শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজারহাট চামড়ার মোকামে মলিন ব্যবসায়ীদের মুখ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
  ০৯ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে শনিবার বসেছিল ঈদপরবর্তী দ্বিতীয় হাট। এদিন চামড়ার সরবরাহও ছিল প্রচুর। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাকডাকে মুখরিত ছিল মোকাম -যাযাদি

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাট চাঙ্গা হলেও মলিন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মুখ। শনিবার ঈদপরবর্তী বড় হাটে প্রায় দুই কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হলেও তাতে চালান বাচেনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনেও হাটে দাম পাচ্ছেন না তারা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা যে দাম বলছেন, তা নির্ধারিত দামের চেয়ে কম। যশোরের রাজারহাটে শনিবার বসেছিল ঈদপরবর্তী চামড়ার দ্বিতীয় হাট। মঙ্গলবার প্রথম চামড়ার হাট না জমলেও শনিবার ছিল জমজমাট। ট্যানারি প্রতিনিধি ও বাইরের ব্যাপারীদের সমাগম এবং চামড়ার সরবরাহও ছিল প্রচুর। বিক্রিও হয়েছে প্রায় সব চামড়া। হাটের ইজারাদারের হিসাবে এ দিন প্রায় ৫০ হাজার পশুর চামড়া উঠে। আর কেনাবেচা হয়েছে অন্তত দুই কোটি টাকার চামড়া। রাজারহাটের ইজারাদার হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, যশোরের রাজারহাটে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হয়। সপ্তাহে দুই দিন মঙ্গলবার ও শনিবার চামড়া নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। ঈদপরবর্তী দ্বিতীয় হাট শনিবার সকাল থেকেই ছিল ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাক। এদিন প্রথম হাটের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে চামড়া \হবিক্রি হয়েছে। দুপুর ১২টার মধ্যেই হাটে আসা প্রায় সব চামড়া বিক্রি হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, হাটে প্রায় ৩৫ হাজার গরুর চামড়া উঠে। আর ছাগলের চামড়া এসেছিল প্রায় ১৫ হাজার। জেলা বাজার কর্মকর্তা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ তারা হিসাব করে দেখেছেন প্রায় দুই কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, শনিবার বাজার জমজমাট ছিল। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ দামে চামড়া বিক্রয় করতে না পারলেও কেউ ফেরত নিয়ে যাননি। যশোর জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেনের দাবি, সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি না হলেও বাজারে আনা সব চামড়া বিক্রি হয়ে গেছে। হাটে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানে সরকার নির্ধারিত দামে নয়; চামড়া বিক্রি হয়েছে আকার ভেদে-আপেক্ষিক মূল্যে (স্থানীয় ভাষায় থামকো)। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ী বা গ্রাম থেকে যে দামে কিনেছেন হাটে সেই দামও মিলছে না। যশোরের মণিরামপুরের চিনেটোলা গ্রামের স্বদেশ দাস বলেন, তিনি একশ গরুর চামড়া বিক্রির জন্য হাটে আনেন। সরকার গরুর চামড়ার দাম ২৮ থেকে ৩২ টাকা ফুট নির্ধারণ করলেও হাটে ফুট হিসেবে কোনো চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। তিনি গরুর চামড়া ৫শ থেকে ৬শ টাকা দামে বিক্রি করেছেন। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম হলে মূল্য পেতেন ৭শ টাকা করে। তার ভাষায়, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গত বছরের মতো এবারও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেন। একই কথা বললেন খুলনার ফুলতলার ব্যবসায়ী বিমল দাস। তিনি বলেন, 'ব্যবসা করার কোনো পরিবেশ নেই। ২৪টি ছাগলের চামড়া বিক্রি করেছি ৪২০ টাকা। অর্থাৎ ১৭ টাকা প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে। লবণ খরচও পেলাম না।' তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাইকারি ক্রয় করা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখবেন বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, দূর-দুরান্ত থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা হাটে পরিবহণ খরচ করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে তাদের চামড়া নিয়ে আবার ফিরে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে চামড়া সংরক্ষণসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে চামড়া বিক্রি করেই ফিরতে হয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। ঝিকরগাছার আড়শিংড়ি গ্রামের শহিদুল ইসলাম ৫৬ পিস গরুর চামড়া ও ৫৫০ পিস ছাগলেও চামড়া নিয়ে রাজারহাটে আসেন। তিনি বলেন, 'গরুর চামড়া কেনা ৫শ টাকা করে। দাম উঠেছে ২৫০ টাকা। আর ছাগলেও চামড়ার দাম দিতে চাইছেন পিস ৫০ টাকা। এ চামড়া বিক্রি না করে ফিরে গেলে খরচ আরও বেড়ে যাবে। কি করব তা নিয়ে চিন্তায় আছি।' মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা থেকে ৩৫০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে আসেন ব্যবসায়ী নূর ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতি পিস আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা দাম বলেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এর দাম হওয়া উচিত ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। আর ঝিনাইদহ থেকে চামড়া নিয়ে আসা আবদুর রশিদ বলেন, ঈদের পরে প্রথম হাটের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দাম পাওয়া যাচ্ছে। তা না হলে চামড়া ফেলে বাড়ি ফিরতে হতো। এদিকে, পাইকারি ব্যবসায়ীরা আছেন অন্য দুঃশ্চিন্তায়। তারা ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া পাননি। নতুন করে আবার চামড়া কিনছেন। এগুলো কত করে বিক্রি করতে পারবেন। বিক্রি করে নগদ টাকা পাবেন কিনা সেটাও অনিশ্চিত। এমন তথ্য দিলেন রাজারহাটের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল ওহাব। তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকের কাছে তার পাওনা রয়েছে ৭০ লাখ টাকা। এবার কোরবানির আগে মাত্র এক লাখ টাকা দিয়েছে। ক্রয় করার চামড়া নগদে বিক্রি করতে না পারলে পথে বসতে হবে। ঝিনাইদহের ব্যাপারীপাড়ার আজিজার রহমান বলেন, ঢাকার সীমান্ত লেদারের কাছে তার পাওনা রয়েছে ৩৯ লাখ ৬ হাজার টাকা। কিন্তু বকেয়া টাকা পাচ্ছি না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে