শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হালদায় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ মে ২০২০, ০০:০০
হালদা নদী হতে সংগৃহীত মাছের ডিম

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে মাছ যখন ডিম ছাড়তে শুরু করে, নদীতে তখন ভাটা চলছিল।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে মাছেরা নদীতে নমুনা ডিম ছাড়ে। ডিম আহরণকারীরা নৌকা নিয়ে নদীতে অপেক্ষায় ছিলেন বিকাল থেকেই। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত নদীতে ২৮০টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ চলছিল। তবে এবারও ডিমের পরিমাণ নিয়ে হতাশ আহরণকারীরা।

বেলা ১২টার দিকে জোয়ারে মা মাছ আবার ডিম ছাড়তে পারে এমন প্রত্যাশা নিয়ে নদীতে অবস্থান করছেন তারা।

নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরি ঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রাম দাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়া ঘোনা ও সত্তার ঘাট অংশে ডিম আহরণ চলছে। বছরের এই সময়ে (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত) বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। এবার অমাবস্যার তিথি শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে।

হালদার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, সকাল ৬টার পর ভাটা শুরু হলে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে।

'ছয়টি নৌকা নিয়ে নদীতে আছি। অন্যবার এক বালতি বা দুই বালতি করে ডিম পেতাম একেকবার জাল টেনে। আজ ডিম উঠছে এক কেজি, দেড় কেজি করে। কোনো কোনো টানে ১৫০ গ্রামও পাচ্ছি। জোয়ার শুরু হয়েছে। হয়তো এখন কিছু ডিম পাব, সে আশায় সবাই নদীতে আছি।'

হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, এখনো পর্যন্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম সংগ্রহ হয়নি।

'এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। পাহাড়ি ঢলও ছিল কম। দূষণ কম থাকায় আশা ছিল গতবারের চেয়ে ডিম বেশি পাওয়া যাবে। জোয়ারের পর ডিম সংগ্রহ শেষ হলে সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে।'

হালদায় দূষণ সৃষ্টি করা দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায়, লকডাউনের কারণে নদী তীরের শিল্পপ্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ থাকায়, বালুবাহী ড্রেজার চলাচল বন্ধ থাকায় এবং মা মাছ নিধন বন্ধে অভিযান জোরদার হওয়ায় এবার বেশি ডিমের প্রত্যাশা ছিল সংশ্লিষ্টদের।

তবে হালদা তীরের ডিম আহরণকারীদের অভিযোগ, অভিযান চললেও মা মাছ শিকার বন্ধ ছিল না। গত মাসের মাঝামাঝি থেকে মা মাছের আনাগোনা বাড়তে থাকলে চোরা শিকারীদের উপদ্রবও বেড়ে গিয়েছিল। মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের টানা অভিযানেও উৎপাত থামানো যায়নি।

হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, 'সকালের দিকে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। ডিম সংগ্রহ চলছে। জোয়ারের পর ডিম সংগ্রহ শেষ হলে সার্বিক পরিস্থিতি জানা যাবে। ডিম ফুটিয়ে রেণু উৎপাদনের জন্য সরকারি বেসরকারি সব হ্যাচারি প্রস্তুত আছে।'

গত বছর ২৫ মে রাতে ডিম ছাড়ে মা মাছ, সংগ্রহ করা হয় ২৬ মে সকালে। প্রায় ১০ হাজার কেজি ডিম থেকে রেণু মিলেছিল ২০০ কেজি। ৮০ হাজার টাকা প্রতি কেজি রেণুর দর হিসেবে যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এর আগে ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়, যা থেকে রেণু মিলেছিল ৩৭৮ কেজি।

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল ১৬৮০ কেজি ডিম পাওয়া যায় হালদায়। তার আগের বছর ২ মে নমুনা ডিম মেলে ৭৩৫ কেজি। ওই বছর তিনবার নমুনা ডিম দিলেও আর ডিম ছাড়েনি মা মাছ।

২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল ও ১২ জুন দুই দফায় মোট ২৮০০ কেজি; ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল ১৬৫০০ কেজি, ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ৪২০০ কেজি এবং ২০১২ সালে ২১২৪০ কেজি ডিম মেলে হালদায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100484 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1