বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে এবার ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকদের পদভারে মুখরিত। কখনো ভারী বর্ষণ আবার কখনো হাল্কা বর্ষণে অনেক পর্যটক সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরে ঘুরে সাগরের উত্তাল সৌন্দর্য অবলোকন করছেন।
সৈকতে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। তাতেও বসে নেই ভ্রমণে আসা লাখো পর্যটক। অনেকে নিজের ছবি তুলেছেন। কেউ আবার প্রিয়জনদের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন। অনেকে সমুদ্রের কোমর পানিতে নেমে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে স্নান করেছেন। দিচ্ছেন বালুচরে গড়াগড়ি আর ফুটবল ও ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত।
হোটেল মালিকরা বলছেন, ৫ আগস্ট থেকে পর্যটকদের আসা শুরু হয়েছে। ১৭ আগস্ট পর্যন্ত টানা ছুটিতে কক্সবাজারে ভিড় লেগেই থাকবে। তখন হোটেল-রেস্তোরাঁসহ পর্যটন খাতে ব্যবসা হবে ৩০০ কোটি টাকার। মঙ্গলবার সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের ছুটি কাটাতে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ভিড় করছেন লাখে লাখো পর্যটক। দীর্ঘদিন প্রচন্ড গরম থাকার পর এ বৃষ্টিতে পর্যটকের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বরং এ বৃষ্টিতে আবার অনেকে বাড়তি আনন্দও পাচ্ছে। সৈকতে লাবণী পয়েন্ট ছাড়াও ইনানীর পাথুরে সৈকত, পাহাড়ি ঝর্ণা হিমছড়ি, ডুলাহাজারা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ মন্দিরও পর্যটকে মুখরিত।
টু্যর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, এই কোরবানি ঈদে বৃষ্টির আমেজ থাকায় পর্যটকদের ভ্রমণটা আনন্দের মাত্র আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েক লাখ পর্যটক ছাড়িয়েছে। পর্যটকরা সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি ছুটছেন মেরিন ড্রাইভ সৈকত দিয়ে দরিয়ানগর পর্যটনপলস্নী, পাহাড়ি ঝরনার হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত ইনানী, টেকনাফ সৈকত, মগ জমিদার কন্যার প্রেম কাহিনির মাথিন কূপ, নাফ নদীর জালিয়ারদিয়া, রামুর বৌদ্ধপলস্নী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ইত্যাদি। কিন্তু সমুদ্র উত্তাল থাকায় প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, সোনাদিয়া ভ্রমণ বন্ধ আছে।
ঢাকার পর্যটক দম্পতি ইসমত আরা খোরশেদ আলম বলেন, কোরবানি ঈদের পরেই এই বর্ষায় উত্তাল সমুদ্র সৈকত দেখতেই তারা কক্সবাজার আসেন। এই ধরনের আবহাওয়াটা খুবই ভালো লাগছে। কক্সবাজারে বেড়াতে এসে সাগরের তাজা মাছ আর খাবারে নানা রকম মুখরোচক খাবার খান বলে জানান তিনি।
সিলেটের স্বপরিবারে আসা আমিনুল হক চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে তিনি ভ্রমণ করে সমুদ্র দেখেছেন। কিন্তু দেশে ভ্রমণের জন্য কক্সবাজার হচ্ছে স্বাস্থ্যনগরী, বিষমুক্ত একটি জায়গা। এখানেই আমরা একসঙ্গে নীল সাগর এবং সবুজ পাহাড় আর সাগরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মসৃণ মেরিন ড্রাইভ দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়। সবাইকে নিয়ে অনেক ভালো সময় কাটাচ্ছি আমরা। সবচেয়ে বড় বিষয়, এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব ভালো।'
টু্যরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিলস্নুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে টানা ১২ দিনের ছুটিতে প্রায় ৩/৪ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে কক্সবাজারে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় টু্যরিস্ট পুলিশের ১০১ সদস্য সমুদ্র সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ, চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক এলাকায় সার্বক্ষণিক (দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা) নিরাপত্তা থাকবে দায়িত্বরতরা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোকামাল হোসেন বলেন: কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম সৈকত ও আশপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। সর্বক্ষণ খবরাখবর নেয়া হচ্ছে পুরো জেলার।