শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় মহানন্দে বন্দি প্রাণীরা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ মে ২০২০, ০০:০০
সাফারি পার্কে মায়ের সঙ্গে জেব্রা ও কৃষ্ণসার হরিণের শাবক -যাযাদি

বন্দি জীবন থেকে মুক্তি না পেলেও মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণীরা সবচেয়ে ভালো সময় অতিবাহিত করছে। নির্জন, শান্ত এমন পরিবেশ এর আগে কোনো সময় পায়নি চিড়িয়াখানার প্রাণীরা। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দুই মাস বন্ধ চিড়িয়াখানা। ফলে চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলো কোলাহলহীন পরিবেশে ফিরে পেয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। এদিকে গাজীপুরের সাফারি পার্কে জেব্রা ও কৃষ্ণসার পরিবারে দুই সাবক জন্ম নিয়েছে।

সরেজমিন চিড়িয়াখানা ঘুরে প্রাণীগুলোকে আগের তুলনায় আরও বেশি সতেজ ও প্রাণবন্ত দেখা যায়।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২০ মার্চ থেকে চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে অন্য কার্যক্রম চালু রয়েছে। চিড়িয়াখানায় পশু-পাখিদের খাবার দেয়া, সেবা-যত্ন-চিকিৎসা, ঘর পরিষ্কার এবং করোনাভাইরাস থেকে প্রাণীদের রক্ষায় নেয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা।

জনমানবশূন্য চিড়িয়াখানায় ইতোমধ্যে বাচ্চা জন্ম দিয়েছে জিরাফ। মা জিরাফ আর তার শাবক দুইজনেই সুস্থ আছে, দুর্যোগের সময় জন্ম দিয়েছে বলে বাচ্চা জিরাফটির নামকরণ করা হয়েছে দুর্জয়। চিড়িয়াখানার উটপাখিও অনেক ডিম দিচ্ছে। বৃহৎ প্রাণী জলহস্তিও বাচ্চা দিয়েছে। অন্য আরও পশু বাচ্চা দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

জনমানবশূন্য চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণীদের দৈনিন্দন জীবনে এখন নেই বিরক্তিকর হাঁকডাক। প্রাণীরা বন্দি থাকলেও কিছুটা হলেও বন্য পরিবেশের স্বাদ পাচ্ছে। ফলে বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ, হাতি, জলহস্তি ও কুমির এখন অনেকটাই আয়েশি জীবন কাটাচ্ছে। হরিণ রয়েছে চির প্রশান্তির জীবনে। ময়ূর তার পেখম মেলে প্রকৃতির শোভা বাড়াচ্ছে। বিভিন্ন পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত চিড়িয়াখানা। হনুমান, বানর রয়েছে তাদের দুষ্টুমিতে মত্ত। চিড়িয়াখানার অন্য প্রাণীদেরও দেখা যায় মনের আনন্দে চঞ্চলতার শীর্ষে অবস্থান করতে।

চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণী ও কর্মকর্তাদের করোনাভাইরাসমুক্ত রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিড়িয়াখানায় ঢোকার সময় জ্বর পরীক্ষা করা হয়, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, হ্যান্ড গস্নাভস এবং গামবুট পরার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

'মাংসাশী প্রাণীদের যারা দেখাশোনা করেন, তাদের পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকু্যপমেন্ট পরে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি খাঁচায় আমরা দুই থেকে তিন দিন পরপর ডিজইনফেকশান স্প্রে করছি।'

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন চিড়িয়াখানায় কোনো দর্শনার্থী নেই, জনমানবশূন্য তাই প্রাণীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে। খাঁচার মধ্যে তারা কোনোরকম বিরক্ত ছাড়াই ঘোরাফেরা করছে। আগে যে প্রাণীগুলো খাঁচার মাঝখানে জড়সড় হয়ে বসে থাকত, তারা এখন চঞ্চল। এর আগে প্রাণীদের যে খাবার দেয়া হতো, সব খাবার তারা খেত না। এখন তারা সব খাবার খেয়ে ফেলে। ভালোমত খাবারের কারণে এবং কোলাহলহীন পরিবেশ থাকায় প্রাণীগুলো প্রজনন কাজও সঠিকভাবে করতে পারছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে আসলে একদিন আবার সব কিছুই আগের মতো স্বাভাবিক হবে যাবে। চিড়িয়াখানায় আবারও আসবে মানুষ, বাড়বে জনসমাগম এবং কোলাহল। তবে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের মধ্যে এখন যে আনন্দ-উদ্দাম-চঞ্চলতা দেখা যাচ্ছে, তা যেন অটুট থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সাফারি পার্কে জেব্রা ও কৃষ্ণসার শাবকের জন্ম

আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, করোনা সংকটে লকডাউন চলাকালে পর্যটকশূন্য গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আফ্রিকান দুই ভিন্ন প্রজাতির সদস্য জেব্রা এবং কমন ইল্যান্ড (কৃষ্ণসার) পরিবারে দুই শাবক জন্ম নিয়েছে।

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ফের জেব্রার ঘরে শাবকের জন্ম হয়েছে। নতুন এই শাবক নিয়ে পার্কে জেব্রার সংখ্যা ১৯টিতে দাঁড়াল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বণ্যপ্রাণী পরিদর্শক সারোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে জেব্রার বেষ্টনীতে একটি শাবক জন্ম নিয়েছে। এই শাবকটি পুরুষ না মাদি, তা নিশ্চিত হতে পারেনি পার্ক কর্তৃপক্ষ। নতুন এই শাবক নিয়ে পার্কে জেব্রার সংখ্যা ১৯টিতে দাঁড়াল। পূর্বে পার্কে থাকা ১৮টি জেব্রার মধ্যে সাতটি পুরুষ ও ১১টি মাদি ছিল।

তিনি আরও জানান, জেব্রা অশ্ব পরিবারের আফ্রিকান স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা স্বতন্ত্র সাদা-কালো ডোরার জন্য পরিচিত। জেব্রার সাদা-কালো ডোরার এই নকশা প্রত্যেকের জন্য আলাদা থাকে। তারা সামাজিক প্রাণী, দলে দলে পাল তৈরি করে ঘুরে বেড়ায়। জেব্রা সাধারণত আট ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়, ওজন হয় ৩০০ কেজি পর্যন্ত। ডোরার পাশাপাশি তাদের ঘাড়ে কেশরসদৃশ খাড়া চুল আছে। জেব্রাকে ঘোড়া বা গাধার মতো পোষ মানানো যায় না। এ ছাড়া ১৮ মে পার্কের হরিণসদৃশ প্রাণী কমন ইল্যান্ডের পরিবারে আরও একটি শাবক জন্ম নিয়েছে। এ নিয়ে পার্কে কমন ইল্যান্ডের পরিবারের সদস্য হলো তিন।

কমন ইল্যান্ড, এন্টিলুপ প্রজাতির শান্তশিষ্ট আফ্রিকান প্রাণী, তাদের মাথায় দুটি শিং রয়েছে। তারা আত্মরক্ষায় এই শিং ব্যবহার করে থাকে। কমন ইল্যান্ড তৃণভোজী হলেও গাছের লতাপাতাও খেয়ে থাকে। সাধারণত দুই বছর বয়সেই তারা প্রজননের সক্ষমতা লাভ করে। গর্ভধারণের ব্যপ্তিকাল হয় ৮-৯ মাস।

তিনি আরও জানান, মাদি কমন ইংল্যান্ডের ওজন প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ৩০০-৬০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। পুরুষের ওজন ৪০০-৯০০ কেজি। তাদের দেহের দৈর্ঘ্য মাদির ক্ষেত্রে ৮০-১১০ ইঞ্চি এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৯৪-১৩৬ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার পর ২০১৫ সালের শেষের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসব প্রাণী আনা হয়েছিল।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান জানান, করোনাকালে পার্কে কোনো পর্যটক না থাকার কারণে পশু-পাখিরা স্বচ্ছন্দ্যে বিচরণ করছে। বর্তমানে এখানে বাইরে থেকেও অনেক প্রজাতির পশু-পাখি নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। অনেক নজরদারি ও বিশেষ পর্যবেক্ষণে এই পার্কের সাফারি জোনের বিভিন্ন বিদেশি প্রাণী থেকে নিয়মিত শাবকের জন্ম হচ্ছে। বিশেষ করে জেব্রার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে পার্কটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিনোদনকেন্দ্রে বিভিন্ন প্রাণী সরবরাহ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100571 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1