শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক শাহজাহান সিরাজ আর নেই

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০
শাহজাহান সিরাজ

মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক, বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ মারা গেছেন (ইন্না লিলস্নাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে (সাবেক অ্যাপোলো হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবীর খান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, বুধবার বনানী কবরস্থানে শাহজাহান সিরাজকে সমাহিত করা হবে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন শাহজাহান সিরাজ। ২০১২ সালে তার ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। এর কয়েক বছর পর মস্কিষ্কেও ক্যানসার ধরা পড়ে। তখন থেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে গত সোমবার বাসা থেকে পুনরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল। শাহজাহান সিরাজ ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে আব্দুল গণি মিয়া ও রহিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে শাহজাহান সিরাজ ছাত্র-রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সে সময় তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়া সা'দত কলেজের ছাত্র ছিলেন। ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৬-৬৭ দুই মেয়াদে করটিয়া সা'দত কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভু্যত্থানে অংশ নেন। পরে তিনি ১৯৭০-৭২ মেয়াদে অবিভক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন 'স্বাধীন বাংলা বিপস্নবী পরিষদ'র (যার অন্য নাম নিউক্লিয়াস) সক্রিয় কর্মী, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের 'চার খলিফা' বলা হতো তাদের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন আসম আবদুর রব। পরদিন ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বিশাল এক ছাত্রসমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন শাহজাহান সিরাজ। এরপর যুদ্ধ শুরু হলে তিনি 'বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স' (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের পর শাহজাহান সিরাজ সর্বদলীয় সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন, যা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সাধারণ সম্পাদক হন শাহজাহান সিরাজ। পরে জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। জাসদের মনোনয়নে তিনবার তিনি জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শাহজাহান সিরাজ ১৯৯৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বিএনপির মনোনয়নেও একবার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়া সরকারের বন ও পরিবেশসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনি স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ, মেয়ে সারোয়াত সিরাজ ও ছেলে রাজীব সিরাজসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ পেশায় একজন শিক্ষিকা এবং মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি। তার মৃতু্যতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উলস্নাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরীসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে