বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজাদপুরে মাসে ৫০ কোটি টাকার জৈবসার অপচয়

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকার জৈব সার জ্বালানি (স্থানীয় ভাষায় ঘসি) হিসেবে ব্যবহার করে অপচয় করা হচ্ছে।

সচেতনতার অভাবে কৃষকরা জমিতে জৈব সারের পরিবতের্ অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করছে। এতে একদিকে রাসায়নিক সার আমদানিতে প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ অথর্ ভতুির্ক দিতে হচ্ছে অন্যদিকে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগে জমির উবর্রতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সরকার ও কৃষক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সচেতন মহলের মতে, গোসম্পদে সমৃদ্ধ জনপদ শাহজাদপুর থেকে দিনে সংগৃহীত প্রায় ৩০/৩৫ লাখ কেজি গোবর যদি জ্বালানি হিসেবে (স্থানীয় ভাষায় ঘষি) ব্যবহার না করে ফসলি জমিতে প্রয়োগ করা হতো তাহলে ফসলের উৎপাদন ব্যয় কম হতো, জমির উবর্রতা বৃদ্ধি পেত এবং সার আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের ভতুির্ক কমে যেত।

উপজেলা পশুসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় গবাদি পশুর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭শ ৮৫টি। এর মধ্যে দেশি জাতের গরু ৮৪ হাজার ৩শ ৭৬টি, সংকর জাতের গরু ১ লাখ ২০ হাজার ১শ ২০টি।

এছাড়া বেসরকারি দুগ্ধ খামার ৩ হাজার ৬শ ৫০টি, রেজিস্ট্রিকৃত খামারের সংখ্যা ২ হাজার ৫শ ৮৮টি। এর মধ্যে দেশি বকনা গরুর সংখ্যা ১৩ হাজার ৬শ ৯২ টি, দেশি এঁড়েবাছুরের সংখ্যা ২৮ হাজার ৩শ ২০টি, বকনা বাছুরের সংখ্যা ১৯ হাজার ৫শ ৩৬টি এবং সংকর জাতের বকনার সংখ্যা ১৪ হাজার ২শটি, সংকর জাতের বকনা বাছুরের সংখ্যা ২৫ হাজার ৪ শ’ ৭৫ টি।

সরকারি শুমারি অনুসারে কাগজে কলমে শাহজাদপুরে গবাদি পশুর সংখ্যা ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭শ’ ৮৫টি হলেও বাস্তবে এর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। স্থানীয় গো-খামারিরা জানান, পরিণত বয়সে একটি উন্নত জাতের গরু থেকে দিনে প্রায় ১০ থেকে ২০ কেজি গোবর পাওয়া যায়। সুতরাং এ উপজেলায় সবের্মাট গরু থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০/৩৫ লাখ কেজি গোবর সংগৃহীত হচ্ছে। একটি পরিণত বয়সের গরু থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ গোবর পাওয়া যায় তা দিয়ে প্রায় অধের্ক বস্তা জ্বালানি (স্থানীয় ভাষায় ঘষি) তৈরি হচ্ছে। প্রত্যেক বস্তা জ্বালানি এ অঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জে ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে শাহজাদপুরে দিনে প্রায় দেড় কোটি টাকার উন্নতমানের জৈবসার নষ্ট করে জ্বালানি তৈরি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ইরি-বোরো ধান চাষের সময় এক বিঘা জমিতে দুই দফায় ৩০-৩৬ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগের নিয়ম থাকলেও কৃষকরা অধিক ফলনের আশায় ৫০ থেকে ৬০ কেজি ইউরিয়া সার ও অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করছে। ফলে জমির উবর্রাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে।

জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে ইউরিয়া সার উৎপাদনে বস্তা প্রতি খরচ পড়ে ১৭৫০ টাকা। আমদানিকৃত ইউরিয়া সারে এ খরচ প্রায় ১৭৫০ থেকে ১৮০০ টাকা। কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমাতে সরকার ভতুির্ক মূল্যে তা বিক্রি করছে বস্তা প্রতি ১ হাজার টাকায়। প্রতি বস্তা ইউরিয়া সারে সরকার প্রায় ৭৫০ টাকা ভতুির্ক দিচ্ছে।

কিন্তু ভতুির্ক মূল্যে পাওয়া সার প্রয়োজনমাফিক জমিতে প্রয়োগ না করায় অপচয় হচ্ছে। অথচ উন্নতমানের জৈবসার (গোবর) জমিতে প্রয়োগ করলে কৃষকের ব্যয় হ্রাস, জমির উবর্রতা বৃদ্ধি, জমি থেকে প্রাপ্ত খাদ্যশস্যের পুষ্টিমান বৃদ্ধি ও সরকারের ভতুির্ক কমে যেত।

স্থানীয় কৃষিবিদগণ কৃষকদের কাছে রাসায়নিক সারের ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরে জমিতে জৈব সার প্রয়োগের পরামশর্ দিলেও সচেতনতার অভাব ও যথাযথ জ্ঞান না থাকায় কৃষকদের মধ্যে এ বিষয়ে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

ফলে শাহজাদপুরে মাসে সংগৃহীত প্রায় ৫০ কোটি টাকার উৎকৃষ্টমানের জৈবসার (গোবর) অপচয় হচ্ছে।

এ পরিস্থিতি পাল্টাতে ব্যাপক ভিত্তিতে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতামূলক ও উৎসাহমূলক প্রচারণা চালানো উচিত বলে মনে করছেন বিজ্ঞমহল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13626 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1