বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা :খাদ্য সংকটে লাখো মানুষ

যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

কয়েকটি নদীর পানি কমলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপরে। উত্তরে বন্যার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও মধ্যাঞ্চলে আরও অবনতি হয়েছে। এতে করে অনেক স্থানে ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এমতাবস্থায় দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। পানিবন্দি অবস্থায় এখনো কয়েক লাখ মানুষ। ঘরবাড়ি ফসলি জমি তলিয়ে নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার ফসলের খেত।

তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘটসহ সবগুলো নদীর পানি এখন বিপদসীমার ওপরে। বাঁধের আশ্রিত মানুষ গবাদি পশু নিয়ে ঘরে ফিরতে পারছে না। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগবালাই।

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ঢাকার অদূরে টাঙ্গাইলে। রাজধানীর পাশে গাজীপুর জেলায় তুরাগ ও বংশী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

থাকায় কালিয়াকৈর উপজেলার ১০২টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে আছে। তবে, উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চল থেকেও পানি নামছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

টেকেরহাট (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, কুমার নদ থেকে বালু দসু্যদের অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের শংকরদী গ্রামের মুন্সীপাড়া এলাকায় মুহূর্তের মধ্যে দুটি বসতঘর মালামালসহ কুমার নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অন্যদিকে ওই একই এলাকায় নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার হুমকির মুখে রয়েছে তৈয়বালী মুন্সী, লাবলু মুন্সী, আয়ুবালী মুন্সী, মুন্সীপাড়া জামে মসজিদ প্রায় ১০টি বসতঘর। এদিকে উপজেলার শাখারপাড়, গাংকান্দি শাখারপাড়, কারিবাড়ী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হওয়ার পাশাপাশি শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। যমুনার তীব্র স্রোতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিমলা এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙনে অসংখ্য মানষের ঘরবাড়ি, বসতভিটা, ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। মানুষ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের আর্তনাদে এলাকার মানুষের মাঝে দুঃখের সীমা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। জেলার কাজীপুর, বেলকুচি, উলস্নাপাড়া, শাহজাদপুর, সদর ও চৌহালী উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে।

সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজদিখানে বন্যায় দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ। কাঁচা-পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে সব কটি ইউনিয়নে কোনো না কোনো রাস্তার কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলজিইডির রাস্তা, এর পরের স্থানে রয়েছে জেলা পরিষদের রাস্তা। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় প্রায় ৪০ কি.মি. রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী সোয়াইব বিন আজাদ বলেন, এ উপজেলায় ৬৭.৭৫ কি.মি রাস্তা এলজিইডির। তার মধ্যে ২১ কি.মি. রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ভাঙা রাস্তায় বালুর বস্তা ও কোথাও গাছের ডালা ও বাঁশ দিয়ে প্রাথমিকভাবে রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। গর্ত ও বিপজ্জনক রাস্তায় লাল কাপড় টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে। পানি না কমা পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সঠিক হিসাব তখনই করা যাবে।

স্টাফ রিপোর্টার, রাজবাড়ী জানান, প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধির কারণে রাজবাড়ী জেলার বানভাসি মানুষ এখন দিশেহারা। জেলার চার উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের ৬৫ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর পয়েন্টে তিন সে.মি. বেড়ে বিপৎসীমার ৫০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টে পাঁচ সে.মি বেড়ে প্রবাহিত হচ্ছে ৯৫ সে.মি উপর দিয়ে এবং দৌলতদিয়া পয়েন্টে এক সে.মি বেড়ে বিপৎসীমার ১১৯ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টিউবয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটও তীব্র হয়েছে। বন্যা উপদ্রম্নত এলাকায় বিষধর সাপের আনাগোনাও বেড়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই এখনও ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে জানা গেছে। রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনা হবে।

\হলোহাগড়া (নড়াইল) সংবাদদাতা জানান, মধুমতি নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোহাগড়া উপজেলার কালনা ফেরিঘাটের উভয় পাড়ের পন্টুনের গ্যাংওয়ে ডুবে যাওয়ায় যানবাহন ও যাত্রী পরিবহণে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের ছুটিতে বাড়িমুখী যাত্রীদের ফেরি পারাপারে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুলাই ওই ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে যায়। তারপর থেকে ঘাট কর্তৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। মধুমতি নদীতে পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

\হগোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী সাকিরুল ইসলাম বলেন, আমরা ফেরিঘাট পরিদর্শন করে সমস্যা চিহ্নিত করেছি। সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু হয়েছে।

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে ইসলামপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। একদিকে করোনা অন্যদিকে এক মাস ধরে বন্যা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে বানভাসিরা। বন্যার ও করোনা কারণে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিতদের বিশুদ্ধ পানির অভাব ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ।

জানা গেছে. বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বুধবার বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তৃতীয় দফায় পানি বৃদ্ধির ফলে প্রায় এক মাস ধরে পানিবন্দি রয়েছে উপজেলার আড়াই লাখের বেশি মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় কর্মহীন মানুষদের ঘরে ঘরে চলছে খাদ্য সংকট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107535 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1