বালি ভরাট করে শেট নিমাের্ণর জন্য দম ফেলার সময় মিলছে না প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মেশিন ও মালবাহী যানবাহনের আনাগোনায় কমর্মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে এখানে। সেতুটির নিমার্ণসামগ্রী রাখা ও শ্রমিকদের থাকার জন্য এই ফিল্ড তৈরি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আজমির হোসেন জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠান যে কাজ পেয়েছে তা দ্রæতগতিতে করার চেষ্টা করছি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য।
চীনা অনুদান সহায়তায় বাস্তবায়িতব্য বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের বেকুটিয়া কঁচা নদীর ওপর ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নিমাের্ণর জমি অধিগ্রহণ, ভ‚মি উন্নয়ন, স্থাপনা অপসারণের প্রাথমিক কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। চীন সরকারের অনুদানে এই গুরুত্বপূণর্ সেতুটি নিমির্ত হচ্ছে শুনে বরিশাল এবং খুলনা বিভাগের কোটি মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক অন্য রকম উৎসাহ-উদ্দীপনা। স্বপ্নের সেতু পদ্মার সঙ্গে প্রায় একই সময় শেষ হবে বেকুটিয়া সেতুর নিমার্ণকাজ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান গত ৭ নভেম্বর প্রেরিত এক পত্রে দ্রæত সংযোগ সড়ক নিমাের্ণর জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পিরোজপুরের নিবার্হী প্রকৌশলীকে বলেছেন।
২০১৬ সালের ১৬ জুন রাজধানীর সড়ক ভবনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইংয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পরিমল বিকাশ সূত্রধর এবং চীন সরকারের পক্ষে আন্তজাির্তক অথৈর্নতিক সহযোগিতা এজেন্সির ডেপুটি ডিরেক্টর জিয়াং জিং ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নিমাের্ণর চ‚ড়ান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল মেয়াদে সেতুটি নিমার্ণ করা হবে। ৯৯৮ মিটার দৈঘের্্যর সেতুটি নিমাের্ণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৫ কোটি টাকা চীন সরকার দেবে। মূল সেতুর দুইদিকের সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণের মূল্য এবং সড়ক নিমাের্ণর খরচ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার।
এ ছাড়া নিমার্ণকাজে বিদ্যুৎ, মাটিভরাট এবং চীনের প্রকৌশলীবৃন্দসহ চীনা কমীের্দর আবাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। পিরোজপুর শহরে ৫ কিলোমিটার পূবের্ কঁচা নদীর ভাটিতে বেকুটিয়া ফেরিঘাটের সন্নিকটে এ সেতু নিমাের্ণর প্রাথমিক কাজ চলছে। বেকুটিয়া ফেরিঘাট থেকে ৮শ’ ৩৫ মিটার দক্ষিণে এবং কাউখালী প্রান্তের ফেরিঘাট থেকে ১১৫ মিটার উত্তরে ১.৪৯ কিলোমিটার দীঘর্ ও ১৩.৪ মিটার প্রশস্ত এবং ব্রিজের উভয়পাশে ১.৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নিমার্ণ করা হবে। যাবতীয় নদী শাসন, আবহাওয়া বাতাসের গতি নদীভাঙন বিষয়ে জরিপের জন্য চীনা বিশেষজ্ঞদল কয়েকবার এসে এলাকা ঘুরে সবকিছু চ‚ড়ান্ত করেছে। এদিকে দীঘির্দনের সীমাহীন দুভোর্গ লাঘব হতে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখেমুখে এখন পদ্মা ও বেকুটিয়া সেতু। বেকুটিয়া সেতুর কাজ সমাপ্ত হলে বেকুটিয়া নৈকাঠী ও চরখালী-টগড়া ফেরি সাভিের্সর আর কোনো প্রয়োজন হবে না। এদিকে দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রা এবং সমুদ্রসৈকত সাগরকন্যা কুয়াকাটার সঙ্গে সবর্বৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল এবং সমুদ্রবন্দর মংলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে এই বেকুটিয়া সেতুটি।