শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

একমঞ্চে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন বি. চৌধুরী, কামাল, ফখরুল, মান্না

যাযাদি রিপোটর্
  ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০৫

গণতন্ত্র, জবাবদিহিতামূলক সরকার ও কাযর্কর সংসদ প্রতিষ্ঠাসহ বতর্মান সরকারের পতনের দাবিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মাহমুদুর রহমান মান্না।

বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘ইভিএম বজর্ন, জাতীয় নিবার্চন ও রাজনৈতিক’ জোট শীষর্ক আলোচনা সভায় একই মঞ্চে তারা দলমত, ধমর্-বণর্ নিবিের্শষে সবর্স্তরের মানুষের প্রতি এ আহŸান জানান।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও যুক্তফ্রন্টের আহŸায়ক অধ্যাপক ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, কল্যাণ পাটির্র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, দেশে আজ মারাত্মক সংকট চলছে। দেশে গণতন্ত্র নাই, মানুষের অধিকার নেই, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই। চলছে হাতুড়িপেটা, চাপাতি ও লাঠিতন্ত্র। হত্যা, সন্ত্রাস ও গুমতন্ত্র। কাকে কখন কীভাবে তুলে নিয়ে যায় তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমন বাংলাদেশ তারা চান না। তারা চান গণতন্ত্র। আর এটা শুধু ভোটের দিনের জন্য নয়। বছরের ৩৬৫ দিনই তারা সেটা চান। যে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে তারা তা চান না। তারা চান জবাবদিহিতামূলক সরকার, কাযর্কর সংসদ, আইনের শাসন। সবোর্পরি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। আর যেন কোনো স্বৈরাচারী সরকার এদেশে আসতে না পারে, তার জন্যই প্রয়োজন দলমত নিবিের্শষে জাতীয় ঐক্য। এই ঐক্যের মাধ্যমেই তারা বতর্মান স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাবেন ইনশা-আল্লাহ। এ সময় তিনি আগামী জাতীয় নিবার্চনের আগে সরকারের পদত্যাগ ও পালাের্মন্ট ভেঙ্গে দেয়াসহ নিরপেক্ষ নিবার্চনকালীন সরকার গঠন এবং নিবার্চন কমিশন পুনগর্ঠনসহ সেনাবাহিনীকে নিবার্চনের দায়িত্ব প্রদানের দাবি জানান।

ড. কামাল হোসেন বলেন, সারা পৃথিবীতেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্য হয়। বাঙালি জাতির ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য হলো- তারা কখনো মাথানত করে না। যারা অসাম্প্রদায়িকতা ও সংবিধানের মূলনীতিতে বিশ্বাসী দেশ ও দেশের মানুষকে বঁাচাতে তাদের দলমত নিবিের্শষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এর মাধ্যমেই দেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তারা জবাবদিহিতামূলক সরকার ও কাযর্কর সংসদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিভের্জাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। যেখানে প্রকৃত অথের্ই আইনের শাসন থাকবে। মানুষ বিচার পাবে। সকল অধিকার ফিরে পাবে। এজন্য জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।

মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলার বিচারের জন্য রাতের অন্ধকারে প্রজ্ঞাপন জারি করে কারাগারের ভেতরে আদালত বসিয়েছে সরকার। এটি একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এমন নজির নেই। এটি সংবিধানের ৩৫ ধারার সুস্পষ্ট লংঘন। প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে জেলখানায় এমন গোপন আদালত বসিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাকমীর্র বিচার করা হয়েছিল। পরিত্যক্ত জেলখানার ভেতরে একটি অন্ধকার কুঠুরির মধ্যে এই আদালত বসিয়ে সেখানে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই আদালতকে সুস্পষ্ট ভাষায় বলে এসেছেন, এই আদালতে কখনো ন্যায় বিচার সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, সারাদেশে বিএনপি নেতাকমীের্দর বিরুদ্ধে ভৌতিক মামলা দেয়া হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় এসেছে, ঘটনা ঘটবার আগেই অগ্রিম নাশকতার মামলা দিয়ে সেসব মামলায় অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার ব্যক্তির নাম অন্তভুর্ক্ত করে রাখা হচ্ছে। পুলিশ কমর্কতার্রা বলছেন ওপরের নিদেের্শ তারা এসব মামলা করছেন। তাই এই জুলুমবাজ, মামলাবাজ, অত্যাচারী, খুনি ও অবৈধ সরকারকে সরাতেই হবে। এজন্যই প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের। তারা চেষ্টা করছেন। সময়মতো কমর্সূচি আসবে। ইনশা-আল্লাহ সত্যেও বিজয় অনিবাযর্।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার এতটাই জুলুমবাজ আর চোর যে, সারাদিন-রাত বললেও তা বলে শেষ করা যাবে না। আর এই সরকার এতটা ছোটলোকি করবে সেটা তিনি প্রত্যাশা করেন। বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, এখন জেলাখানার ভেতরেও গোপন আদালত বসিয়েছে তার বিচার করার জন্য। কোথায় গিয়ে ঠেকেছে আজ বিচার ব্যবস্থা? তবে সময় বেশি দিন নেই। অন্যায় বেশিদিন টিকে না। দশ বছর টিকেছে, আর নয়। এইবার এই অন্যায়কে সবাই মিলে দাফন করা হবে।

মান্না আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু মান্নার কান্নাই দেখেন। তার মন্ত্রীদের কান্না দেখেন না। তার মন্ত্রিসভার একমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নাকি এক লাখ মানুষের প্রাণ যাবে। তিনি হয়তো আওয়ামী লীগের অপকমের্র কথা চিন্তা করে এবং তার পরিণতির কথা ভেবেই এই আশংকা করেছেন। আমিও আওয়ামী লীগের আশু পরিণতির কথা চিন্তা করেই কান্নাকাটি করি।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, আর সময় নষ্ট না করে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ ঐক্য সরকার বিরোধী কোনো ঐক্য নয়। এ ঐক্য মানুষের ভোটাধিকারসহ সকল মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ঐক্য। এতে নানা ধরনের উপহাস, নিপীড়ন, নিযার্তনের সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। কিন্তু‘ তবুও সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। তাহলেই সফলতা আসবে ইনশা-আল্লাহ।

ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ একটা ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার যদি ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটা জাতীয় নিবার্চন করে ফেলতে পারে- তবে এই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আরেকটি ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমেই একটা অবাধ, সুষ্ঠু জাতীয় নিবার্চন আদায় করে নিতে হবে। আর সেজন্য জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<10988 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1