শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চালের দাম কমেছে, বেড়েছে সবজির

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ জুন ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৮ জুন ২০২০, ১০:১১

ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল লকডাউনের গুঞ্জনে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া চালের দাম কিছুটা কমেছে। সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। চাহিদা কমায় এই দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে ৬৬ দিন সারাদেশে লকডাউন জারি রাখার পর গত ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হয়। তবে এরপর প্রতিদিন করোনার সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় করোনার সংক্রমণ ও মৃতু্যর হার অনুযায়ী লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়। লাল বা 'রেড জোন'-কে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার ৪৫ এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই এসব এলাকা লকডাউন করা হবে। এমন গুঞ্জনে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে হুট করে বেড়ে যায় চালের দাম। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় রেড জোন চিহ্নিত করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকার রাজাবাজার রেড জোন চিহ্নিত করে পরীক্ষামূলক লকডাউন করা হলেও রাজধানীর অন্য অঞ্চল এখনো লকডাউন করা হয়নি। এদিকে লকডাউনের গুঞ্জনে কিছু ক্রেতা বাড়তি চাল কেনায় এখন চালের চাহিদা কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ বেড়েছে। সবমিলিয়ে গত দুই দিনে চালের দাম কিছুটা কমেছে। শনিবার রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৮ থেকে ৪২ টাকা। এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও চিকন ও মাঝারি চালের দাম কমার তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, চিকন চালের দাম ৪ দশমিক ১০ শতাংশ ও মাঝারি চালের দাম ৩ শতাংশ কমেছে। তবে মোটা চালের দাম ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, খুচরা বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬৫ টাকা, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৬৮ টাকা। মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫২ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মোটা চালের দাম বেড়ে ৩৮ থেকে ৪৮ টাকা হয়েছে। খিলগাঁও তালতলার চাল ব্যবসায়ী জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, 'করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই চাল বিক্রি বেড়ে যায়। এতে দামও বাড়ে। এরপর বিক্রি কমলে মাঝে দাম কিছুটা কমে। তবে রোজার আগে আবার চালের চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়ে যায়। নতুন চাল আসায় ঈদের পর আবার দাম কমে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবার চালের দাম বেড়ে যায়। এখন চাহিদা কমায় আবার চালের দাম কমেছে। এখন ব্যবসায় মন্দা চলছে। দুদিন ধরে তেমন একটা বিক্রি করতে পারিনি।' রামপুরার ব্যবসায়ী তারেক বলেন, 'সপ্তাহ দুই আগে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছিল। তবে এখন আবার মিনিকেট, নাজির, পাইজাম ও লতা চালের দাম কমেছে। ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি করা মিনিকেট চাল এখন ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আটাশ চালের দামও কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে। আমাদের ধারণা, বাজারে নতুন চালের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। এখন বন্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে চালের দাম আবার বেড়ে যেতে পারে।' বেড়েছে সবজির দাম: এদিকে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে কোনো সবজিই ৫০ টাকা কেজির নিচে বিক্রি হচ্ছে না; ডিমের দামও অন্তত ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। শনিবার নগরীর রামপুরা কাঁচাবাজার, মালিবাগ, বাড্ডা, খিলগাঁও, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে এই চিত্র পাওয়া গেছে। সবজি বিক্রেতারা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম বাড়ছে বলে জানান তারা। মালিবাগ কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা সোহেল বলেন, গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে সবজির দাম বাড়ছে। 'একদিকে অধিকাংশ সবজির মৌসুম শেষ হয়েছে, অন্যদিকে অতি বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন জায়গায় সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সরবরাহও কম।' বিভিন্ন বাজার ও মানভেদে কেজিপ্রতি বেগুনে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়, গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকায় এবং টমেটো ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটির ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ থেকে \হ৬০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলস্না ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ঝিঙা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর মুখী ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং কাকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বাজারে বিভিন্ন সবজির দাম চড়া থাকলেও কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহ জালাল বলেন, গত কয়েক মাস বাজারে বিভিন্ন সবজি ভরপুর ছিল। যে কারণে সবজির দামও কম ছিল। এখন বহু সবজি কৃষকের ক্ষেতেই নাই। যে কারণে অন্যান্য সবজির দাম বেড়েছে। এদিকে সবজির চড়া দামের মধ্যে বাজারে ডিমের দামও ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। হালি হিসেবে ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা। ডিমের দাম নিয়ে মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ী খন্দকার ফরহাদ বলেন, কয়েকদিন ধরে বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। আবার চাহিদাও বেড়েছে। হয়তো এই কারণে দাম বেড়েছে। এদিকে বাজারে মুরগি, গরু ও খাসির মাংসের দামও চড়া। বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি। আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি। গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা। আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৫০০ টাকা। শিং মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর তেলাপিয়া মাছ ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা ও পাঙাশ মাছ ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে