শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
কিডনি হাসপাতাল

ডায়ালাইসিস ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগ

যাযাদি রিপোটর্
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে চলছে রোগিদের ডায়ালাইসিস Ñযাযাদি

কিডনি চিকিৎসায় দেশের সরকারিভাবে একমাত্র আশ্রয়স্থল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (নিকডু)। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন রোগীরা। কিন্তু এ হাসপাতালটিতে এসে নানা অনিয়মের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিডিনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের (এ রোগে আক্রান্তদের বঁাচার একমাত্র উপায়) জন্য ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত পাবলিক প্রাইভেট পাটর্নারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে সেন্ডর নামের কোম্পানি কাজ শুরু করে। হাসপাতালটির একাংশ নিয়ে সেন্ডরের ডায়ালাইসিস কাযর্ক্রমে ব্যাপক অনিয়ম থাকায় স্পশর্কাতর এই সেবাটি পেয়েও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীরা।

রোগীদের অভিযোগ, কিডনি হাসপাতালে সেন্ডরের তত্ত¡াবধানে সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিসের পরও রোগীরা সুস্থ থাকতে পারছেন না। এদিকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশিরভাগ দরিদ্র হওয়ায় খরচের অতিরিক্ত বোঝা তাদের টানা অসম্ভব হয়ে দঁাড়াচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সেন্ডরের কারণে খরচ বাড়ছে। যার মূল কারণ হিসেবে রয়েছে সঠিকভাবে পরিষ্কার না করে একই ডায়ালাইজার (ডায়ালাইসিস মেশিনের মূল উপাদান) বিভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার ও জীবাণুযুক্ত ডায়ালাইসিস ফ্লুইড ব্যবহার বা উৎপাদনের ক্ষেত্রে জিএমপি (গুড মেনুফ্যাকচারিং প্রোডাক্ট) অনুসরণ না করে ব্যবহার করা।

হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এভাবে ডায়ালাইসিসের কারণে রোগীদের গায়ে সুঁচ ঢুকানোর সময় অতিরিক্ত হারে ফিস্টুলা নষ্ট হচ্ছে। আর পুনরায় ক্যাথেডা ও ফিস্টুলা ব্যবহার করায় রোগীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

বেশ কয়েকদিন ধরেই

শাহনেওয়াজ নামে এক ব্যক্তি তার মাকে ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আগে যখন আমরা এ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করিয়েছি তখন সপ্তাহে তিন বার দিলেই মা সুস্থ থাকবেন। এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বারবার এখানে ভতির্ করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্টরা একই ডায়ালাইজার বিভিন্ন সময় অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। হাসপাতালেই জীবাণুযুক্ত বা নোংরা পরিবেশে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে রোগীর ফিস্টুলা নষ্ট হচ্ছে আবার কোনো কোনো রোগীকে সি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে।’

এখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখে ডায়ালাইজারসহ বিভিন্ন চাহিদা দিলেও সেন্ডর কতৃর্পক্ষ তা পূরণ করে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে শাহনেওয়াজসহ আরও কয়েকজন রোগীর স্বজন বলেন, ডায়ালাইসিস ফ্লুইড উৎপাদনের ক্ষেত্রে নোংরা ও জীবাণুযুক্ত স্থান ছাড়াও সেন্ডরের কোনো ফামাির্সস্ট নেই। রয়েছে একজন ওয়াডর্ বয়। এমনকি ডায়ালাইসিস সেবা কাযর্ক্রমে অভিজ্ঞ কোনো নাসর্ও নেই। ফিস্টুলা সুঁচ নষ্ট করা ছাড়াও তা লাগানোর সময় দেখা যায় জায়গাটি ফুলে যায় আবার খোলার পর অতিরিক্ত হারে রক্ত পড়ে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা কিছু করতে পারে না।

একাধিক রোগীর স্বজন বলেন, ডায়ালাইসিসের সময় কোনো রোগী অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরি বিভাগেও নেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনও ঘটেছে ডায়ালাইসিসের পর রোগী অসুস্থ হয়ে পড়লেও নাসর্রা বাইরে বাইরে ফেলে রাখে কিন্তু জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চার ঘণ্টা ধরে ডায়ালাইসিস দেয়া হয়। এতে রোগীরা কিছুটা অসুস্থ বোধ করতে পারেন। তবে একটু বিশ্রাম না দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে বেড থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। এসবের প্রতিবাদ করলে ডায়ালাইসিস সিডিউল বাতিল করারও হুমকি দেয় সেন্ডরের কমীর্রা।

গোলাম মোস্তফা নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমাদের তো অত টাকা নেই যে, বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে এই চিকিৎসা করাব। এখানে ডায়ালাইসিস করাতে মাত্র ৪৫০ টাকা নেয়। কিন্তু কৌশলে তারা টাকা হাতিয়ে নেয়ার পঁায়তারা করছে।’

সেন্ডর পরিচালিত ডায়ালাইসিস সেন্টারটির ফ্লুইড উৎপাদনের স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ডায়ালাইজার পরিষ্কার করে পুনরায় ব্যবহারের কোনো মেশিন সেখানে নেই। হাতেই তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত নোংরা ও দুগর্ন্ধযুক্ত পরিবেশে ফ্লুইড উৎপাদন করা হচ্ছে।

ফামাির্সস্টদের মতে, জীবাণুযুক্ত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আর এ ধরনের ফ্লুইড ও ডায়ালাইজার পুনরায় ব্যবহার করার ফলেই রোগীদের এ দুরবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।

হাসপাতালে কমর্রত চিকিৎসকরা রোগী ও স্বজনদের এসব অভিযোগ স্বীকার করলেও সমাধান করার কোনো উপায় দিতে পারেননি। তারা বলছেন, পিপিপি প্রকল্পটি সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও নিধাির্রত কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এখানে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষের কিছু করার থাকে না।

কিডনি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল হুদা বলেন, ‘সেন্ডরের অনিয়ম সম্পকের্ আমি অবগত। তাদের সঠিকভাবে কাজ করতে বলেছি। কিন্তু তারা চুক্তি অনুসারে গ্রাহ্য করে না।’

তবে যোগাযোগ করা হলে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেন্ডরের প্রধান নিবার্হী কমর্কতার্ লে. কনের্ল (অব.) এস এম আব্দুল সালাম।

তিনি বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা কি ডাক্তার? তারা এত কিছু বোঝে কীভাবে? তাদের কেউ ভুল বোঝাতেও পারে। আমাদের সাভির্স সরকারের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুসারে হচ্ছে। ফ্লুইড উৎপাদনের জন্য আমরা আবার নতুন বড় জায়গা পাচ্ছি। সেখানে কাজ হবে। তবে এখন যেখানে আছে সেখানে জীবাণুযুক্ত হওয়ার কথা নয়।’

১৫ থেকে ১৮ বার পযর্ন্ত একই ডায়ালাইজার পরিশুদ্ধ করে ব্যবহার করা হয় বলে জানান সেন্ডরের প্রধান নিবার্হী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13091 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1