শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আ'লীগের সহযোগী সংগঠন

কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচ শতাধিক পদ খালি

ফয়সাল খান
  ০২ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০২ জুলাই ২০২০, ১০:২৯

সম্মেলনের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো। অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এসব কমিটির মেয়াদ আছে আর ১৩ মাস। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচ শতাধিক পদ খালি থাকায় তৃণমূলেও সংগঠন চাঙ্গা হচ্ছে না। ফলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্ভর হয়ে পড়ছে সংগঠনগুলো। এতে সুযোগ নিতে চেষ্টা করছে বিতর্কিত ও হাইব্রিড নেতারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মেয়াদ দুই বছর। সম্মেলনের ৭ মাস পরেও কেন্দ্রীয় কমিটির ৫৫৯টির মধ্যে ৫৪৮টি পদ খালি রেখেই কর্মকান্ড চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো। তবে যুবলীগ বাদে অন্য সব সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা তৈরি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান সহযোগী সংগঠনের নেতারা। করোনা পরিস্থিতির কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে আরও বিলম্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। সূত্রমতে, গত বছরের ২৯ নভেম্বর যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫১টি পদ রয়েছে। চেয়ারম্যান-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও বাকি পদগুলো এখনো খালি। এই সুযোগে আগের কমিটির বিতর্কিতরা বিভিন্নভাবে সংগঠনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। নানা কর্মসূচিতে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের আশপাশেও তাদের অনেককে ঘুরঘুর করতে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ যায়যায়দিনকে বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই যুবলীগের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন। তাই কমিটি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যুবলীগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাদের বায়োডাটা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ রয়েছে ১৫১টি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া বাকি পদগুলো এখনো খালি। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভপতি নির্মল রঞ্জণ গুহ। তিনি বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেই কমিটি ঘোষণা করা হবে। গত ৬ নভেম্বর কৃষক লীগের ও ২৯ নভেম্বর মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠন দুটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১১১টি করে পদ রয়েছে। অন্য সহযোগী সংগঠনের মতোই এ দুটি সংগঠনেরও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া বাকি পদগুলো এখানো খালি। গত বছরের ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন। আইআরও এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে ৩টি পদ ছাড়া বাকিগুলো এখনো শূন্য। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম আযম খসরু যায়যায়দিনকে বলেন, সম্মেলনের পরপরই কেন্দ্রীয় কমিটির খসড়া তৈরি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর কিছু সংশোধন করে আবারও কমিটির খসড়া তালিকা জমা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় শ্রমিক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ যায়যায়দিনকে বলেন, সম্মেলন শেষে ২৩ দিনের মাথায় কৃষক লীগের সাংগঠনিক নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি অনুমতি দিলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের স্বীকৃতি পেয়েছে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের প্রাধান্য দিয়ে খসড়া তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আলী আজগর নস্কর। এদিকে, সম্মেলনের ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন পদপ্রত্যাশীরা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় তৃণমূলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডও ঠিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে না। এতে সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে