বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নার্সারিতে স্বাবলম্বী হাবিব

এমএইচ শিপন, বোরহানউদ্দিন
  ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে মিয়াবাড়ি-ঘোলপাড়-দালালবাজার সড়ক। সড়কের এক পাশে ছাগলা হাসনাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা, অন্যপাশে ছাগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সড়কের পশ্চিশ পাশে সারি সারি ফলদ গাছের চারা, কলম আর মৌসুমি সবজির চারা। বিভিন্ন প্রজাতির কলমে আম, আমড়া, জাম্বুরা, আমলকী, লেবুসহ নানা ফল ধরে আছে। স্থানীয়রা জানান এটি হাবিব নার্সারি।

বোরহানউদ্দিনে প্রথম বাণিজ্যিক নার্সারির কারিগর মো. হাবিব। পড়াশোনা করেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ছাগলা গ্রামে এক সময় বর্গাচাষি ছিলেন মো. হাবিব। কালক্রমে প্রায় তিন একর জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল নার্সারি। শুরু থেকেই সাফল্য তাকে ধরা দিয়েছে। নার্সারির আয়ে তার পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। অন্যদিকে তিনি প্রমাণ করেছেন, অন্য জেলা থেকে গাছের চারা বা কলম না এনে চেষ্টা, একাগ্রতা ও পরিশ্রম থাকলে নার্সারিতে উৎপাদিত চারা দ্বারা এলাকার চাহিদা অনেকটা পূরণ করা সম্ভব। হাবিবের অনুপ্রেরণায় স্থানীয় যুবকরা নার্সারি করার দিকে ঝুঁকছেন।

প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির ফলদ চারায় সমৃদ্ধ তার নার্সারি। দিন দিন তার নার্সারিতে গাছের প্রজাতির সংখ্যা বাড়ছে। থেমে নেই বিভিন্ন জাত সংগ্রহ। নতুন প্রজাতি বা গাছের খবর শুনলেই সেদিকে ছোটেন তিনি। এ ছাড়া তিনি প্রতি মৌসুমে প্রায় ২০ প্রজাতির সবজির চারা উৎপাদন করে বিক্রি করেন।

উপজেলা সদর থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে হাবিব নার্সারির মালিক হাবিব জানান, বোরহানউদ্দিনসহ গোটা ভোলা জেলায় জলপথে স্বরূপকাঠি থেকে গাছের চারা আসত। এখনো আসে। ২০০২ সালে আমার মনে প্রশ্ন জাগলো স্বরূপকাঠিতে চারা উৎপাদন হলে আমাদের এখানে কেন হবে না। এরপর আমি স্বরূপকাঠি যাই। রাতে হোটেলে থাকতাম, আর দিনে ওদের নার্সারিতে চলে যেতাম। ওরা কিভাবে গুটি কলম, শাখা কলম, গ্রাফটিং করে তা মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। কাজটা আমি আস্তে আস্তে শিখে ফেলি। তাপরপর স্বরূপকাঠি থেকে কিছু গাছ কিনে দেশে চলে আসি। আমার জমি ছিল না। আট শতক জমি বর্গা নিয়ে কলম করার কাজ শুরু করি। তখন মাত্র এক-চতুর্থাংশ কলম হয়েছে। বাকিগুলো হয়নি। আবার স্বরূপকাঠি যাই। ভুলগুলো সুধরাই। ওদের পরামর্শ নিই। আর সমস্যা হয়নি। এরপর বগুড়াসহ দেশের অনেক এলাকায় শিখতে গিয়েছি। আবার আসার সময় মাতৃগাছ কিনে বাড়ি ফিরেছি। জাত বেড়েছে, প্রজাতি বেড়েছে। যেমন, নার্সারিতে আমের ৮টি, কমলার ৪টি, বড়ইয়ের ৫টি, মাল্টার ৪টি, পেয়ারার ৪টি প্রজাতির কলমের চারা আছে। এ রকম প্রায় সব ফলের ৪-৫ প্রজাতি। জাত-প্রজাতি বাড়ার কারণে নার্সারির জায়গা বাড়াতে হয়েছে।

গাছের পাশাপাশি আমি উন্নত জাতের পেঁপে, বেগুন, টম্যাটো, মরিচ, লাউ, সিমসহ নানা প্রজাতির সবজির চারা উৎপাদন করি। গাছের কলম, চারা, সবজি চারা বেশির ভাগই ক্রেতারা নার্সারি থেকে কিনে নিয়ে যায়। তবে উপজেলার বিভিন্ন হাটেও বিক্রি করি।

হাবিব আরও জানান, নার্সারির আয় দিয়েই তার সংসার চলে। এর থেকে কিছু সঞ্চয় করেন। এ ছাড়া ৮০ শতাংশ জমিও কিনেছেন। গড়ে প্রতিদিন তার নার্সারিতে ৫ জন লোক কাজ করে। এ বছর প্রায় ১৬ লাখ টাকার গাছের চারা, কলম ও সবজি চারা বিক্রি করেছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় হয়েছে।

হাবিবের স্ত্রী মনোয়ারা শুরুর দিকে স্বামীর সঙ্গে নার্সারিতে সমানতালে কাজ করত। তাদের ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। বড় মেয়ে খাদিজা এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। ছোট মেয়ে জান্নাত সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে তানজিল প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে ইব্রাহিমের বয়স ৪ বছর।

হাবিবের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, নিজে এসএসসি পাস করে আর পড়াশোনা করা হয়নি। কিন্তু সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে শিক্ষিত করবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<76131 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1