বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবীণদের চোখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯ বছর

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

বাঙালির মুক্তি ও গণতন্ত্রের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার গৌরবময় পথচলার ৯৯ বছর পূর্ণ করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের ১ জুলাই এ বিশ্ববিদ্যালয় উদ্‌যাপন করবে প্রতিষ্ঠার শততম বাষির্কী।

নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ভূমিকা বড় অর্জন হলেও শিক্ষার গুণগত মানের অবনমন হয়েছে বলে মনে করছেন সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যসহ প্রবীণ শিক্ষাবিদরা।

জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, জাতির যা আকাঙ্ক্ষা ছিল, তার চেয়ে বেশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, স্বৈরশাসক আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভু্যত্থান ও একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সবকিছুতে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। একইভাবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সামরিক শাসন, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধেও লড়তে হয়েছে।

বাংলা বিভাগের এই প্রবীণ অধ্যাপক বলেন, 'শুধু জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও এর বিকাশ নয়, বরং জাতীয় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষা ও সমাজ- দুটি প্রেক্ষিত থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যে দায়িত্ব নিতে হয়েছে, পৃথিবীর কম বিশ্ববিদ্যালয়ই সে দায়িত্ব নিয়েছে। শাসকের সঙ্গে লড়াই করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে টিকে থাকতে হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেলেও রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও বিশ্বর্ যাংকিংয়ে জায়গা না পাওয়া নিয়ে সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে ইংরেজির অধ্যাপক প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ বলেন, মনে রাখতে হবে, এ বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে। পূর্ববঙ্গে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশসহ এদেশের মানুষের সামাজিক দায় নিতে হয়েছে।

'এখন আমরা শতবর্ষে যাচ্ছি, এখন আর সামাজিক দায় নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। এখন মূল কাজটা হবে শিক্ষা ও গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া। রাষ্ট্রকে সেই সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'অতীতের মতো জ্ঞানী-গুণী মানুষ' তৈরি হচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'দলীয় আনুগত্য দেখে পছন্দের ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যোগ্য ও মেধাবীরা সেখানে বঞ্চিত হয়।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ভাবমূর্তি ও বৈশিষ্ট্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে বলে মনে করছেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।

তিনি বলেন, শৃঙ্খলাবোধ অনেকটা বিঘ্নিত হয়েছে। এখন আগের মতো উন্নত লেখক ও মানসম্মত লেখা খুজেঁ পাওয়া যায় না। এর মূল কারণ দেশের রাজনৈকি অবস্থা। শিক্ষক নিয়োগে নিরপেক্ষতা না থাকা ও দল মত নির্বিশেষে সম্মিলিত প্রচেষ্টার অভাব।

অতীতের গৌরব পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতির প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ৮৭ বছর বয়সে পা দিয়েছি। এই বয়সে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি টান অনুভব করি। এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়াজ শুনতে পাই।

'যাই হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি কামনা করছি। জ্ঞান, বিজ্ঞান, সৃজনশীলতায় এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিপূর্ণ হোক।'

দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্বপালনসহ দীর্ঘকাল অধ্যাপনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯ বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে অবসরে গেছেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

অর্জন তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এদেশের রাজনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। সবচেয়ে বড় অবদান মুক্তিযুদ্ধ।

'এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেভাবে আত্মত্যাগের স্বাক্ষর রেখে গেছে, রণাঙ্গনে গিয়ে জীবন দিয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমন দাবি করতে পারবে না।'

তিনি বলেন, '৭৩ এর অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালযের যে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিয়ে গেছেন। যার ফলে আমরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। সুতরাং একশ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সামনের একশ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়কে আমারা কোথায় নিয়ে যেতে পারি, নিখুঁতভাবে সেই পরিকল্পনা করতে হবে।'

শিক্ষার গুণগত মান ও সার্বিক পরিবেশে উন্নয়নে পরিকল্পনার কথা শোনালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, 'দুটি বিষয়কে সামনে রেখে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকে আমরা গভীরভাবে প্রত্যয় ব্যক্ত করছি, সেটি হলো গবেষণার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারণ করা খুবই জরুরি। আমরা সেদিকে অগ্রসর হচ্ছি।'

'আরেকটি হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা। সেটির জন্য যা যা প্রয়োজন, বিভিন্ন ধরনের কৌশলগত পরিকল্পনা, সেগুলো আমরা গ্রহণ করেছি। সেই কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে আমরা অগ্রসর হব এবং তা বাস্তবায়নে সকলের আন্তরিক সদয় সহায়তা প্রত্যাশা করছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<104510 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1