শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

'সীমিত পরিসরে' যেমন চলছে সচিবালয়

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১৪ জুলাই ২০২০, ১৩:১৭
বাংলাদেশ সচিবালয়

কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে সীমিত পরিসরে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ঢিলেঢালাভাবে কাজ চললেও কয়েকটিতে কাজের পরিধি বেড়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে একসঙ্গে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো মন্ত্রণালয়েই আসছেন না; কাজ কম হলেও জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু ফেলে রাখা হচ্ছে না। রোববার সকাল থেকে সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে দেখা যায়, যেসব কক্ষে চার-পাঁচজনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে দু-একজন কাজ করছেন। রোস্টার করে অফিস করতে হচ্ছে বলে অনেক কক্ষেই তালা ঝুলছিল। কয়েকটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রবেশপথে জীবাণুনাশক টানেল বসিয়েছে। কোনো কোনো ভবনের প্রবেশপথে রাখা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। জুতা পরিষ্কার করে ঢোকার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে। কিছু কিছু কক্ষের সামনে কর্মকর্তারা নিজ উদ্যোগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রেখেছেন। লিফটগুলোর সুইচে মাঝেমধ্যে জীবাণুনাশক স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। কিছু কর্মকর্তা তাদের কক্ষের সামনে নোটিশ ঝুলিয়ে অপ্রয়োজনে কাউকে কক্ষে না ঢোকার অনুরোধ করেছেন। কেউ কেউ রশি টাঙিয়ে দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ঢিলেঢালাভাবে কাজ চলায় কিছু কিছু মন্ত্রণালয় এই সুযোগে আসবাবপত্র মেরামতসহ অবকাঠামোগত অন্যান্য কাজে হাত দিয়েছে। ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, সেতু বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অফিস সচিবালয়ের বাইরে। অন্যসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অফিস সচিবালয়ের ভেতরে। গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে ৩১ মে \হথেকে সীমিত পরিসরে অফিস চালু করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে ছুটি ঘোষণা করা হলেও জরুরি কাজের সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রণালয়গুলো তখনো স্বল্প পরিসরে খোলা ছিল। আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস চলবে। এরপর থেকে কীভাবে অফিস চলবে, সে বিষয়ে আদেশ জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই সীমিত পরিসরের অফিসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজ 'অবশ্যই কিছুটা কমেছে' বলে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন স্বীকার করেছেন। রোববার তিনি বলেন, 'কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের কাজ অনেক কমেছে, কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের কাজ আবার বেড়েছে। স্বাস্থ্য, অর্থ এবং জনপ্রশাসনসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কাজ বেড়েছে। বৈদেশিক যোগাযোগ সংক্রান্ত কাজগুলো যারা করেন তাদের কাজ কমেছে, কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ বেড়েছে।' সচিব ইউসুফ হারুন জানান, সরকারের নির্দেশনা মেনে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী একসঙ্গে অফিসে এসে কাজ করছেন। বয়স্ক, অসুস্থদের পাশাপাশি গর্ভবতী নারীরা এখন অফিসে আসছেন না। তিনি আরও বলেন, 'সীমিত পরিসরে অফিস চললেও জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ কিন্তু ফেলে রাখা হচ্ছে না। কেউ এসব কাজ ফেলে রাখলে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ ফেলে রাখলে যদি জনস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তা মেনে নেওয়া হবে না।' কাজ কমে যাওয়ায় কম সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাজ চালিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন জনপ্রশাসন সচিব। তিনি বলেন, '২৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী একসঙ্গে উপস্থিত থেকে এখন কাজ চালিয়ে নিতে কোনো মন্ত্রণালয়েই কোনো সমস্যা হচ্ছে না, এই জনবল দিয়েই এখন কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব।' মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগ) সোলতান আহ্‌?মদ বলেন, 'আমাদের ফুলফিল কাজ চলছে, কাজ আগের থেকে বেড়েছে। সিনিয়র কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিস করছেন। অন্য যেসব কর্মকর্তা আছেন তারা যদি বাসায় বসে অনলাইনে তাদের কাজ করে দিতে পারেন তাহলে তাদের অফিসে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে, এভাবেই কাজগুলো চলছে।' মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মাঠপ্রশাসনকে সমন্বয় করতে হয় বলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর থেকে এই বিভাগের কাজ বেড়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব সোলতান। অফিস সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কিছু কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা গেলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবগুলো দপ্তরেই কর্মকর্তাদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। এই মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আমাদের তো তালগোল অবস্থা, কাজ অনেক বেড়ে গেছে। এখন দিনরাত নেই, যখনই প্রয়োজন তখনই কাজ করছি।' কোন অনুবিভাগ কোন দিন খোলা থাকবে, সেই সূচি নির্ধারণ করে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। অনুবিভাগগুলো খোলা রাখার দিন দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কারা অফিসে আসবেন- তা দপ্তরপ্রধানদের ঠিক করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজ আগের থেকে বেড়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারি এবং বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাজ বেড়েছে। কৃষি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়কেও মহামারিতে বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে বলে এসব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। এতদিন তেমন কোনো কাজ না থাকলেও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানো নিয়ে বেশকিছু কাজ করতে হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ফরিদা পারভীন বলেন, 'আমাদের কাজ কমেছে বলে মনে হচ্ছে না, তবে কাজের ধরন পাল্টেছে। আগে যে কাজগুলো আমরা সচিবালয়ে গিয়ে করতাম, এখন সেগুলোর বেশিরভাগ ভার্চুয়ালি করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা মেনে একসঙ্গে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে উপস্থিত হচ্ছেন না।' নাম, পদবি ও কোন দপ্তরে কাজ করেন সেসব তথ্য প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, 'অনেক মন্ত্রণালয়েরই এখন কাজ নেই, কিন্তু তারা মুখে স্বীকার করবে না। কারণ কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাকে প্রতিদিন অফিস করতে হচ্ছে এবং তারা কোনো না কোনো কাজ দেখানোর চেষ্টা করছেন, আসলে এসব কোনো কাজই না।' মহামারি ঠেকাতে সীমিত পরিসরে অফিস চললেও এ পর্যন্ত অন্তত ছয়জন সচিব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে