শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিবেদন সংসদে

যাযাদি রিপোটর্
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:১৯

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়াটি পরীক্ষা করে কিছু জায়গায় পরিবতর্ন এনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করেছে সংসদীয় কমিটি।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পকির্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ সোমবার তাদের প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করেন।

বহুল আলোচিত এই আইনের অধীনে অপরাধে কিছু জায়গায় শাস্তি কমানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

প্রতিবেদন উত্থাপনের সময় তা চূড়ান্ত করতে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে ইমরান বলেন, ‘গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের বক্তব্য সন্নিবেশ করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। এই বিলটি পাস হলে এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় ভ‚মিকা রাখবে।’

গত ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর গত ৯ এপ্রিল তা সংসদে উত্থাপন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

আইনটি মন্ত্রিসভায় ওঠার পর থেকেই এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে সমালোচনা করে আসছে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, এই আইনের ফলে ‘স্বাধীন’ সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হবে।

খসড়া আইনটি সংসদে তোলার পর তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। সংসদীয় কমিটিকে প্রথমে চার সপ্তাহ দেয়া হলেও পরে দুই দফায় তিন মাস সময় বাড়িয়ে নেয় তারা। তবে শেষ দফায় এক মাস সময় নিলেও একদিনের মধ্যে দিন পরেই বৈঠক করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে সংসদীয় কমিটি।

প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে দুই দফায় সম্পাদক পরিষদ, টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি; তবে তাতেও উদ্বেগ প্রশমিত হয়নি।

সংসদীয় কমিটিতে সম্পাদক পরিষদ খসড়া আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ধারার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপত্তি জানায়।

আইনের ৮ ধারায় ছিল, ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করলে ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ক্ষেত্রমত, বøক করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি অনুরোধ করতে পারবে।

ওই ধারায় আরও বলা হয়েছে, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মনে হয় যে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য দেশের বা দেশে কোনো অংশের সংহতি, অথৈর্নতিক কমর্কাÐ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধমীর্য় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণœ করে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে তাহলে বাহিনী ওই তথ্য-উপাত্ত বøক বা অপসারণ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে।

এই ধারায় পরিবতের্নর জন্য সম্পাদক পরিষদ সংসদীয় কমিটিতে প্রস্তাব দিয়েছিল; তবে এখানে কোনো পরিবতর্ন আনেনি কমিটি।

সংসদীয় কমিটির সুপারিশে এই আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত বিধানে শতার্ংশ যুক্ত করে বলেছে, “... তবে শতর্ থাকে যে তথ্য অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর বিধানবলি কাযর্কর থাকিবে।”

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যে সকল মহান আদশর্ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসগর্ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধমর্ নিরপেক্ষতার সেই সকল আদশর্...”

সংসদীয় কমিটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের আইনমন্ত্রী ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকে অন্তভুের্ক্তর সুপারিশ করেছে।

সংসদে উত্থাপিত বিলে ১৮ ধারায় কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেমে বেআইনি প্রবেশে সবোর্চ্চ এক বছরের কারাদÐ এবং তিন লাখ টাকার বিধান ছিল। সংসদীয় কমিটি এখানে শাস্তি কমিয়ে ছয় মাস কারাদÐ বা দুই লাখ টাকা দÐের বিধান প্রস্তাব করেছে।

বিলের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণার দÐের বিধানের অংশে সংসদীয় কমিটি ‘জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা’ যুক্ত করার সুপারিশ করেছে।

এখানে শাস্তি কমানোরও সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এখানে আগে ১৪ বছরের জেল বা এক কোটি টাকা কিংবা উভয়দÐের বিধান ছিল। সংসদীয় কমিটি কারাদÐ ১০ বছরের করার সুপারিশ করেছে।

২৫ ধারায় বলা ছিল, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেট্রনিক বিন্যাসে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করে, যা আক্রমণাত্মক, ভীতি প্রদশর্ক বা কাউকে নীতিভ্রষ্ট করে বা বিরক্ত করে; অপমান অপদস্ত বা হেয় করে; রাষ্ট্রের ভাবমূতির্ বা সুনাম ক্ষুণœ করতে বা বিভ্রান্ত করতে কোনো তথ্য সম্পূণর্ বা আংশিক বিকৃত করে প্রকাশ বা প্রচার করে, তবে তা হবে অপরাধ।

এই ধারার চারটি উপধারাকে ছোট করে দুটি উপধারা করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। তবে মূল বক্তব্য প্রায় অপরিবতির্ত রয়েছে।

২৮ ধারায় ধমীর্য় মূল্যবোধ বা অনুভ‚তিতে আঘাত করার বিধানে শাস্তি কমানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদে উত্থাপিত বিলে ৭ বছরের জেল বা ১০ লাখ টাকা অথর্দÐ বা উভয় দÐের বিধান ছিল। সংসদীয় কমিটি জেল কমিয়ে ৫ বছর করার সুপারিশ করেছে।

মানহানিকর তথ্য প্রচার নিয়ে ২৯ ধারায় পরিবতের্নর কথা সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও সেখানে কোনো পরিবতর্ন আনেনি সংসদীয় কমিটি।

বিলে ৩১ ধারায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে এমন তথ্য প্রচারের বিষয়ে পরিবতর্ন করার দাবি জানায় সম্পাদক পরিষদ। এখানেও সংসদীয় কমিটি কোনো পরিবতর্ন আনেনি।

সংসদে উত্থাপিত বিলের ৩২ ধারা নিয়ে সাংবাদিক মহলের সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল।

ওই ধারায় সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য উপাত্ত, যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকডর্ করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে ১৪ বছর কারাদÐ ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দÐের বিধান রাখা হয়েছে।

এখানে সংসদীয় কমিটি পরিবতর্ন করার সুপারিশ করেছে। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ‘অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-১৯২৩ এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়াকর্, ডিজিটাল নেটওয়াকর্ বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করে বা করতে সহায়তা করেন, তা হলে তিনি সবোর্চ্চ ১৪ বছরের কারাদÐ বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দÐে দÐিত হবেন।

সংসদে উত্থাপিত বিলে এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারে পুলিশকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। সংসদীয় কমিটি এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালকের অনুমোদন সাপেক্ষে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার বিধান রাখার সুপারিশ করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13109 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1