শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার মুক্তি ইস্যুতে আটকে বিএনপির নিবার্চনী সিদ্ধান্ত

যাযাদি রিপোটর্
  ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের তফসিল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছে নিবার্চন কমিশন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলে এ নিয়ে প্রস্তুতি জোরদার হলেও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপির। তফসিল ঘোষণা হলে কী করবে বিএনপি? এ বিষয়ে কথা বললে দলটির নেতারা জানাচ্ছেন, বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন ও প্রাথীর্ মনোনয়ন, এসবই নিভর্র করছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির ওপর।

অবশ্য, খালেদা জিয়া যদি কারাবন্দি থেকেই যান, সেক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হবে না বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। এক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে স্থায়ী কমিটি মিলে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও আভাস দিচ্ছেন তারা। তবে এ নেতাদের বিশ্বাস, ভোটের আগেই সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। কারণ, বিএনপির নিবার্চনে যাওয়ার অন্যতম শতর্ই হচ্ছে খালেদার মুক্তি।

বিএনপির শীষর্ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনই নিবার্চন নিয়ে ভাবছে না। তাদের নিবার্চনে অংশগ্রহণের শতর্ হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চন আয়োজন, নিবার্চনকালীন সময়ে সংসদ ভেঙে দেয়া, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দেয়া। শতর্গুলোর কোনোটাই এখনো পূরণ হয়নি। এগুলো পূরণ হলেই নিবার্চনী প্রস্তুতি গ্রহণ করবে দলটি। আর সেটা করতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলেও মনে করেন তারা।

জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এতদিন ধরে বিএনপি ২০ দলীয় জোটের (অবশ্য সম্প্রতি দুটি দল বেরিয়ে গেছে) নেতৃত্ব দিচ্ছিল। স্বাধীনতার বিরোধিতা ও সহিংসতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জামায়াত তাদের জোটে থাকায় এ নিয়ে বিএনপিকে আন্তজাির্তক পরিসরে চাপে থাকতে হয়েছে। তবে সম্প্রতি বিএনপি আবার যোগ দেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’। এই জোটে আছে আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। এমনকি জোটে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মতো ব্যক্তিত্বদেরও দেখা যাচ্ছে।

বিএনপির একাধিক সূত্রের দাবি, একাদশ সংসদ নিবার্চন সামনে রেখে ‘প্রবীণ, গ্রহণযোগ্য, প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের’ নিয়ে নতুন মেরুকরণ করায় ইতোমধ্যে ক‚টনীতিকদের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছে বিএনপি। সবের্শষ গত ১৮ অক্টোবর ক‚টনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, ‘এবার নিবার্চন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে’।

নিবার্চন ঘিরে ঐক্যফ্রন্টের এই সভা-সমাবেশ হলেও বিএনপির নেতারা বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার প্রথমেই রয়েছে খালেদা জিয়ার মুক্তি। সুতরাং সরকার যদি নিবার্চন গ্রহণযোগ্য করতে চায়, তাহলে অবশ্যই খালেদাকে মুক্তি দিতে হবে।

এদিকে নিবার্চনে বিএনপি ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ভুক্ত হয়ে অংশ নিলে জোটের শরিক দলগুলো কোন প্রতীক নিয়ে নিবার্চন করবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। আসন ভাগাভাগির মতো এই বিষয়টিও দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির ওপরই নিভর্র করছে বলে জানাচ্ছেন দলের নেতারা।

সূত্র বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বিএনপি নেতারা। তারা খালেদা জিয়ার ওপরই সেই বিষয়গুলো ছেড়ে দিতে চাইছেন। বিএনপি প্রধান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই ঐক্যফ্রন্ট নেতারাও মেনে নেবেন বলে আশাবাদ দলটির নেতাদের।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ‘২০ দলীয়’ জোটের শরিকদের ৫০টি আসন ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। তবে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। যদিও বিএনপি নেতারা বরাবরই বলে আসছেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ’২০ দলীয় জোট’র সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যেহেতু একটা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আছি, আমরা সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা আশাবাদী, নিবার্চনের আগে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে সরকার। আমরা তাকে নিয়েই সকল সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সাত দফা ন্যায্য দাবি। এটা জনগণের দাবি। আমরা আশা করি, সরকার আমাদের দাবি মানবে।’ যদি দাবি না মানে সেক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কী সিদ্ধান্ত নেবে জানতে চাইলে নজরুল বলেন, ‘সেটা সময়ই বলে দিবে, কী করতে হবে।’

বিএনপির নিবার্চনী প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আগে নিবার্চনের পরিবেশ তৈরি হোক, তারপরেই না নিবার্চনী প্রস্তুতি। সুষ্ঠু নিবার্চনের পরিবেশই তো নেই। সবার আগে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নেত্রী মুক্তি পেলে ও সাত দফা দাবি পূরণ হলে সময়মতো সবই হয়ে যাবে।’

‘কিন্তু সরকারি দল সবসময় বলে আসছে, সেই দাবি মানা সম্ভব নয়’, এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকষর্ণ করলে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুকে দেখতে গিয়ে (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক) ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, দুনিয়ার এক সেকেন্ডের ভরসা নেই, ঠিক তেমনই দাবি না মানলে সরকারেরও এক সেকেন্ডের ভরসা নেই।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18990 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1